বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যের লোকজনকে চিহ্নিত করতে কমিশন হবে: আইনমন্ত্রী

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। ফাইল ছবি
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। ফাইল ছবি

আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর এর বিচার যাতে না হয় এমন ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু এর বিচার হয়েছে। তবে আগামী প্রজন্ম জানতে চায়, কেন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল। তাঁর হত্যার বিচারের জন্য কেন ২১ বছর দেশকে অপেক্ষা করতে হয়েছে। কেন নেপথ্যের মানুষদের এখন পর্যন্ত বিচার হয়নি। এ জন্য অবশ্যই একটি কমিশন গঠিত হবে।

আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সম্প্রীতি বাংলাদেশ আয়োজিত শোকের মাস, ষড়যন্ত্রের মাস আগস্ট শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে যারা ছিল, তাদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়ার সুযোগ আমরা পেয়েছি। আমরা সেই সুযোগ ছেড়ে দেব না। আমরা এই কমিশন ইনশা আল্লাহ গঠন করবই।’ মন্ত্রী বলেন, ‘কমিশন গঠন অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। অনেকেই বলছেন যে এই কমিশনকে দিয়ে অন্যান্য যেসব হত্যাকাণ্ড হয়েছে, সেগুলোকেও তদন্ত করাতে হবে। আমি মনে করি, এই কমিশনকে শুধু বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যের লোকজনকে চিহ্নিত করতে কাজ করার সুযোগ দেয়া উচিত।’

আনিসুল হক বলেন, বাংলাদেশকে ধ্বংস করে দিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে। কারণ ঘাতকেরা বুঝেছিল, এই বাংলাদেশকে ধ্বংস করতে হলে শুধু বঙ্গবন্ধু নয়, বঙ্গবন্ধু পরিবারের সবাইকে মেরে ফেলতে হবে। এমনকি ১০ বছরের শিশু শেখ রাসেলকেও। এর কারণ হচ্ছে, এরা বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ বেঁচে থাকবে। বঙ্গবন্ধুর রক্তের ধারা শেখ হাসিনা ক্ষমতা গ্রহণ করে দেশকে বাঁচিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে এটি প্রমাণিত হয়েছে।

আইনমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করা হয়। এই ইমডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারির অর্থই হলো বঙ্গবন্ধু হত্যার কোনো বিচার করা যাবে না। তিনি বলেন, তাদের ষড়যন্ত্র, ২১ বছরের শাসন বাংলাদেশবিরোধী আদর্শ কতটা গভীরে গিয়েছিল, তা বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা করতে গিয়ে আমরা দেখেছি। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার পেতে হাইকোর্টেও বেগ পেতে হয়েছে। হাইকোর্ট বিভাগের ৭ জন বিচারক এই মামলার আপিল শুনতে বিব্রত বোধ করেছেন।

তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তদন্তের সময়ই তাঁর জড়িত থাকার তথ্যটি পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু জিয়াউর রহমান তখন বেঁচে না থাকায় আইনানুযায়ী তাঁকে অভিযোগপত্রে আসামি হিসেবে দেখানো যায়নি। একই কারণে খন্দকার মোশতাককেও বাদ দেওয়া হয়েছে।

আইনমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পেছনে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রও ছিল। জিয়াউর রহমান সরকার গঠনের পর শাহ আজিজুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রী করেছিলেন। তিনি পাকিস্তানের দোসরদের নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করেছিলেন। এতেই প্রমাণিত হয়, জিয়াউর রহমান আর যা–ই হোক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। তিনি বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেননি। এসব কর্মকাণ্ড থেকে আমাদের বুঝে নিতে হবে যে সেদিন বঙ্গবন্ধুসহ তাঁর পরিবারের ১৭ জন সদস্যকে হত্যা করা হয়েছিল বাংলাদেশকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান বলেন, বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুকে হত্যার কলঙ্কমুক্ত হওয়ার দিন গুনছে। তাই যারা এ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে রয়েছে, তাদের চিহ্নিত করতে হবে।

সম্প্রতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক পীযুষ বন্দোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে এ সভায় সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী, সাংসদ শফিকুর রহমান, সাবেক রাষ্ট্রদূত আতিকুর রহমান, সাবেক সচিব নাসির উদ্দিন, মোহাম্মদ আলী শিকদার, সংগঠনের সদস্যসচিব মামুন আল মাহতাব প্রমুখ আলোচনা করেন।