উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে জাবির প্রশাসনিক ভবন অবরোধ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগের বিচার বিভাগীয় তদন্তসহ তিন দফা দাবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রশাসনিক ভবন অবরোধ। পুরোনো প্রশাসনিক ভবন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ৩ সেপ্টেম্বর। ছবি: প্রথম আলো
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগের বিচার বিভাগীয় তদন্তসহ তিন দফা দাবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রশাসনিক ভবন অবরোধ। পুরোনো প্রশাসনিক ভবন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ৩ সেপ্টেম্বর। ছবি: প্রথম আলো

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগের বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও মহাপরিকল্পনা পুনর্বিন্যাসসহ তিন দফা দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে সাতটায় আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ও পুরোনো প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে অবরোধ শুরু করেন।

কর্মসূচি চলাকালে ভবন দুটির কোনো ফটকই খুলতে দেননি আন্দোলনকারীরা। ফলে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কার্যালয়ে প্রবেশ করতে না পেরে বাইরে অপেক্ষা করছেন। এতে প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।

গত বছরের ২৩ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়নের জন্য ১ হাজার ৪৪৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। গত ৩০ মে এই প্রকল্পের প্রথম ধাপে পাঁচটি হলের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন উপাচার্য ফারজানা ইসলাম। এসব হল নির্মাণের জন্য নির্ধারিত স্থানে প্রায় ১২শ গাছ ছিল। এই গাছ কাটার প্রতিবাদ ও প্রকল্পের মহাপরিকল্পনা ‘অপরিকল্পিত’ দাবি করে আন্দোলন শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একাংশ।

এ আন্দোলনের মধ্যেই উপাচার্যের বাসভবনে বৈঠক করে প্রকল্পের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য ছাত্রলীগকে দুই কোটি টাকা ভাগাভাগি করে দেওয়ার অভিযোগ নিয়ে গত ২৩ আগস্ট একটি জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরের দিন থেকে টাকা লেনদেনের অভিযোগের বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও মহাপরিকল্পনা পুনর্বিন্যাসসহ তিন দফা দাবিতে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে আন্দোলনে নামেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এরই অংশ হিসেবে চলছে আজকের এ অবরোধ কর্মসূচি।

অবরোধ চলাকালে দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, ‘ছাত্রদের জন্য তিনটি আবাসিক হল নির্মাণের জন্য এমন স্থান নির্বাচন করতে হবে যেখানে গাছ কম কাটা পড়বে। আর অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা ছাত্রলীগের মধ্যে ভাগাভাগির যে অভিযোগ এসেছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তা মিথ্যা দাবি করছে। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে কোনো উচ্চতর কমিটির মাধ্যমে এই অভিযোগের তদন্ত হতে হবে। সেটা বিচার বিভাগীয় তদন্ত কিংবা ইউজিসির তদন্ত হতে পারে। তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হলে বিচার নিশ্চিত করতে হবে।’

ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এসব দাবি আদায়ের জন্য সময় দিয়েছিলাম। কিন্তু কোনো পদক্ষেপই নেওয়া হয়নি। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্বশীলদের সুমতি কামনা করি। তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক।’

এদিকে অবরোধের মধ্যেই দুপুর সাড়ে ১২টায় পুরোনো প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন আন্দোলনকারীরা। মিছিলটি মুরাদ চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে দুর্নীতির প্রতিবাদে পথনাটক পরিবেশন করা হয়।