পাহাড়ে ড্রাগনের হাতছানি

রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার ঘিলাছড়িতে ড্রাগন ফলের বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত এক কিষানি। সম্প্রতি তোলা ছবি।  সুপ্রিয় চাকমা
রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার ঘিলাছড়িতে ড্রাগন ফলের বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত এক কিষানি। সম্প্রতি তোলা ছবি। সুপ্রিয় চাকমা

রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার চাম্পাতলী গ্রামে ঢোকার মুখে দুই পাশে চোখে পড়ে ড্রাগন ফলের বাগান। এই বাগানের মালিক টিটুল চাকমা পেশায় শিক্ষক। ৮০ শতক জমিতে দুই শতাধিক পিলারে থোকায় থোকায় ঝুলছে ড্রাগন ফল। 

২০১৪ সালে রাঙামাটি সদর হর্টিকালচার সেন্টার থেকে প্রদর্শনী প্লট হিসেবে ৪০টি পিলার পান টিটুল চাকমা। প্রায় দুই বছর বাদে ফলন দেওয়া শুরু হয়। ২০১৭ সালে আবার ৯৪ পিলারে ড্রাগন চাষ করেন তিনি। এ বছর ৪২টি পিলারে। এর মধ্যে ২০১৭ সালে রোপণ করা ৯৪টি পিলারে ফল দেওয়া শুরু হয়েছে। তবে ফলন কম। এখন পর্যন্ত দেড় লাখ টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি করেছেন টিটুল।

এই এলাকায় ড্রাগন ফলের ফলন বাড়ছে। শুধু কাউখালীর ঘাগড়া ইউনিয়নের টিটুল নন, নানিয়ারচর উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের চৌধুরীপাড়া গ্রামের কৃষক অনন্ত চাকমাও ড্রাগন চাষ শুরু করেছেন। মিশ্র ফলদ বাগানের পাশাপাশি ২০১৭ সালে ৪০টি পিলারে ১৬০টি ড্রাগন চারা রোপণ করেন তিনি। গত বছর থেকে ফলন দেওয়া শুরু হয়। গত বছর কম হলেও এ বছর ফলন বেড়েছে। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৮০ হাজার টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি করেছেন। আরও দুই মাস পর্যন্ত ফলন দেবে বলে জানালেন অনন্ত।

রাঙামাটিতে প্রতি কেজি ড্রাগন ফল পাইকারিতে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাই ড্রাগন ফল নিয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। 

রাঙামাটি হর্টিকালচার সেন্টার ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে পরীক্ষামূলক ড্রাগন চাষ করার নির্দেশনা আসে। সেই বছরে তিনজন কৃষককে প্রদর্শনী প্লট হিসেবে প্রত্যেককে ৪০টি করে পিলার দেওয়া হয়। প্রতিটি পিলারে চারটি করে ড্রাগন চারা রোপণ করা হয়। চলতি বছর পর্যন্ত রাঙামাটি সদর ও নানিয়ারচর উপজেলা হর্টিকালচার সেন্টার ১৫ জন কৃষককে প্রদর্শনী প্লট দিয়েছে। প্লটগুলোতে ফলন ভালো হওয়ায় জেলায় ইতিমধ্যে অর্ধশতাধিক কৃষক ড্রাগন চাষ করছেন। এ ফলের চাষ হচ্ছে খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলায়ও।

এই কর্মকর্তা জানালেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের মাটি ড্রাগন ফল চাষের উপযোগী। সরকারি ও ব্যক্তিগতভাবে ড্রাগন চাষ দিন দিন বাড়ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরও চাষিদের উদ্বুদ্ধ করছে। তবে জেলায় কতটুকু জমিতে ড্রাগন চাষ হচ্ছে, সে তথ্য তাঁর কাছে নেই।

কৃষিবিদেরা জানান, জুন মাসের শুরুতে এ গাছে ফুল আসা শুরু করে। সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ফল দেয়। ড্রাগন ফল ভিটামিন সি, মিনারেল ও উচ্চ ফাইবারযুক্ত। খাবারের পর ডেজার্ট হিসেবে পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে এ ফল খাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে।