মুসলিম দেশগুলোর সংঘাত বন্ধে ওআইসির ভূমিকা চান প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ। তেজগাঁও, ঢাকা, ০৪ সেপ্টেম্বর। ছবি: পিআইডি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ। তেজগাঁও, ঢাকা, ০৪ সেপ্টেম্বর। ছবি: পিআইডি

মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ঐক্য ও সংহতি সৃষ্টি এবং ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত বন্ধে ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) শক্তিশালী ভূমিকা পালনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, মুসলিম দেশগুলোর মধ্যকার ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত বন্ধে ওআইসি শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে পারে।

সফররত ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ জাভেদ জারিফ আজ বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তেঁজগাওয়ের কার্যালয়ে তাঁর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এ কথা বলেন।
বৈঠকের পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে বিবদমান সংঘাতের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুসলিমরা তাদের নিজেদের মধ্যকার বিভাজনের জন্যই রক্তপাতের শিকার হচ্ছে। এর ফলে তৃতীয় পক্ষ বা দেশ এর সুবিধা ভোগ করছে।
প্রধানমন্ত্রী আলোচনায় এমন অভিমত ব্যক্ত করেন যে মুসলিম দেশগুলোর মধ্যকার বিবদমান সংঘাত দ্বিপক্ষীয় বা বহুপক্ষীয়ভাবে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে।
দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় থাকার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি ইরানি মন্ত্রীকে অবহিত করেন, তিনি নিজেই দুজন শিয়া বালিকাকে দত্তক নিয়েছেন, যারা নিমতলীর ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের শিকার হয়েছিল।
বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ৮ দশমিক ১ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে এবং এই সময় মূল্যস্ফীতি ও ৫ দশমিক ৪ শতাংশে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে (২০১৮-১৯ অর্থ বছরে)।

শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকারের লক্ষ্যই হচ্ছে দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা।
বাংলাদেশ এবং ইরানের সাংস্কৃতিক বন্ধনকে ঐতিহাসিক আখ্যায়িত করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলা ভাষার বহু শব্দ ফারসি থেকে এসেছে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ আজ থেকে রাজধানীতে শুরু হওয়া দুই দিনব্যাপী তৃতীয় (আইওআরএ) ব্লু ইকোনমি মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্সে যোগদানের জন্য গতকাল মঙ্গলবার রাতে ঢাকায় আসেন। তিনি ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির শুভেচ্ছাও প্রধানমন্ত্রীকে পৌঁছে দেন।

বাংলাদেশের উন্নয়নকে দৃষ্টান্তমূলক অর্জন আখ্যায়িত করে জাভেদ বলেন, বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে আমি খুবই সন্তুষ্ট এবং এটা কেবল আপনার (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) ব্যক্তিগত নেতৃত্বের কারণেই সম্ভব হয়েছে।
সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওআইসি ফোরামেও প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকার প্রশংসা করেন।
ইরানের মন্ত্রী দুই দেশের মধ্যকার বিদ্যমান সম্পর্কেও সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, এ দুটি দেশের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কও ভালো।
জাভেদ জারিফ প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে তেহরান একটি সেমিনারের আয়োজন করবে (২০২০ সালে)।
ওআইসি সদস্যভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে তাঁর দেশের অবস্থান ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘আমরা সংহতি চাই। আমরা সৌদি আরবসহ সব ওআইসিভুক্ত সদস্য রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক চাই।’
যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক অবরোধ এবং তাঁর দেশের বৈজ্ঞানিক উন্নয়নের প্রসঙ্গ এনে ইরানের বর্তমান অবস্থা প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করে ইরানি মন্ত্রী বলেন, অবরোধের পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার পর ইরানের অর্থনীতি এখন ক্রমেই পুনরুজ্জীবিত হয়ে উঠছে।
সফররত মন্ত্রী বলেন, তাঁর দেশ অস্ত্র কেনার জন্য অর্থ ব্যয়ে রাজি নয়।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান এবং বাংলাদেশে ইরানের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মাদ রেজা নফর এ সময় উপস্থিত ছিলেন।