'রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় বেড়া দেওয়া প্রয়োজন'

জাতীয় সংসদ ভবন। ফাইল ছবি
জাতীয় সংসদ ভবন। ফাইল ছবি

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া বা সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করা প্রয়োজন বলে মনে করে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ। আজ বুধবার জাতীয় সংসদে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়-বিষয়ক সংসদীয় কমিটির বৈঠকে তারা এ কথা জানিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই এলাকার নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিতে বলেছে সংসদীয় কমিটি।

বৈঠক সূত্র জানায়, মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের যেসব ক্যাম্পে রাখা হয়েছে সেসব এলাকার নিরাপত্তা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। বৈঠকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় সেনাবাহিনীর কার্যক্রম নিয়ে একটি প্রতিবেদন দেওয়া হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, সেনাবাহিনী সাতটি ক্যাম্পের মাধ্যমে ওই এলাকায় অসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা দিয়ে আসছে। জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিক ক্যাম্প এলাকায় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করার লক্ষ্যে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রতিদিন ২১টি যৌথ টহলের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আসছে।

ওই প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়, বর্তমানে সার্বিক নিরাপত্তাব্যবস্থা স্থিতিশীল থাকলেও পাহাড়ি এলাকায় কাঁটাতারের বেড়ার অনুপস্থিতির কারণে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ছেড়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এর আলোকে ক্যাম্প এলাকায় উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে কাঁটাতারের বেড়া বা ওয়ার ফেন্সি বা সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করা জরুরি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় ৭৮৭ জন সেনাসদস্য মোতায়েন আছেন। এখন পর্যন্ত সেনাবাহিনী কর্তৃক ২ লাখ ৯ হাজার ৭৯৪ জনকে চিকিৎসা সহায়তা, ৪ লাখ ৩৯ হাজার ১৫৪ টন ত্রাণ ও ৩৫ লাখ ৪০ হাজার ৪৭৮ লিটার বিশুদ্ধ খাবার পানি বিতরণ করা হয়েছে।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির এর আগের বৈঠকেও রোহিঙ্গা ক্যাম্প নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। ওই বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, বৈঠকে কমিটির সদস্য মোতাহার হোসেন বলেন, বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় দেখা যায় রোহিঙ্গারা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। এরা ক্যাম্পের বাইরে গিয়ে বিভিন্ন অপরাধী চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। রোহিঙ্গারা যাতে ক্যাম্পের বাইরে যেতে না পারে, সেই ব্যবস্থা নিতে হবে।

ওই বৈঠকে সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লে. জেনারেল মো. মাহফুজুর রহমান বলেছিলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় ১২ থেকে ১৭ বছরের শিশু রয়েছে প্রায় ৪ লাখ। এরা কোনো শিক্ষা গ্রহণ না করার কারণে ভয়াবহ পরিণতির দিকে এগোচ্ছে। তারা সুযোগ পেলে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ার চেষ্টা করবে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন তাদের কাজে লাগানোর চেষ্টা করবে। রোহিঙ্গা শুধু বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জন্য হুমকিস্বরূপ।

সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে —বৈঠকে জানানো হয়, বর্তমানে শান্তিরক্ষী প্রেরণের দিক থেকে বাংলাদেশ তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। ৭টি দেশের ৯টি শান্তিরক্ষা মিশনে ৫ হাজার ৮৫৬ জন সদস্য শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত আছেন।

কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ সুবিদ আলী ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে কমিটির সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান, ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ্, মোতাহার হোসেন, মহিববুর রহমান ও নাহিদ ইজাহার খান বৈঠকে অংশ নেন।