সড়কের ভাঙন রোধে 'বাঁশের পাইলিং'

ঝালকাঠি-শেখেরহাট সড়কের ভাঙন প্রতিরোধে পাইলিং স্থাপনে বাঁশ ব্যবহার করা হচ্ছে। সম্প্রতি ঝালকাঠি সদরের গাবখান এলাকায়।  প্রথম আলো
ঝালকাঠি-শেখেরহাট সড়কের ভাঙন প্রতিরোধে পাইলিং স্থাপনে বাঁশ ব্যবহার করা হচ্ছে। সম্প্রতি ঝালকাঠি সদরের গাবখান এলাকায়। প্রথম আলো

আন্তর্জাতিক নৌপথ গাবখান চ্যানেলের (নদ) তীরের ঝালকাঠি-শেখেরহাট সড়কের ভাঙন রোধে পাইলিংয়ের কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। গাবখান চ্যানেল থেকে ৩০ ফুট উঁচু সড়কে কংক্রিটের পিলারের বদলে পাইলিং করা হচ্ছে ১৫ ফুট উঁচু বাঁশ দিয়ে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, কংক্রিটের পিলারের পরিবর্তে পাইলিংয়ের কাজে বাঁশ ব্যবহার করা হচ্ছে। কিছুদিন পরই বাঁশ পচে নষ্ট হয়ে যাবে। গোড়ার মাটি সরে গিয়ে বালুর ব্যাগসহ নদ ধসে সড়কে ভাঙন দেখা দেবে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা দাবি করেন, এটা স্থায়ী কাজ নয়। সড়কের সাময়িক ভাঙন প্রতিরোধে বাঁশ ও গাছ দিয়ে পাইলিং দেওয়া হচ্ছে।

গাবখান চ্যানেলের ভাঙনে ঝালকাঠি-শেখেরহাট সড়কটি নিশ্চিহ্ন হতে চলছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীন ছয় কিলোমিটারের সড়কটি সংস্কারের জন্য গত অর্থবছরে প্রায় তিন কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু এই বরাদ্দ কোনো কাজে লাগেনি। গাবখান নদের তীরের সড়কটিতে প্রতিদিন ভাঙনের পাশাপাশি গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে। এই নৌপথ দিয়ে ভারী মালবাহী জাহাজ চলাচল করায় পানির স্রোতে সড়কের মাটি ও গাছ ভেঙে পড়ছে। এ বিষয়ে গত ২২ জুলাই প্রথম আলোয় ‘গাবখান চ্যানেলের ভাঙনে বিলীন হচ্ছে সড়ক’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

পাউবোর ঝালকাঠি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি প্রায় ৬ কিলোমিটার এই সড়কের ভাঙন প্রতিরোধে জরুরি ভিত্তিতে ৭টি প্যাকেজে ১২টি অংশের পাইলিংয়ের জন্য ৪৯ লাখ ৭৪ হাজার ৫৯১ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। পাঁচজন ঠিকাদারকে এই কাজ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ৩১ আগস্টের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা।

গত বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, পাইলিং করার কাজে ঠিকাদারের কোনো লোক নেই। পাউবোর কার্য সহকারী রায়হান খান কাজ দেখাশোনা করছেন। তিনি জানান, এই কাজের জন্য কোনো ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ড এই কাজের সার্বিক পরিচালনা করছে।

>

চ্যানেল–সংলগ্ন ঝালকাঠি-শেখেরহাট সড়ক ভেঙে যাচ্ছে। ভাঙন ঠেকাতে বাঁশের পাইলিং বেশি দিন টিকবে না বলে আশঙ্কা রয়েছে।

সড়কের ভেঙে যাওয়া অংশে বাঁশ দিয়ে পাইলিং করার বিষয়ে রায়হান খান বলেন, এটা কোনো স্থায়ী কাজ নয়। সাময়িক কাজ হওয়ায় বাঁশ ও গাছ দিয়ে পাইলিং দেওয়া হচ্ছে।

গাবখান এলাকার বাসিন্দা তপন তালুকদার ও শুক্কুর মিয়া অভিযোগ করেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁশ দিয়ে পাইলিংয়ের নামে দুর্নীতি করছে। বরাদ্দ অর্থ লুটপাটের পাঁয়তারা করছে। বাঁশ দিয়ে নদী ভাঙনের সড়কে পাইলিং দেওয়া কাজ আমরা এই প্রথম দেখলাম।’

স্থানীয় কৃষক বজলুর রহমান বলেন, ‘এই পাইলিং কোনো কাজে লাগবে না। কারণ, কিছুদিন পরই বাঁশ পচে গিয়ে বালুভর্তি ব্যাগের চাপে পাইলিং ও সড়ক খালে ধসে পড়বে। কংক্রিটের পাইলিং দিয়ে ভেতরে বালুর বস্তা ফেলা হলে ভাঙন প্রতিরোধ করা সম্ভব হতো।’

এ বিষয়ে পাউবোর ঝালকাঠি কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী বিভূতি চন্দ্র রায় জানান, গত সপ্তাহে জরুরি ভিত্তিতে এই পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্পের কার্যাদেশ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম-ঠিকানা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাকে কার্যাদেশের কপি দেওয়া হয়নি। এ-সম্পর্কিত কোনো তথ্য আমার কাছে নেই।’

তবে পাউবোর ঝালকাঠি কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম আতাউর রহমান দাবি করেন, পাঁচটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পাইলিংয়ের এই কাজ করা হচ্ছে। অস্থায়ীভাবে জরুরি ভিত্তিতে এই পাইলিংয়ের কাজ করায় এতে বাঁশ ব্যবহার করা হচ্ছে। পাইলিংয়ের ভেতরে জিও ব্যাগ ফেলা হবে, যাতে রাস্তার মাটি ধুয়ে না যায়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম এবং কার্যাদেশের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।