এখন হুইলচেয়ারে চলাচল বাবলুর

ফুলবাড়ী কয়লাখনি আন্দোলনে হতাহত ব্যক্তিদের উদ্দেশে গতকাল শোক র‍্যালি বের করা হয়। এতে হুইলচেয়ারে করে অংশ নেন ওই ঘটনায় আহত বাবলু চন্দ্র। গতকাল গামার মোড়ে।  প্রথম আলো
ফুলবাড়ী কয়লাখনি আন্দোলনে হতাহত ব্যক্তিদের উদ্দেশে গতকাল শোক র‍্যালি বের করা হয়। এতে হুইলচেয়ারে করে অংশ নেন ওই ঘটনায় আহত বাবলু চন্দ্র। গতকাল গামার মোড়ে। প্রথম আলো

বাবলু চন্দ্র রায় ভ্যান চালাতেন। মাঝেমধ্যে কুলির কাজও করতেন। খেটে খাওয়া মানুষটি ২০০৬ সালে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লাখনি করার বিরুদ্ধে আন্দোলনে গিয়ে গুলি খেয়ে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হন। এরপর থেকে হুইলচেয়ারে চলাচল তাঁর।

ওই ঘটনার ১৩ বছর পূর্তি ছিল গতকাল সোমবার। সেদিন বিজিবি ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হন তিন তরুণ। আহত হন দুই শতাধিক মানুষ। তাঁদেরই একজন বাবলু চন্দ্র। এখন আর কেউ খোঁজও নেয় না তাঁর। গত শনিবার তিনি বলেন, ‘এখন আর সুস্থ হবার জন্য নয়, শুধু বেঁচে থাকার জন্য ওষুধ খাই।’

ফুলবাড়ী উপজেলা শহর থেকে এক কিলোমিটার দূরে কামারপাড়ায় বাড়ি বাবলু চন্দ্রের। বয়স ৪৮ বছর। ১৩ বছর আগে ৩৫ বছরের টগবগে যুবক ছিলেন তিনি। 

বাবলু বলেন, বড় দুই ছেলেকে স্কুলের মুখ দেখাতে পারেননি। এই বয়সেই ঢুকে গেছে কাঠমিস্ত্রির কাজে। বাচ্চা ছেলেদের আয়ের টাকায় চলছে তাঁর চিকিৎসা ও সংসার খরচ। তবু সেদিনের আন্দোলনের ফলে ফুলবাড়ীর মানুষ ভয়াবহ বিপর্যয় থেকে মুক্তি পেয়েছে। এশিয়া এনার্জি নামের কোম্পানিটি তাদের কার্যক্রম বন্ধ করতে এবং সরকার সমঝোতা চুক্তি করতে বাধ্য হয়।

২০০৬ সালের ২৬ আগস্টের ঘটনার বর্ণনা দেন বাবলু। বলেন, ‘বেলা দুইটার সময় এশিয়া এনার্জি কোম্পানির অফিস ঘেরাও কর্মসূচি ছিল। শহরের জি এম পাইলট স্কুলের মাঠে মানুষজনের উপস্থিত হওয়ার কথা। দুপুরে বাড়ি থেকে বের হয়ে রাস্তায় উঠতেই দেখি শুধু মানুষ আর মানুষ। ঢাকা মোড়ে তখন আনু মুহাম্মদ স্যার বক্তব্য দিচ্ছিলেন। স্যারের বক্তব্য শেষ হওয়ার পরে মানুষ সবাই নিমতলা মোড়ের দিকে আসতে থাকে। সেখান থেকে গামার গলির কাছে আসতেই পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে থাকে। গামার গলির ওখানে মেইন রোডে লোহার ব্রিজে তখন অবস্থান নিয়েছেন বিজিবি সদস্যরা। তাঁরা হাত উঁচু করে ব্রিজ পার হতে নিষেধ করলে আমরা উল্টো ফিরে আসতে থাকি। ঠিক সেই সময় বিজিবি পেছন থেকে গুলি ছুড়তে থাকে। কয়লা আন্দোলনের নেতা জামান ভাইয়ের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। যখন সবাই ছত্রভঙ্গ, সেই সময় আমার কোমরে গুলি লাগে। আমি পড়ে যাই ব্রিজের ওপর। সবাই দৌড়ে পালাচ্ছেন। আমি শুধু জামান ভাইকে দেখতে পেয়ে বলছিলাম, জামান ভাই, মোক বাঁচাও।’