ফেলে যাওয়া নবজাতকটি এখন হাসপাতালের সবার প্রিয়

নবজাতক ।  প্রতীকী ছবি
নবজাতক । প্রতীকী ছবি

কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল। আনোয়ারা বেগম নামের এক নারী অসুস্থ আত্মীয়কে নিয়ে এই হাসপাতাল এসেছেন। ২৫ আগস্ট বিকেল চারটার দিকে দ্বিতীয় তলা থেকে নিচে নামছিলেন তিনি। হঠাৎ সিঁড়িতে শিশুর কান্নার আওয়াজ পান। পায়ে-পায়ে একটু এগিয়ে গিয়ে দেখেন, এক টুকরা সাদা কাপড়ে মোড়া এক ফুটফুটে ছেলে নবজাতক। চারপাশে কাউকে দেখতে না পেয়ে নবজাতকটিকে কোলে তুলে নেন আনোয়ারা। এরপর তাকে নিয়ে যান হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের কক্ষে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১৫ দিন বয়সী নবজাতকটিকে দ্বিতীয় তলার সিঁড়িতে কে বা কারা ফেলে রেখে যান। আনোয়ারা বেগম যখন নবজাতকটিকে নার্স ও চিকিৎসকদের কাছে তুলে দিচ্ছিলেন, তখন সবাই তাকে নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন ছিলেন। তবে সব উদ্বেগ দূর হয়ে এখন নবজাতকটি সবার মন দখল করে নিয়েছে। নয় দিন ধরে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সসহ সবাই পরম মমতায় নবজাতকটিকে আপন করে নিয়েছেন।


হাসপাতালের নবজাতক ওয়ার্ডের নার্সদের ডিউটি রুমে মঙ্গলবার বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, কর্তব্যরত নার্স হাবিবা আক্তার ও স্বপ্না রানী নবজাতকটির প্রয়োজনীয় সেবা-শুশ্রূষা করছেন। নবজাতকটি যখন কাঁদছিল, তখন তাকে কোলে তুলে নিচ্ছিলেন হাসপাতালের উপপরিচালক সুলতানা রাজিয়া। কান্না ভুলে তখন নবজাতকটির চোখে মুখে ছড়িয়ে পড়ছিল আনন্দের ঝিলিক।

কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের উপপরিচালক রাজিয়া বলেন, ‘ও যেন হাসপাতালজুড়ে শরতের স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে দিয়েছে। এ জন্য নাম রেখেছি “স্নিগ্ধ”। জন্মের পরেই মায়ের কোল হারালেও, হাসপাতালে সবার চোখের মণি সে। চিকিৎসক, নার্স আর আয়া সবাই তাঁকে নিয়ে ব্যস্ত।’

হাসপাতালের কর্তব্যরত নার্স হাবিবা আক্তার ও স্বপ্না রানী বলেন, নবজাতকটিকে জন্য তাঁদের এখন অন্য রকম এক মায়া তৈরি হয়ে গেছে। সব সময় চোখে চোখে রাখার জন্য তাকে নবজাতক ওয়ার্ডে না রেখে ডিউটি রুমে এনে রেখেছেন।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ইতিমধ্যে অনেকে নবজাতকটিকে দত্তক নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তবে তাদের সমাজসেবা কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক কামরুজ্জামান খান বলেন, এ ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চিঠি পেয়েছেন। শিশুটির ব্যাপারে তাঁরা আদালতের নির্দেশনা চেয়ে মঙ্গলবার কিশোরগঞ্জের ১ নম্বর আমলি বিচারিক হাকিম আদালতে আবেদন করেছেন। আদালত যে সিদ্ধান্ত দেবেন, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন।