মাল্টা চাষে সফল শাহ আলম

চৌদ্দবুড়িয়া গ্রামে নিজ বাগানে শাহ আলম। গত বৃহস্পতিবারের ছবি।  প্রথম আলো
চৌদ্দবুড়িয়া গ্রামে নিজ বাগানে শাহ আলম। গত বৃহস্পতিবারের ছবি। প্রথম আলো

শাহ আলম হাওলাদার ঢাকায় এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। বেতনও পেতেন ভালো। তাই যখন চাকরি ছেড়ে দিয়ে গ্রামে এসে মাল্টার বাগান করার পরিকল্পনা করেন, তখন বিষয়টি পরিবারের কেউই ভালোভাবে নেয়নি।

তবে শাহ আলমও দমে যাওয়ার পাত্র নন। ২০১৬ সালে বাবার দেওয়া ১০ শতক জমিতে ৫০টি গাছ দিয়ে মাল্টার বাগান করেন। মাত্র তিন বছরেই তিনি আজ সফল মাল্টাচাষি। বছরে তাঁর বাগান থেকে প্রায় চার লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি হয়। এই বাগানে হওয়া অন্যান্য ফল ও চারা বিক্রি করে তিনি আরও দুই লাখ টাকা পান।
ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার সিদ্ধকাঠি ইউনিয়নের চৌদ্দবুড়িয়া গ্রামের মৃত শফির উদ্দিনের ছেলে শাহ আলম হাওলাদার (৪২)। টেলিভিশনে পিরোজপুর জেলার মাল্টা চাষের ওপর একটি প্রতিবেদন দেখে তিনি এই ফল চাষে আগ্রহী হন। ২০১৬ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে তিনি গ্রামের বাড়িতে এসে মাল্টার বাগান শুরু করেন। বর্তমানে সাত বিঘা জমিতে তাঁর বাগান রয়েছে। সেখানে আছে সাত শতাধিক মাল্টাগাছসহ নানা ফলের গাছ।

শাহ আলম বলেন, বাগানে মাল্টার পাশাপাশি ৮০ জাতের দেশি-বিদেশি আমগাছ লাগিয়েছেন। আরও আছে সৌদি আরবের খেজুর, কমলা ও লিচু। তবে মাল্টা চাষের ওপর তিনি বিশেষ নজর দিয়েছেন। তাঁর বাগানে বারি মাল্টা-১ (পয়সা মাল্টা), থাইল্যান্ডের বেড়িকাটা মাল্টা ও ভারতীয় প্রলিত মাল্টা জাতের গাছ আছে। চারা রোপণের দুই বছরের মধ্যে ফলন শুরু হয়। কিন্তু তিন বছর পর একটি গাছে পূর্ণাঙ্গভাবে ফল ধরা শুরু করে। তিন বছর পরে গাছপ্রতি মৌসুমে ৪০০ থেকে ৪৫০টি মাল্টা ধরে। বর্তমানে তাঁর বাগান পরিচর্যার জন্য পাঁচজন লোক কাজ করেন। তাঁর দেখাদেখি এলাকার অনেক বেকার যুবক মাল্টাবাগান করে বেকারত্ব দূর করছেন।
শাহ আলমের স্ত্রী রোকসানা পারভীন এখন ঘর সামলানোর পাশাপাশি স্বামীর মাল্টাবাগানেও কাজ করেন। তাঁদের একমাত্র মেয়ের নামে শাহ আলম তাঁর বাগানের নাম রেখেছেন ‘শারিনা মাল্টা গার্ডেন ও নার্সারি’।

ফলের পাশাপাশি শাহ আলম তাঁর বাগানে নানা জাতের ফলের চারা রোপণ করে বড় হওয়ার পর তা বিক্রি করেন। তিনি নিজের বাগানে মাতৃগাছ থেকে বাকল দিয়ে ‘গ্রাফটিং’ করে চারা উৎপাদন করেন। তিনি বলেন, এ বছর প্রায় চার লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করেছেন। বর্তমানে তাঁর মাল্টা নিজ এলাকা ছাড়িয়ে পাশের বাকেরগঞ্জ ও বরিশাল শহরের ফলের বাজারে পৌঁছে গেছে। দূরদূরান্তের ফল ব্যবসায়ীরা তাঁর বাগানের মাল্টা কিনে নিয়ে বিক্রি করেন। বাগান থেকে ব্যবসায়ীরা পাইকারি ১২০ টাকা দরে কেনেন ।

গত বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, শাহ আলম তাঁর মাল্টাবাগানে পাইকারদের কাছে মাল্টা বিক্রি করতে ব্যস্ত। বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকারেরা তাঁর বাগানের মাল্টা ওজন করে মেপে নিয়ে যাচ্ছেন।

নলছিটি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইসরাত জাহান বলেন, নলছিটি কৃষি বিভাগ শাহ আলমের বাগান থেকে চারা কিনে বিনা মূল্যে কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করে। শাহ আলমের বাগানে উৎপাদিত মাল্টা আকারে বড় ও মিষ্টি। তিনি কৃষি কার্যালয়ের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগযোগ রাখেন।