জাবিতে তিন দফা দাবিতে অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন দফা দাবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয় দিনের অবরোধ কর্মসূচি পালন করছেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। পুরোনো প্রশাসনিক ভবন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ৪ সেপ্টেম্বর। ছবি: মাইদুল ইসলাম
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন দফা দাবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয় দিনের অবরোধ কর্মসূচি পালন করছেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। পুরোনো প্রশাসনিক ভবন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ৪ সেপ্টেম্বর। ছবি: মাইদুল ইসলাম

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগের বিচার বিভাগীয় তদন্ত, মহাপরিকল্পনা পুনর্বিন্যাসসহ তিন দফা দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

আজ বুধবার সকাল সাড়ে সাতটায় ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ও পুরোনো প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে অবরোধ শুরু হয়। গতকাল মঙ্গলবারের মতোই প্রশাসনিক সব কার্যক্রম আজও বন্ধ আছে।

অবরোধ চলার সময় সকাল সোয়া নয়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক আমির হোসেন ও সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) নূরুল আলম বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরোনো প্রশাসনিক ভবনের সামনে যান। তাঁরা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু আন্দোলনকারীদের সঙ্গে মতের মিল না হওয়ায় ফিরে যান তাঁরা।

পরে সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ শেখ মো. মনজুরুল হক, ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসানসহ প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা সেখানে গিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। এ আলোচনাও ব্যর্থ হলে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা ফিরে যান।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আশিকুর রহমান বলেন, ‘প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা দেখা করতে এলেও অফিশিয়ালি আলোচনায় বসার প্রস্তাব দেননি। আমরা জানিয়ে দিয়েছি, তিন দফা দাবির ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া পেলে আলোচনায় বসব।’

তিন দফা দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন অবরোধ কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। পুরোনো প্রশাসনিক ভবন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ৪ সেপ্টেম্বর। ছবি: মাইদুল ইসলাম
তিন দফা দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন অবরোধ কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। পুরোনো প্রশাসনিক ভবন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ৪ সেপ্টেম্বর। ছবি: মাইদুল ইসলাম

আন্দোলনরত শিক্ষক পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন বলেন, ‘এর আগেও নানা সময় আলোচনায় বসা হয়েছে। তাঁরা যদি আলোচনার আগেই সিদ্ধান্ত ঠিক করে ফেলেন, তবে সে আলোচনার কোনোও দাম নেই। এ রকম আলোচনায় আমাদের আস্থা নেই। আলোচনায় বসতে হলে আন্তরিকতা থাকতে হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আলোচনায় বসতে চান। আন্দোলনরতদের আলোচনায় বসার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আন্দোলনকারীরা শর্ত সাপেক্ষে আলোচনায় বসতে চান। আগেই শর্ত দিলে তো আলোচনায় বসার দরকার নেই।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৩ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়নের জন্য ১ হাজার ৪৪৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।

গত ৩০ মে এই প্রকল্পের প্রথম ধাপে পাঁচটি হলের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন উপাচার্য ফারজানা ইসলাম। এসব হল নির্মাণের জন্য নির্ধারিত স্থানে প্রায় ১ হাজার ২০০ গাছ ছিল। এই গাছ কাটার প্রতিবাদ ও প্রকল্পের মহাপরিকল্পনা ‘অপরিকল্পিত’ দাবি করে আন্দোলন শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একাংশ।

এর মধ্যেই উপাচার্যের বাসভবনে বৈঠক করে প্রকল্পের কাজ সুষ্ঠুভাবে করার জন্য ছাত্রলীগকে দুই কোটি টাকা ভাগাভাগি করে দেওয়ার অভিযোগে গত ২৩ আগস্ট একটি জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরের দিন থেকে টাকা লেনদেনের অভিযোগের বিচার বিভাগীয় তদন্ত, মহাপরিকল্পনা পুনর্বিন্যাসসহ তিন দফা দাবিতে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে আন্দোলনে নামেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এরই অংশ হিসেবে গতকাল থেকে এ আন্দোলন চলছে।

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সমন্বয়ক আবু সাঈদ বলেন, ‘আমরা আমাদের সুস্পষ্ট দাবির ব্যাপারে বলেছি। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিবাচক কোনো সাড়া পাচ্ছি না।’