রোহিঙ্গাদের হাতে হাতে মুঠোফোন

রোহিঙ্গাদের ব্যবহৃত মুঠোফোনে চার্জ দেওয়া হচ্ছে। গতকাল দুপুরে টেকনাফের লেদা রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরে এক দোকানে।  ছবি: প্রথম আলো
রোহিঙ্গাদের ব্যবহৃত মুঠোফোনে চার্জ দেওয়া হচ্ছে। গতকাল দুপুরে টেকনাফের লেদা রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরে এক দোকানে। ছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজারে রোহিঙ্গারা নির্বিঘ্নে মুঠোফোন ব্যবহার করছেন। দোকানে গিয়ে সহজেই কিনতে পারছেন সিম। তবে রোহিঙ্গাদের অনেকে দাবি করেছেন, তাঁরা ব্যবহার করলেও এসব সিম কার নামে নিবন্ধিত, তা তাঁরা জানেন না।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, একটি চক্র অন্যদের নামে সিম নিবন্ধন করে রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিক্রি করছে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এমন কোনো পরিবার নেই, যাদের হাতে মুঠোফোন নেই। কম হলেও সাড়ে ৫ লাখ রোহিঙ্গার হাতে মুঠোফোন থাকার তথ্য রয়েছে পুলিশের কাছে।

গত সোমবার বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মুঠোফোন সেবা বন্ধের নির্দেশ দেয়।

মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটবের মহাসচিব এস এম ফরহাদ গত সোমবার বলেন, মোবাইল অপারেটররা সব সময়ই বিটিআরসির নির্দেশনা মেনে চলে। তিনি বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভান্ডারে সংরক্ষিত তথ্যের সঙ্গে আঙুলের ছাপ যাচাই করার পরই সিম সক্রিয় করা যায়।

এদিকে রোহিঙ্গা শিবির এলাকায় দিনে ১৩ ঘণ্টা দ্রুতগতির থ্রি–জি, ফোর–জি সেবা বন্ধ রাখার জন্য মোবাইল অপারেটরদের নির্দেশনা দিয়েছে বিটিআরসি।

মুঠোফোনে মগ্ন এক রোহিঙ্গা যুবক। গতকাল টেকনাফের লেদা শিবিরে।  প্রথম আলো
মুঠোফোনে মগ্ন এক রোহিঙ্গা যুবক। গতকাল টেকনাফের লেদা শিবিরে। প্রথম আলো

রোহিঙ্গা শিবিরে সরেজমিন
গতকাল সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত টেকনাফের লেদা, নয়াপাড়া, শালবাগান, জাদিমোরা, পুটিবুনিয়া এবং উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালি, হাকিমপাড়া শিবির ঘুরে দেখেন এই প্রতিবেদক। এ সময় পুরুষদের প্রায় সবার কাছে এবং নারীদের অনেকের হাতে মুঠোফোন দেখা যায়। যুবক ও কিশোরদের হাতেও দামি মুঠোফোন দেখা গেছে। তাঁরা ইউটিউব, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো, ভাইবার ব্যবহার করছেন।

শতাধিক রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁরা স্থানীয় দোকান থেকে সিমকার্ড কিনেছেন। তবে এসব সিম কার নামে নিবন্ধিত, সে বিষয়ে তাঁদের ধারণা নেই। টেকনাফ-উখিয়ায় সিম বিক্রির ছোট-বড় দোকান রয়েছে ৩০০টির মতো।

কথা হয় রোহিঙ্গা মর্জিনা বেগম, আলী হোসেন, খলিলুর রহমান, আবদুস শুক্কুরসহ অনেকের সঙ্গে। তাঁদের ভাষ্য, শিবিরে মাইকিং করে সিম বিক্রি করা হয়েছে। মাইকিং করা গাড়ি থেকে ১২০ থেকে ২০০ টাকায় করে সিম কিনেছেন। এ জন্য তাঁদের কিছুই করতে হয়নি। টাকা দেওয়ার পর সিম নিয়ে মুঠোফোনে কথা বলা শুরু করেছেন। এখন এ ফোন দিয়ে আত্মীয়স্বজনের পাশাপাশি বিদেশে থাকা ছেলেমেয়েদের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হয়েছে।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বিক্রেতার দাবি, তাঁরা জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) নম্বর ছাড়া সিম বিক্রি করছেন না। যাঁরা সিম কিনছেন, তাঁরা রোহিঙ্গা না স্থানীয়, তা যাচাইয়ের সুযোগ নেই। বিক্রেতাদের দাবি, রোহিঙ্গারা তাঁদের পরিচিত স্থানীয় ব্যক্তিদের সহায়তা নিয়ে এসব সিম কিনছেন। কেউ কেউ পুরোনো রোহিঙ্গাদের সহায়তা নিচ্ছেন।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল হাসান ও উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিকারুজ্জামান চৌধুরী প্রথম আলোর কাছে বলেন, রোহিঙ্গাদের মুঠোফোন ব্যবহারের বিষয়টি তাঁরা অবগত। কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া কীভাবে তাঁরা সিম কিনছেন, সে বিষয়ে তাঁদের ধারণা নেই। বিষয়টি এখনই খতিয়ে দেখা দরকার বলে তাঁদের ভাষ্য।

রোহিঙ্গাদের অবাধে মুঠোফোন ব্যবহারে হতাশা প্রকাশ করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) টেকনাফের সাধারণ সম্পাদক এ বি এম আবুল হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এতে রাষ্ট্রীয় নানান তথ্য পাচার হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট শিবির এলাকার নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেওয়া প্রয়োজন।