মেয়র সাঈদ খোকনের দাবি ১০ মিনিটও টেকেনি

ডিএসসিসি মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। ফাইল ছবি
ডিএসসিসি মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। ফাইল ছবি

প্রতিবছর বাজেট বক্তৃতার পর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। ব্যতিক্রম হয়নি এবারও। মেয়র হিসেবে পাঁচ বছরের মেয়াদে গতকাল রোববার শেষ বাজেট বক্তৃতা দিয়েছেন তিনি। তাঁর লিখিত বক্তৃতার একটি লাইন ছিল এ রকম—নগরীর প্রায় ৯০ শতাংশ সড়ক এখন চলাচলের উপযোগী।

প্রশ্নোত্তর পর্বের শুরুর দিকে সড়ক নিয়ে প্রশ্ন করেন এক সাংবাদিক। মেয়রের কাছে প্রশ্ন ছিল, ‘আপনি বক্তব্যে দাবি করেছেন, আপনার এলাকার ৯০ শতাংশ সড়ক চলাচলের উপযোগী। কিন্তু বাস্তবতা ঠিক উল্টো।’ এ সময় প্রশ্নকর্তাকে থামিয়ে দিয়ে মেয়র বলেন, প্রমাণ করতে পারলে পুরস্কার দেওয়া হবে। তখন সাংবাদিক বলেন, ‘আমার পুরস্কার লাগবে না। আমি যে এলাকায় থাকি প্রায় পুরো এলাকাতেই সড়কের বেহাল দশা। বিশেষ করে বয়োজ্যেষ্ঠ ও গর্ভবতী নারীদের রিকশা নিয়ে চলাচল করতে কষ্ট হয়।’

মেয়র এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বক্তব্য দিলে ওই সাংবাদিক বলেন, ‘আপনি আমার পুরো প্রশ্নটাই শুনছেন না। আপনি প্রধান সড়কের কথা বলছেন। কিন্তু ওয়ার্ড পর্যায়ে সড়কের যে অবস্থা...।’ সাংবাদিকের প্রশ্ন শেষ না হতেই মেয়র বললেন, দ্রুত ওই এলাকার সড়কের কাজ করে দেওয়া হবে। এ সময় ওই সাংবাদিক কোথায় থাকেন তা জানতে চান মেয়র। জবাব এল, কলাবাগানে। সাংবাদিক এ সময় বলেন, স্থানীয় কাউন্সিলর তাঁকে বলছেন, পাঁচ বছর ধরে ওয়ার্ডে কোনো উন্নয়নকাজ হয় না। বরাদ্দ চাইলেও মেয়র দেন না।

এই বক্তব্য শুনে মেয়র বলেন, এমনটা হতে পারে না। তখন তিনি কাউন্সিলর আছেন (মিলনায়তনে) কি না জানতে চান। পেছনের সারিতে বসে থাকা কাউন্সিলর সালাউদ্দিন আহমেদ দাঁড়িয়ে বলেন, ‘আমার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে সমস্ত রাস্তাই খারাপ।’

কাউন্সিলরের কাছ থেকে এমন জবাব পাওয়ার পর মেয়র ওই এলাকার সড়ক সংস্কারের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে বিষয়টি (কেন সড়ক খারাপ) জানতে চান। এ সময় নির্বাহী প্রকৌশলী শফিউল্লাহ সিদ্দিক ভূঁইয়া দাঁড়িয়ে বলেন, কাউন্সিলর যে সড়কের কথা বলছেন ওই সড়কের কাজের জন্য দরপত্র ডাকার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এমন উত্তর শোনার পর মেয়র বলেন, ‘এত দিন করেন নাই কেন। আপনাকে এখনই বরখাস্ত করা হলো।’ এরপর মেয়র বলেন, প্রকল্প পরিচালক কে আছেন দাঁড়ান। তখন ডিএসসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘স্যার, আমরা ওই এলাকায় যখন কাজ শুরু করেছিলাম, তখন সড়কের অবস্থা খারাপ ছিল না।’ তখন মেয়র জানতে চান কবে কাজ শুরু করেছিলেন? তখন আসাদুজ্জামান বলেন, ‘২০১৫, ১৬ ও ১৭ সালে উদ্যোগ নিয়েছি। ২০১৮ সালে কার্যক্রম গ্রহণ করেছি।’ এরপর মেয়র বলেন, ‘আগে এই এলাকায় পরিকল্পনা নেননি কেন।’ পরে মেয়র ওই কাউন্সিলরের কাছে জানতে চান, রাস্তা কত দিন ধরে ভাঙা? তখন কাউন্সিলর বলেন, তিন বছর ধরে ভাঙা। এ কথা শোনার পর মেয়র ওই এলাকার দায়িত্বে থাকা নির্বাহী প্রকৌশলীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার নির্দেশন দেন এবং বলেন, সন্তোষজনক জবাব না পেলে ওনাকে বরখাস্ত করা হবে।

প্রশ্ন করার পর ১০ মিনিটের আলোচনায় মেয়র বুঝলেন, রাস্তার আসলে কী অবস্থা। ওই সাংবাদিককে পুরস্কার দেবেন কি না, সে বিষয়ে আর কিছু বলেননি তিনি।

এর আগে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়েও মেয়র সাঈদ খোকনের কাছে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে, কিছুদিন আগে মেয়র এমন বক্তব্য দিয়েছিলেন। এ বিষয়ে এক সাংবাদিক জানতে চাইলে তিনি বলেন, নাগরিকদের সচেতনতা, সহযোগিতা, কাউন্সিলরদের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং গণমাধ্যমের যুক্তি দিয়ে সমালোচনা—সব বিষয় ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করেছে। চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে পরিস্থিতির আরও উন্নতি ঘটবে বলে মেয়র দাবি করেন।

মেয়রের উদ্দেশে আরেক সাংবাদিক বলেন, কাউন্সিলরদের আবেদনের কারণে দুই বছর আগে পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও মশকনিধনকর্মীদের নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব তাঁদের দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নগরবাসীর অভিযোগ, এই দায়িত্ব কাউন্সিলররা ঠিকমতো পালন করেন না। এই প্রশ্নের জবাব মেয়র দেওয়ার আগেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন কাউন্সিলররা। তাঁরা চিৎকার, হইচই করতে থাকেন। উপস্থিত কাউন্সিলরদের কয়েকজন ওই সাংবাদিকের দিকে তেড়ে আসার চেষ্টা করেন। কাউন্সিলরদের চিৎকার-চেঁচামেচিতে মিলনায়তনে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। প্রায় পাঁচ মিনিট ধরে এ অবস্থা চলতে থাকে। এ সময় মেয়র বারবার কাউন্সিলরদের শান্ত হওয়ার অনুরোধ করলেও তাঁরা হইচই বন্ধ করেননি। পরে চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে তিনি উচ্চ স্বরে বলতে থাকেন, ‘সাংবাদিকেরা আমাদের আমন্ত্রিত অতিথি। তাঁদের সঙ্গে আপনাদের এমন আচরণ দুঃখজনক। আপনারা দয়া করে শান্ত হোন।’ এরপর সবাই শান্ত হলে তড়িঘড়ি করে সংবাদ সম্মেলন শেষ করা হয়।