এডিস মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে বছরব্যাপী পরিকল্পনা

এই বছর ডেঙ্গুর বড় প্রাদুর্ভাব হয়েছে। এরই মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ৭০ হাজার ছাড়িয়েছে। এই সংখ্যা গত ১৯ বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত মোট রোগীর চেয়েও বেশি। ঢাকার বাইরেও আক্রান্তের সংখ্যা রেকর্ড ছাড়িয়েছে। এ বছর ঢাকাসহ ৬৪ জেলাতেই মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডেঙ্গু ও ডেঙ্গুর মতো এডিস মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে বছরব্যাপী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এ বছরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে বলে অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে।

২০০০ সালে দেশে প্রথম ব্যাপকভাবে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। তখন থেকেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী ও মৃত্যুর তথ্য রাখছে। কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে ৭৮৩ জন। তাদের মধ্যে ঢাকায় ৩৪৪ জন এবং ঢাকার বাইরে ৪৩৯ জন রোগী। এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত মোট রোগী ৭২ হাজার ৭৪৫ জন। চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল ছেড়েছে ৬৮ হাজার ৮১১ জন।

এত দিন দেশে এডিস মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে বছরব্যাপী দৃশ্যমান কার্যক্রম ছিল না। রোগটির প্রাদুর্ভাব ঢাকা শহরকেন্দ্রিক হওয়ায় বাইরের জেলাগুলোতেও তেমন কোনো কার্যক্রম দেখা যায়নি। 

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, প্রযুক্তির ব্যবহার, ডেঙ্গু পর্যবেক্ষণের পরিধি বাড়ানো, ডেঙ্গুতে মৃত্যু পর্যালোচনা, চিকিৎসকদের অভিজ্ঞতা বৃদ্ধিসহ বেশ কয়েকভাবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বছরব্যাপী কার্যক্রম ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় ইতিবাচক প্রভাব আসবে। 

জানা গেছে, মশা বন্ধ্যাকরণসহ প্রযুক্তির ব্যবহারে মশা নিয়ন্ত্রণে পাইলট প্রকল্প শুরু করা হবে। আবার ডেঙ্গুতে মৃত্যু পর্যালোচনা করে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো হবে, যাতে মৃত্যু কমার পাশাপাশি রোগী ব্যবস্থাপনা সহজ হয়। এর অংশ হিসেবে সারা দেশের চিকিৎসকদের নতুনভাবে প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। আগে যাঁরা এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, তাঁদেরও এ কর্মসূচির মধ্যে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ডেঙ্গু প্রতিরোধে জাতীয় পর্যায়ে কর্মশালায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বাইরে পরিবেশ অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশনের কর্মী, গণমাধ্যমসহ অনেককে যুক্ত করা হবে। এতে বছরজুড়ে কীভাবে কাজ করা যায়, সে বিষয়টি প্রাধান্য দেওয়া হবে।

>২০০০ সালে দেশে প্রথম ডেঙ্গুর ব্যাপক প্রকোপ
চলতি বছর ডেঙ্গুর বড় প্রাদুর্ভাব হয়েছে
আক্রান্তের সংখ্যা ৭০ হাজার ছাড়িয়েছে
এত দিন রোগ নিয়ন্ত্রণে বছরব্যাপী দৃশ্যমান কার্যক্রম ছিল না
এখন বছরব্যাপী বেশ কয়েকভাবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা এখন বছরে তিনবার ঢাকা শহরে মশার অবস্থা জানতে জরিপ চালায়। এটা কীভাবে সারা দেশে করা যায়, সে বিষয়ে পরিকল্পনা নেওয়া হবে বলে জানা গেছে। আবার ডেঙ্গু–চিকুনগুনিয়া পর্যবেক্ষণ এলাকার পরিধিও বাড়ানো হবে। এবার ডেঙ্গু রোগের ধরনে পরিবর্তন এসেছে। ধরন শনাক্তে বড় ধরনের গবেষণা করা হবে। 

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সাব্রিনা প্রথম আলোকে বলেন, আগে ঢাকা, খুলনা ও চট্টগ্রাম এলাকায় নিয়মিতভাবে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হতো। এবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর কারণে বরিশালও এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে। এখন ময়মনসিংহ ও কুষ্টিয়া এলাকাও এর আওতায় আসবে। 

এরই মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মশা নিয়ন্ত্রণে বাজেটে বরাদ্দ দ্বিগুণ করেছে। উত্তর সিটি করপোরেশনও (ডিএনসিসি) শিগগিরই বাজেট দেবে। সারা বছর কীভাবে কাজ করা যায়, সে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ডিএনসিসি ২০১৯-২০ অর্থবছরে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে গত বছরের তুলনায় প্রায় আড়াই গুণ বেশি বরাদ্দ প্রস্তাব করেছে।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যক্তি উদ্যোগকে গুরুত্ব দিয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যক্তি উদ্যোগকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা হবে, যাতে বছরব্যাপী নাগরিকেরা কাজ করতে পারে।

ডেঙ্গুতে আরও দুজনের মৃত্যু

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১৯৭ জনের মৃত্যুর তথ্য জেনেছে প্রথম আলো। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ৯৬টি মৃত্যু পর্যালোচনা শেষে ৫৭টি মৃত্যু নিশ্চিত করেছে।

গতকাল সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বিপ্লব দাশ (২৫)। তাঁর বাড়ি চট্টগ্রামের চন্দনাইশের দোহাজারী এলাকা। ডেঙ্গুতে বিপ্লবের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন মেডিসিন বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ঈমন দাশ।

খুলনার গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক আনন্দ মোহন সাহা প্রথম আলোকে জানান, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে রহিমা খাতুন (৬০) গত সোমবার বিকেলে ভর্তি হন। ঘণ্টা তিনেক পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তাঁর বাড়ি সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার সোনাবাড়িয়া গ্রামে।