ঢাকা মেডিকেলের চারপাশে ময়লার স্তূপ-মশা

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বকশীবাজার–সংলগ্ন গেটের পাশে ককশিটে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা পানিতে মশার প্রজনন হচ্ছে। গতকাল দুপুরে।  ছবি: তানভীর আহাম্মেদ
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বকশীবাজার–সংলগ্ন গেটের পাশে ককশিটে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা পানিতে মশার প্রজনন হচ্ছে। গতকাল দুপুরে। ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

রাস্তার পাশের নালায় জমে আছে নোংরা পানি ও ডাবের খোসা। সেই পানির ওপর একঝাঁক মশা। ফুটপাত দিয়ে কেউ হেঁটে গেলে মশা ছড়িয়ে যাচ্ছে। খানিক পরে আবার পানিতে এসে বসছে।

গতকাল বুধবার সকাল ১০টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মূল ফটকের উল্টো পাশের নালায় দেখা মেলে এই চিত্রের। সরেজমিনে দেশের সবচেয়ে বড় এই হাসপাতালের চারদিকেই ময়লা–আবর্জনার স্তূপ, মশা, জমে থাকা পানি দেখা গেছে। কোথাও দেখা মিলেছে মশার লার্ভাও।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের হিসাব বলছে, এ পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে ৬ হাজার ৭১ জন। মারা গেছেন ২৩ জন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভেতরে-বাইরে মশা জন্মানো ও বংশবিস্তারের উপযুক্ত পরিবেশ রয়েছে বলে এসেছে সরকারের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার সর্বশেষ জরিপে। জরিপে বলা হয়েছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও এর আশপাশের এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ পর্যায়ে এডিস মশা আছে। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘হাসপাতালের ভেতরের ময়লা ২৫ থেকে ৩০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী পরিষ্কার করেন। তবে বাইরের পরিবেশ ঠিক না থাকলে তো ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।’

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের প্রধান ফটকের ঐতিহাসিক আমতলার গেট ঘেঁষে ডান পাশে চায়ের দোকান, বাঁ পাশে পুরি-শিঙাড়ার দোকান। সামনের ফুটপাতে ফল, পানি, বিছানা ও বালিশের দোকান। রাস্তার উল্টো পাশের ফুটপাতজুড়ে অসংখ্য ভাতের হোটেল ও চায়ের দোকানের দখলে। এসব দোকান থেকে পানি ও বর্জ্য এসে জমছে সড়কের নালায়।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপদেষ্টা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নতুন বার্ন ইউনিট, চানখাঁরপুল থেকে বকশী বাজার পর্যন্ত রাস্তায় একটু বৃষ্টিতেই পানি জমে। সেখানকার নালাগুলো বন্ধ হয়ে গেছে।

>

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চারদিকেই ময়লা-আবর্জনার স্তূপ, মশা, জমে থাকা পানি দেখা গেছে। কোথাও দেখা মিলেছে মশার লার্ভার।

চানখাঁরপুল সড়কে পানি
ঢাকা মেডিকেলের পেছনেই চানখাঁরপুলের সড়ক। দুপুর ১২টার দিকে ওই রাস্তা ধরে একটু হাঁটতেই দেখা গেল, সড়কের পাশে ছোট ছোট গর্ত। এসব গর্তে কাদা। কাদার পানির ওপর মশার ঝাঁক। আরেকটু সামনে এগোলেই মেডিকেল মার্কেট। সেখানে অসংখ্য ওষুধের দোকানের পাশাপাশি ভাতের হোটেল। এসব হোটেল থেকে ময়লা পানি এসে নালায় জমে আছে। উল্টো পাশের ফুটপাতের নালাতেও দেখা গেল, ছোট আকারের ছয়টি গর্তে কাদাপানি। এসবের প্রতিটিতে বসে আছে মশা।

ফটকের সামনে লার্ভা ও মশা
বেলা দুইটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বকশিবাজার–সংলগ্ন ফটকের সামনে গিয়ে দেখা যায়, বাঁ পাশে হাসপাতালের একটি নামফলক। এর নিচে পড়ে আছে পরিত্যক্ত লাগেজ, কর্কশিটের বাক্স ও ময়লা। কর্কশিটের বাক্সের ভেতরের স্বচ্ছ পানিতে মশার লার্ভা কিলবিল করছে। ফটকের উল্টো পাশে সড়কের নালায় অন্তত তিনটি জায়গায় কাদা জমে আছে। এসব কাদার ওপরে বসে আছে মশার ঝাঁক।

শহীদ মিনারজুড়ে প্লাস্টিক কাপ
সরেজমিনে দেখা যায়, শহীদ মিনারের বেদির দক্ষিণ প্রান্তের ঘাসে অসংখ্য প্লাস্টিকের কাপ পড়ে আছে। একটি প্লাস্টিকের কাপে জমে আছে পরিষ্কার পানি। বেদির শেষ প্রান্তে তিন দিকে পানিনিষ্কাশনের নালাগুলো খুব অপরিচ্ছন্ন। তাতে পানির বোতল, অসংখ্য প্লাস্টিক কাপ, ঠোঙা জমে আছে। শহীদ মিনারের ঠিক পেছনেই বড় ভাগাড়। সেখানে ডাবের খোসা, প্লাস্টিক কাপ, আইসক্রিমের কাপ, পানির বোতল ও কাগজের ছড়াছড়ি।