দিনে ফেরি চলাচল ব্যাহত, রাতে বন্ধ

পদ্মা নদীর পানি বাড়লেও পলি জমার কারণে কাঁঠালবাড়ি–শিমুলিয়া নৌপথের লৌহজং টার্নিং পয়েন্টে দেখা দিয়েছে নাব্যতা সংকট। কাঁঠালবাড়ি ঘাট, মাদারীপুর, ২৮ আগস্ট। ছবি: প্রথম আলো
পদ্মা নদীর পানি বাড়লেও পলি জমার কারণে কাঁঠালবাড়ি–শিমুলিয়া নৌপথের লৌহজং টার্নিং পয়েন্টে দেখা দিয়েছে নাব্যতা সংকট। কাঁঠালবাড়ি ঘাট, মাদারীপুর, ২৮ আগস্ট। ছবি: প্রথম আলো

পদ্মায় পানি বাড়লেও মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ও মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া নৌপথের লৌহজং টার্নিং পয়েন্টে নাব্যতা সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পরে সারা রাত ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়। তবে বুধবার সকাল থেকে সীমিত আকারে যানবাহন নিয়ে চলছে কয়েকটি ফেরি।

এ দিকে ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়ায় কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটে আটকা পড়েছে কয়েক শ যানবাহন। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকেরা। তবে নাব্যতা সংকট নিরসনে লৌহজং টার্নিং পয়েন্টে খননযন্ত্র বসিয়ে নদী শাসনের কাজ করছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ড্রেজিং বিভাগ।

কাঁঠালবাড়ি ঘাট সূত্রে জানা যায়, সাত দিন ধরে পদ্মায় পানি বাড়ছে। স্রোতের সঙ্গে পলি ভেসে আসায় কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথের লৌহজং টার্নিং পয়েন্টের প্রবেশমুখ উঁচু হয়েছে। এতে গত সোমবার থেকে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ওই দিন থেকেই নৌপথের সব ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে অধিকাংশ ফেরি সন্ধ্যার পর থেকে বন্ধ রাখা হয়। তবে সীমিত আকারে যানবাহন নিয়ে সচল ছিল তিনটি কে-টাইপের ফেরি। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পরে লৌহজং টার্নিং পয়েন্টের প্রবেশমুখে খননযন্ত্রের পাইপ বসিয়ে খননকাজ শুরু করে বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগ। এ কারণে সন্ধ্যার পর থেকে রো রো, ডাম্বসহ নৌপথের ১৭টি ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়ায় উভয় ঘাটেই আটকা পড়েছে পণ্যবাহী ট্রাকসহ পাঁচ শতাধিক যানবাহন।

সরেজমিনে দেখা যায়, কাঁঠালবাড়ি ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া ফেরিগুলোতে ধারণক্ষমতার অর্ধেক যানবাহন ফেরিতে তোলা হচ্ছে। ডাম্ব ফেরিগুলোর বেশির ভাগই নোঙর করে রাখা। রো রো আর কে-টাইপের পাঁচ থেকে ছয়টি ফেরি সীমিত আকারে যানবাহন নিয়ে চলাচল করছে। কাঁঠালবাড়ি ঘাটের চারটি সংযোগ সড়কেই রয়েছে যানবাহনের চাপ। যাত্রীবাহী বাসের চাপ কম থাকলেও পণ্যবাহী ট্রাক ও ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যাই বেশি।

খুলনা থেকে ছেড়ে আসা পণ্যবাহী ট্রাকের চালক ইলিয়াস আহাম্মেদ বলেন, ‘ঘাটে গত রোববার এসেছি। এখন তিন দিন হতে যাচ্ছে ফেরিতে উঠতে পারছি না। ঘাটের লোকদের কাছে কিছু জানতে চাইলে তারা বলে, ফেরি চলে না। ফেরি চলাচল ঠিক হলে তখন আমাদের ফেরিতে তুলবে। টার্মিনালে এভাবে পড়ে থাকলে আমাদের দুর্ভোগের শেষ নেই।’

বরিশাল থেকে আসা আরেক ট্রাকচালক মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, ‘ফেরিঘাটে ভিড়লেই মাইক্রোবাস, যাত্রীবাহী বাস তোলা হয়। আমাদের একটি ট্রাকও তোলে না। বুঝতে পারছি যে ফেরি কম চলে, তবুও যদি ছেড়ে যাওয়া প্রতিটি ফেরিতে তিনটি করে ট্রাক তোলে, তাহলে সব ট্রাকই পারাপার করা সম্ভব।’

বিআইডব্লিউটিসি কাঁঠালবাড়ি ঘাটের ব্যবস্থাপক মো. সালাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা খুবই বিপদের মধ্যে আছি। ফেরি ঠিকমতো চালাতে পারছি না। প্রতিবছর এই সময় আমাদের খারাপ যায়। পদ্মার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে পলি এসে জমা হয় চ্যানেলে। ফলে ফেরিগুলো ডুবচরে আটকে যায়। আমরা নৌপথের দুর্ঘটনা এড়াতে মঙ্গলবার রাতে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখি। ড্রেজিং কাজ এখনো চলমান, তাই বুধবার রাতেও ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হতে পারে।’

সালাম হোসেন আরও বলেন, বুধবার সকাল থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত তিনটি কে-টাইপের ফেরি দিয়ে সীমিত আকারে যানবাহন পারাপার করেছি। বেলা ১১টার পর থেকে ৫ থেকে ৬টি ডাম্ব ও রো রো ফেরি চলাচল করলেও তা সীমিত আকারে যানবাহন তুলছে।

বিআইডব্লিউটিএ মেরিন কর্মকর্তা আহমদ আলী বলেন, ‘লৌহজং টার্নিং পয়েন্টের চ্যানেলে নাব্যতা সংকট রয়েছে। আমরা সংকট নিরসনে কাজ করছি। আশা করছি দুই-এক দিনের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’

জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক আলী আজগর মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, নাব্যতা সংকটের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। মেরিন বিভাগের কোন কর্মকর্তা লৌহজং টার্নিং পয়েন্টে ড্রেজিং কাজ করছেন, তা-ও তাঁর জানা নেই।