স্কুলে ইট সরাতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু

বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আহত মারিয়াকে প্রথমে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। ছবি: প্রথম আলো
বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আহত মারিয়াকে প্রথমে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। ছবি: প্রথম আলো

প্রতিদিনের মতো সহপাঠীদের সঙ্গে স্কুলে আসে মারিয়া আক্তার (১২)। ক্লাস শুরুর আগে খেলার ছলে দুই সহপাঠীর সঙ্গে বিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন ভবনের দোতলায় ওঠে। সেখানে গিয়ে একটি ইট সরাতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যায় সে।

মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় আজ মঙ্গলবার সকালে এ ঘটনা ঘটে। মারা যাওয়া স্কুলছাত্রী মারিয়া উপজেলার সালেহ আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। সে শিবচর ইউনিয়নের পূর্বশ্যামাইল গ্রামের ইব্রাহীম ব্যাপারীর মেয়ে।

পুলিশ ও বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সকাল নয়টার দিকে সহপাঠীদের সঙ্গে স্কুলে আসে মারিয়া। ক্লাস শুরু না হওয়ায় দুই সহপাঠীকে নিয়ে নির্মাণাধীন ভবনের দোতলায় ওঠে সে। দোতলায় গিয়ে একটি ইট ঝোলানো অবস্থায় দেখতে পায় সে। ইটটি সরাতে গেলে পল্লী বিদ্যুতের এক তারে হাত লেগে যায়। এতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দোতলা থেকে ছিটকে নিচে পড়ে যায় সে। পরে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সহপাঠীরা গুরুতর আহত অবস্থায় মারিয়াকে প্রথমে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। অবস্থার অবনতি হলে দুপুর ১২টার দিকে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক মারিয়াকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতালে যাওয়ার পথে অ্যাম্বুলেন্সে তার মৃত্যু হয়।

শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. মোকাদ্দেস বলেন, ‘বিদ্যুৎস্পৃষ্টে গুরুতর আহত অবস্থায় এক স্কুলছাত্রীকে আমাদের কাছে আনা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ফরিদপুরে পাঠানো হয়। শুনেছি, হাসপাতালে নেওয়ার পথেই তার মৃত্যু হয়েছে।’

মারিয়ার মৃত্যুর জন্য বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেছে তার পরিবার। মারিয়ার বড় ভাই রাসেল ব্যাপারী বলেন, ‘বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সচেতন হলে এমন দুর্ঘটনা ঘটত না। বাচ্চারা তো ছুটোছুটি করবেই। কিন্তু বিদ্যালয়ের যেখানে–সেখানে বৈদ্যুতিক তার ঝুলবে কেন?’

এ ঘটনার জন্য পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগকে দায়ী করেছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নান্নু কাজী মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘পল্লী বিদ্যুতের তার বিদ্যালয় ভবনের পাশ ঘেঁষে নেওয়া হয়েছে। খুঁটিসহ তারের লাইনটি সরিয়ে ফেলার জন্য একাধিকবার আবেদনও করা হয়। কিন্তু এত দিনেও তারটি না সরানোয় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শিবচর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মো. আকমল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভবন সম্প্রসারণ করায় বৈদ্যুতিক তারটি কাছাকাছি চলে এসেছে। খুঁটি ও তার অপসারণের জন্য বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি আবেদন আমাদের কাছে করে। আমরা বিষয়টি সরেজমিনে দেখেছি। তার সরাতে হলে দুটি খুঁটি সরাতে হবে। এতে ৫৬ হাজার টাকা খরচ হবে। এই টাকা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে জমা দিলে এত দিনে খুঁটিসহ তার অপসারণ হয়ে যেত। কিন্তু বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তা করেনি।’

শিবচর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ঘটনায় নিহত মারিয়ার পরিবার বা স্কুল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’