গান গেয়ে ধান রোপণ

খেতবাড়ানি উৎসব। শ্রীমঙ্গল উপজেলার খোশবাস গ্রামে।  ছবি: প্রথম আলো
খেতবাড়ানি উৎসব। শ্রীমঙ্গল উপজেলার খোশবাস গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো

‘কানাই পার করিয়া দে রে

মথুরার ঘাটে যাই,

তুমি তো সুন্দর ও কানাই

তোমার ভাঙ্গা নায়, কানাই পার করিয়া দে...’

বহুদিন পর উৎসব, বহুদিন পর গান।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে কৃষকেরা মিলিত হয়ে একটি জমিতে রোপণ করলেন ধানের চারা। বিনা পারিশ্রমিকে ধান লাগানোর জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে কৃষকেরা ছুটে আসেন এখানে। গান গেয়ে জমিতে ধান লাগান তাঁরা। কৃষকদের এই সম্মিলিত কাজকে ‘খেতবাড়ানি উৎসব’ বলা হয়।

গত রোববার উপজেলার আশীদ্রোন ইউনিয়নের খোশবাস গ্রামে এই উৎসবে বিভিন্ন জায়গা থেকে আসেন কৃষকেরা। তাঁরা মনের
সুখে গান গেয়ে ধানের চারা রোপণ করেন। ছিল প্রচণ্ড গরম, কিন্তু তাতে উৎসবে ভাটা পড়েনি। কৃষকদের পাশাপাশি স্থানীয় ইউপি সদস্য ও অন্য পেশার লোকজনও নেমে পড়েছেন ধানের চারা রোপণ করতে।

আশীদ্রোন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আবদুল আহাদ বলেন, ‘একসময় বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকেরা মিলিত হয়ে ভাটিয়ালি গানের সুরে জমিতে আমন ধানের চারা রোপণ করতেন। কৃষকেরা নিজের খেতে ধানের চারা লাগানোর পর যে জায়গা খালি পড়ে থাকত, সেই জায়গায়
সবাই মিলে ধান চাষ করতেন। এই ঐতিহ্য বর্তমানে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তা ধরে রাখার জন্য গ্রামের মো. শাকির আহমেদের ১৫ শতাংশ জমিতে সবাই মিলে ধান চাষের উদ্যোগ নিই। প্রায় ৩০ জন কৃষক একে অন্যের গানের সঙ্গে সুর মিলিয়ে ধানের চারা রোপণ করেন।’

গ্রামের কৃষক অদুত মিয়া বলেন, ‘প্রায় ১৫ বছর ধরে এই ঐতিহ্যবাহী খেতবাড়ানি উৎসব বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি, আমাদের বাপ-দাদারা এই উৎসব করেছেন। উৎসবে অনেক আনন্দ হতো। গানবাজনা হতো। গ্রামের মানুষ এই দিনে পিঠাপুলি তৈরি করে নিয়ে আসতেন। উৎসবের আগে গ্রামে গ্রামে ঘোষণা হতো কবে উৎসবটি হবে। দূরদূরান্ত থেকে মানুষজন আসতেন এই উৎসবে।’

শ্রীমঙ্গল নাগরদোলা থিয়েটারের সভাপতি অনিরুদ্ধ সেনগুপ্ত বলেন, গ্রামবাংলায় প্রচলিত অনেক ঐতিহ্যবাহী উৎসবই এখন বিলুপ্তের পথে। এসব ঐতিহ্য ধরে না রাখলে হারিয়ে যাবে। এসব ঐতিহ্যের মাধ্যমে গ্রামবাংলার মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন তৈরি হয়।