চাকসু নির্বাচনে আগ্রহ নেই প্রশাসনের

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

নিয়মিত উপাচার্য না থাকায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনের আয়োজনের প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। উপাচার্যের রুটিন দায়িত্বে থাকা সহ–উপাচার্য শিরীণ আখতারেরও নির্বাচনের বিষয়ে তেমন কোনো আগ্রহ নেই। এই পরিস্থিতিতে ক্ষুব্ধ ছাত্রসংগঠনগুলো।

চাকসুর নীতিমালা পর্যালোচনার জন্য গত ২১ মার্চ একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু পাঁচ মাস পার হলেও কমিটির কার্যক্রমের কোনো অগ্রগতি নেই। এমনকি এই সময়ের মধ্যে একটি ছাত্রসংগঠনের সঙ্গেও আলোচনায় বসতে পারেনি এই কমিটি। আর প্রতিবেদন দেওয়ারও সম্ভাবনা নেই। ইতিমধ্যে কমিটিকে ব্যর্থ উল্লেখ করে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছে ছাত্রসংগঠনগুলো।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১১ মার্চ। ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে চাকসু নির্বাচনের দাবি তোলে ছাত্রসংগঠনগুলো। এ জন্য ক্যাম্পাসে মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়।

ছাত্রসংগঠনগুলোর দাবির মুখে ২০ মার্চ নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ওই দিন প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভায় চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। পরদিন চাকসুর নীতিমালা পর্যালোচনা করতে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেন তৎকালীন উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী।

চার বছরের মেয়াদ শেষে গত ১৪ জুন উপাচার্যের দায়িত্ব শেষ করেন ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী। এরপর নিয়মিত কোনো উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তবে রুটিন দায়িত্ব পালনের জন্য সহ–উপাচার্য শিরীণ আখতারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

গতকাল বৃহস্পতিবার যোগাযোগ করা হলে চাকসু নির্বাচন নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য শিরীণ আখতার। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা বলছেন, চাকসু নির্বাচন হওয়া উচিত।

১৯৬৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর প্রথম চাকসু নির্বাচন হয় ১৯৭০ সালে। প্রতি শিক্ষাবর্ষে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত মাত্র ছয়বার নির্বাচন হয়েছে। ১৯৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সর্বশেষ চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনের দাবিতে ছাত্রলীগসহ অন্যান্য ছাত্রসংগঠন দীর্ঘদিন ধরে কর্মসূচি পালন করে আসছে।

চাকসু নির্বাচন হওয়া উচিত উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ জাকির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, নেতৃত্ব সৃষ্টির অন্যতম একটি প্রক্রিয়া হচ্ছে ছাত্র সংসদ নির্বাচন। ছাত্র সংসদ নির্বাচন হওয়া জরুরি। তাই যেকোনো পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রের স্বার্থেই চাকসু নির্বাচন হওয়া দরকার।

থমকে আছে কমিটির কার্যক্রম

পর্যালোচনা কমিটি গঠন করা হলেও গত পাঁচ মাসে দৃশ্যমান কার্যক্রম চোখে পড়েনি। শুরুর দিকে নিজেরা কয়েকবার বৈঠকে বসেছিলেন। কিন্তু উপাচার্যের বিদায়ের পর আর কোনো বৈঠকে বসেননি তাঁরা।

এই প্রসঙ্গে পর্যালোচনা কমিটির সদস্য ও আইন অনুষদের ডিন এ বি এম আবু নোমান প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন নিয়মিত উপাচার্য নেই। দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য চাকসু নীতিমালা পর্যালোচনার বিষয়ে তাঁদের কোনো নির্দেশনা বা পরামর্শ দেননি। তাই এ নিয়ে তাঁরা কোনো আলোচনায় বসতে পারেননি। তিনি বলেন, ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে বৈঠক করার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তাদের সঙ্গেও বসা হয়নি। তাই এর মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার সম্ভাবনা নেই।

তবে এই কমিটির ওপর ক্ষুব্ধ ছাত্রসংগঠনগুলো। ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পর্যালোচনা কমিটি পুরোপুরি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এখন নতুন করে শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষকদের দিয়ে কমিটি গঠন করতে হবে।

ব্যর্থতার জন্য এই পর্যালোচনা কমিটি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি ধীষণ প্রদীপ চাকমা। তিনি বলেন, এমন শিক্ষকদের নিয়ে পর্যালোচনা কমিটি গঠন করা উচিত, যাঁরা সক্রিয়। বর্তমান কমিটির আন্তরিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।

নির্বাচন চায় ছাত্রসংগঠনগুলো

ছাত্রসংগঠনগুলো একবাক্যে চাকসু নির্বাচন চায়। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি চাকসু নির্বাচনের দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্র ইউনিয়ন। একই দাবিতে ১৫ দিনব্যাপী স্বাক্ষর সংগ্রহ করে ছাত্রসংগঠনটি। এর আগে ১২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের দাবিতে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করে ছাত্রলীগ। তারা চার দিনব্যাপী গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে। বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে ছাত্রফ্রন্ট ও ইসলামী ছাত্রসেনা।

চাকসু নির্বাচনকে প্রধান দাবি উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক বলেন, নিয়মিত উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর চাকসু নির্বাচন নিয়ে সব আলোচনা থেমে গেছে। নিয়মিত উপাচার্য এলে তাঁর কাছে এই দাবি আবার তোলা হবে। তিনি যদি দাবি না মানেন, নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করবে ছাত্রলীগ।