মাঠ দখল করে বালু ও পাথরের ব্যবসা

পটুয়াখালীর বাউফলে ধানহাট ও খেলার মাঠ দখল করে খোয়া, বালু ও পাথর স্তূপ করে রাখা হয়েছে। সম্প্রতি তোলা।  ছবি: প্রথম আলো
পটুয়াখালীর বাউফলে ধানহাট ও খেলার মাঠ দখল করে খোয়া, বালু ও পাথর স্তূপ করে রাখা হয়েছে। সম্প্রতি তোলা। ছবি: প্রথম আলো

পটুয়াখালীর বাউফলের কালাইয়ায় ধানহাট ও খেলার মাঠ দখল করে ইট, খোয়া, বালু ও পাথরের ব্যবসা চলছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মনিরা এন্টারপ্রাইজ সেখানে অবৈধভাবে ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

মনিরা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারীর নাম এ কে এম ফরিদ মোল্লা। তিনি স্থানীয় সাংসদ আ স ম ফিরোজের ছোট ভাই। অভিযোগ রয়েছে, চার-পাঁচ বছর আগে ধানহাটের উত্তর পাশের কিছু অংশ ও কালাইয়া নদীর পাশে জেগে ওঠা চরের খাসজমির কিছু অংশ দখল করে ফরিদ মোল্লা ইট, বালু ও পাথরের ব্যবসা শুরু করেন। ধীরে ধীরে আরও জমি দখল করা হচ্ছে।

গত বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, কালাইয়া নদীর পাশে ধানহাট কাম খেলার মাঠ। এর উত্তর ও পূর্ব পাশে প্রায় ৫০ শতাংশ জমিতে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে রাখা হয়েছে খোয়া, বালু ও পাথরের বিশাল বিশাল স্তূপ। মাঠের মধ্যেও রয়েছে বালু ও পাথরের বড় দুটি স্তূপ। পূর্ব পাশে নদীর মধ্যে টিনের বেড়া দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সপ্তাহের প্রতি সোমবার ওই ধানহাট মাঠে বেচাকেনা শুরু হয়। বুধবার পর্যন্ত টানা তিন দিন ধান ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য ব্যবহৃত হয় মাঠটি। বাকি চার দিন খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার করে স্থানীয় শিশু, কিশোর ও তরুণেরা। দীর্ঘদিন ধরে এভাবে মাঠের ব্যবহার হয়ে আসছে। বর্তমানে ওই মাঠে ইট, বালু ও পাথর রাখার কারণে তারা খেলাধুলা করতে পারছে না। বেদখল হওয়ায় ধানহাট ছোট হয়ে আসছে। দখল হয়ে যাওয়া ওই সম্পত্তির দাম প্রায় দেড় কোটি টাকা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, সাংসদের ভাই হওয়ার কারণে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পান না। প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা দেখেও না দেখার ভান করেন।

ওই মাঠে খেলাধুলা করা এক তরুণ বলেন, ‘বৃষ্টির সময় এই ধানহাট মাঠে ফুটবল খেলতাম। আর গ্রীষ্ম ও শীতের সময় ক্রিকেট ও ব্যাডমিন্টন খেলতাম। কিন্তু মাঠের মধ্যে ও মাঠের পাশে খোয়া, বালু ও পাথর রাখায় এখন আর খেলতে পারছি না। এখন খেলতে গেলে খোয়া ও পাথরের কারণে নিয়মিত দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়।’

আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ‘এটি ঐতিহ্যবাহী হাট। কালাইয়া ধানহাটের পাশে ইট, বালু, খোয়া ও পাথরের ব্যবসা বন্ধ না করলে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ক্রেতা ও বিক্রেতার সংখ্যা কমে যাবে। ইতিমধ্যে দখলের কারণে মাঠের আয়তন ছোট হয়ে এসেছে।’ 

ধানহাট ও খেলার মাঠ দখল করে ইট ও পাথরের ব্যবসা করার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এ কে এম ফরিদ মোল্লা বলেন, ‘আমি সরকারি সম্পত্তি দখল করিনি। বড় ডালিমার অংশের রেকর্ডীয় সম্পত্তি ভেঙে নদীর মধ্যে চলে গেছে। ওই জমি কালাইয়া অংশে ধানহাটের পাশে চর হিসেবে জেগেছে। সেখান থেকে ৪২ শতাংশ জমি কিনেছি। ওই জমিতেই ইট, বালু ও পাথরের ব্যবসা করছি।’

তবে উপজেলা ভূমি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারি আইনানুযায়ী নদীতে চর জেগে উঠলে ওই জমি ব্যক্তিমালিকানাধীন হতে পারে না। তা সরকারের সম্পত্তি হয়ে যায়।

এ সম্পর্কে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পিজুস চন্দ্র দে বলেন, এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।