হঠাৎ পদ্মায় ভাঙন, বিলীন হচ্ছে গ্রাম

পদ্মা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে চর মধুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয় ভবনের টিনের চাল ভাসছে পদ্মায়। স্কুলটিসহ ভাঙনে বিলীন হয়েছে ২৫টি বসতবাড়ি। গত সোমবার পাবনা সদর উপজেলার ভাঁড়ারা ইউনিয়নের চর মধুপুর গ্রামে।  ছবি: প্রথম আলো
পদ্মা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে চর মধুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয় ভবনের টিনের চাল ভাসছে পদ্মায়। স্কুলটিসহ ভাঙনে বিলীন হয়েছে ২৫টি বসতবাড়ি। গত সোমবার পাবনা সদর উপজেলার ভাঁড়ারা ইউনিয়নের চর মধুপুর গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো

গত বৃহস্পতিবার থেকে সদরের ভাঁড়ারা ইউনিয়নে চর মধুপুর গ্রামে নদীতে হঠাৎ ভাঙন শুরু হয়। ভাঙন অব্যাহত থাকায় গ্রামটি বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। 

গভীর রাত। সবাই ঘুমিয়ে। হঠাৎ গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া পদ্মা নদীতে গর্জন শুরু হয়। ভাঙতে থাকে নদীর পাড়। সকাল না হতেই প্রায় তিন শ মিটার এলাকা ভেঙে যায়। এরপর থেকে টানা চার দিনের ভাঙনে বিলীন হয়ে যায় গ্রামের একমাত্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও প্রায় ২৫টি বসতবাড়ি।

গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে পাবনা সদর উপজেলার ভাঁড়ারা ইউনিয়নে চর মধুপুর গ্রামে নদীতে হঠাৎ এ ভাঙন শুরু হয়। ভাঙন অব্যাহত থাকায় গ্রামটি বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন গ্রামের বাসিন্দারা। তাঁরা ভাঙনরোধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

চর মধুপুর গ্রামের আট-দশজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্ষার পানিতে গ্রামের পাশ দিয়ে যাওয়া পদ্মা ছিল টইটম্বুর। কিছুদিন হলো এই পানির হ্রাস–বৃদ্ধি ঘটছিল। হঠাৎ বৃষ্টি ও মৃদু বাতাসের সঙ্গে নদীতে ঢেউ শুরু হয়। বৃহস্পতিবার রাতে নদীর স্রোতও বাড়ে। এরপর নদীর পাড় ভাঙতে শুরু করে। ওই দিন সকাল থেকে ভাঙন তীব্র হতে থাকে। গ্রামবাসী কিছু বুঝে ওঠার আগেই নদীপাড়ের চর মধুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ প্রায় ২৫টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

গত সোমবার বিকেলে সরেজমিন দেখা গেছে, নদী বেশ শান্ত। ঢেউ নেই, তবে রয়েছে তীব্র স্রোত। আর স্রোতের সঙ্গে ভাঙছে পাড়, জমি ও বসতবাড়ি। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিহ্নটুকু নেই। বিদ্যালয়টির রঙিন টিনের চালা ভাসছে নদীতে।

স্থানীয় লোকজন জানান, তাঁদের ছোট্ট গ্রামটিতে প্রায় দুই হাজার মানুষের বাস। অধিকাংশ মানুষ কৃষিজীবী। তাঁদের প্রচুর গরু–ছাগল রয়েছে। বাড়িঘর হারিয়ে ভাঙনের শিকার ব্যক্তিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। গরু-ছাগল নিয়ে বসবাসের জন্য একটু ঠাঁই খুঁজতে তাঁরা এদিক-ওদিক ছুটে বেড়াচ্ছেন তাঁরা। অনেকের খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে। একমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নদীতে বিলীন হওয়ায় শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার ব্যাঘাত ঘটছে।

বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি রফিকুল ইসলাম জানান, তাঁদের প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নদী থেকে প্রায় তিন শ গজ দূরে ছিল। বিদ্যালয়ে একটি সেমিপাকা টিনের ঘর, শহীদ মিনার, শৌচাগার সবই ছিল। ভোর থেকে শুরু হয়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পুরো স্কুল নদীতে বিলীন হয়েছে। জরুরি কাগজপত্র ও আসবাব ছাড়া অন্য কিছু রক্ষা করা যায়নি।

প্রধান শিক্ষক আবদুল করিম বলেন, এখন কবে কোথায় কীভাবে স্কুলের কার্যক্রম শুরু করা হবে, তা নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। আপাতত তাঁরা শিক্ষার্থীদের একত্র করে গ্রামের গাছতলায় ক্লাস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

গ্রামের বাসিন্দা তালেব মণ্ডল বলেন, ‘যাগের বাড়ি ভাঙছে, তারা নিশ হয়া গেছে। ভাঙা না ঠেকালি পুরে গ্রামের মানুষ নিশ হয়া যাবিনি। তাই সরকারের কাছে আমরা ভাঙন ঠেকানোর দাবি জানাই।’ আমেনা খাতুন নামের এক নারী বলেন, ‘এ রহমভাবে ভাঙতি থাকলি গেরামডা শ্যাষ হয়া যাবিনি। আমারে গাছতলা ছাড়া কুনু আশ্রয় থাকপিনানে।’

এ প্রসঙ্গে পাবনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বলেন, হঠাৎ ভাঙনের কারণে দ্রুত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। তবে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করে তাদের শুকনা খাবার দেওয়া হচ্ছে। অন্য কোনো সুবিধা দেওয়া যায় কি না, সেটা ভাবা হচ্ছে। অন্যদিকে স্কুলটি চালু করার জন্য উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তাকে অস্থায়ী অবকাঠামো তৈরি করতে বলা হয়েছে। শিগগিরই স্কুলটি চালু হয়ে যাবে বলে আশা করছেন তিনি।