সভাপতি-সম্পাদকের প্রকাশ্যে দ্বন্দ্ব

রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দ্বন্দ্ব এখন চরম আকার ধারণ করেছে। সভাপতি হচ্ছেন রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের সাংসদ ও সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী ওমর ফারুক চৌধুরী। সাধারণ সম্পাদক হচ্ছেন আসাদুজ্জামান।

গতকাল সোমবার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীদের নিয়ে রাজশাহী নগরের একটি রেস্তোরাঁয় মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেছিলেন। তিনি বলেছেন, এটা কোনো রাজনৈতিক অনুষ্ঠান নয়। এটা তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীদের দাওয়াতি অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে সাধারণ সম্পাদককে ডাকা হয়নি। কিছুদিন আগে একটি অনুষ্ঠানে সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরীকে ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলেছিলেন। অবশ্য ওই অনুষ্ঠানে সভাপতি উপস্থিত ছিলেন না।

গতকালের অনুষ্ঠানে সভাপতি বলেছেন, তিনি একজন শহীদের সন্তান। তাঁকে রাজাকারের বাচ্চা বলা হয়েছে। তিনি এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চাইবেন। অনুষ্ঠানে ৭১ সদস্যের রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদের ১৬ জন নেতা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া থানা আওয়ামী লীগ, যুবলীগসহ সংগঠনের অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় বেশির ভাগ নেতাই রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ দেখতে চাইলেও কেউ কেউ সাধারণ সম্পাদকের মন্তব্যের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন। নেতারা বলেন, সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ্যে সভাপতিকে রাজাকারের বাচ্চা বলেছেন। সাধারণ সম্পাদক নিজে জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করেছেন। পুঠিয়ায় দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। নেতারা প্রশ্ন তোলেন, নিজ দলের সাংসদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করার অপরাধে জেলার বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকিরুল ইসলামকে পদ হারাতে হয়েছে, তাহলে সাধারণ সম্পাদকের কী শাস্তি হওয়া দরকার?

তবে দলের বেশির ভাগ নেতা বলেছেন, রাজশাহীর আওয়ামী লীগকে তাঁরা ঐক্যবদ্ধ দেখতে চান। এ ক্ষেত্রে সভাপতির নিষ্ক্রিয়তা নিয়েও কথা বলেন নেতারা। মোহনপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজ উদ্দিন কবিরাজ বলেন, ‘দলের সাধারণ সম্পাদক আপনার বাবাকে রাজাকার বলেছে, আপনাকে রাজাকারের বাচ্চা বলেছে, প্রকাশ্যে এ রকম কথা বলা খারাপ। আমি এর নিন্দা জানাই। তবে লক্ষ্মীপুর (জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়) ভালো নয়, তাই আপনি কর্মসূচিতে যান না। সভাপতি হিসেবে আপনি অন্য কোথাও কর্মসূচি পালনের আয়োজন করতে পারতেন। কিন্তু তা করেননি। এটা দলের জন্য ভালো হয়নি।’

জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা প্রশান্ত কুমার বলেন, ‘নেতায় নেতায় বিভেদের কারণে দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই এখনই আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। মৃত্যুর আগে আমি ঐক্যবদ্ধ জেলা আওয়ামী লীগ দেখতে চাই। না হলে যা চলছে, তাতে দল ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’

সভায় নেতারা মহাজোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী সদর আসনের সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশার বক্তব্যের সমালোচনা করেন। ফজলে হোসেন সম্প্রতি একটি পত্রিকায় সাক্ষাৎকারে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক চৌধুরীর উদ্দেশে বলেছেন, তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ফ্রিডম পার্টি করতেন। তখন ফজলে হোসেন তাঁকে তাড়া করেছিলেন বলে ওই সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করা হয়। এ প্রসঙ্গে ফারুক চৌধুরী প্রশ্ন তোলেন, তিনি ১৯৮২ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়েছেন। আর ফ্রিডম পার্টি গঠিত হয়েছে ১৯৮৬ সালে। তাহলে কীভাবে ফজলে হোসেন তাঁকে তাড়া করলেন?

নেতা-কর্মীরা দাবি জানান, ফজলে হোসেন বাদশার বিষয়টি কেন্দ্রে জানাতে হবে। রাজশাহীতে ১৪ দলের সমন্বয়কারী হচ্ছেন এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, আর কেন্দ্রে মোহাম্মদ নাসিম। তাঁদের বিষয়টি জানাতে হবে।

শুভাকাঙ্ক্ষীদের অনুষ্ঠানে দাওয়াত পেয়েছিলেন কি না জানতে চাইলে সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, এটা ফারুক চৌধুরীর ব্যক্তিগত আয়োজন। তাঁর হিসাবে, জেলা আওয়ামী লীগের ১৪ জন নেতা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি (আসাদুজ্জামান) ডাকলে ৭১ সদস্যের কমিটির অন্তত ৩০ জন উপস্থিত থাকেন। চৌধুরীর ডাকে যাঁরা গেছেন, তিনি ডাকলেই তাঁদের পাঁচজন চলে আসবেন। অনুষ্ঠান করে তিনি এর প্রমাণ করে দেবেন। তাঁরা সব রেকর্ড নিয়ে আসবেন।

ফারুক চৌধুরীকে প্রকাশ্যে রাজাকারের বাচ্চা বলার কারণে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চাওয়া হবে—এ কথা শুনে আসাদুজ্জামান বলেন, তিনিও চান এ বিচার প্রধানমন্ত্রীর কাছেই যাক। তিনি সেখানে গিয়েই প্রমাণ করবেন যে ফারুক চৌধুরী রাজাকারের বাচ্চা। তার মা ‘জামায়াতের নেত্রী’। তিনি বলেন, শহীদ দুই রকমের আছে। পাকিস্তানি শহীদ ও বাংলাদেশি শহীদ। আসাদুজ্জামান দাবি করেন, গত ২২ মাস ফারুক চৌধুরী জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জাতীয় কোনো কর্মসূচিতে আসেননি। তিনি বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা করেননি। তবে তাঁর ভোটও করেননি। কিন্তু এমপি-মন্ত্রীরা লেগেও প্রার্থী জেতাতে পারলেন না কেন, এটাই তাঁর প্রশ্ন।