রোকেয়া হলে নিয়োগবাণিজ্যের অভিযোগে আবারও কমিটি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের প্রশাসনিক কয়েকটি পদে নিয়োগবাণিজ্যের অভিযোগে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানানো হয়।

গতকাল বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জিনাত হুদা দাবি করেন, তাঁর হলে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ ‘স্বচ্ছতার সঙ্গে’ সম্পন্ন হয়েছে। তবে আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় নিয়োগগুলোর কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।

রোকেয়া হলে নিরাপত্তাপ্রহরী ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ কয়েকটি পদে নিয়োগ দিতে হল সংসদের সহসভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস) এবং হল শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেত্রী তিন ব্যক্তির কাছ থেকে ২১ লাখ টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এর সঙ্গে হলের প্রাধ্যক্ষেরও যোগসাজশ রয়েছে বলে গত মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেন হলের কয়েকজন ছাত্রী। প্রমাণ হিসেবে কিছু অডিও রেকর্ডও সাংবাদিকদের কাছে হস্তান্তর করেন তাঁরা।

ছাত্রীদের সংবাদ সম্মেলনের পর রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ জিনাত হুদা প্রথম আলোকে বলেছিলেন, অভিযোগ তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। তিনি নিজে ওই কমিটির প্রধান। কমিটির পক্ষ থেকে অভিযোগকারী ও অভিযোগের শিকার দুই পক্ষকেই ডাকা হয়েছিল। কিন্তু অভিযোগকারীরা কমিটির কাছে দালিলিক কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি।

রোকেয়া হলে নিয়োগবাণিজ্যের প্রতিবাদে গতকালও ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন একদল শিক্ষার্থী। ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে ওই অভিযোগ তদন্তে এবার তিন সদস্যের আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠিত হলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক বেগম আকতার কামালকে আহ্বায়ক ও সহকারী প্রক্টর লিটন কুমার সাহাকে সদস্যসচিব করে গঠিত এই কমিটির আরেক সদস্য রোকেয়া হলের আবাসিক শিক্ষক মনিরা বেগম।

গত ২৫ জুলাই রোকেয়া হলে চারটি পদে কর্মচারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেন হল প্রাধ্যক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জিনাত হুদা। সেখানে অফিস সহায়ক পদে একজন, বাগানের মালি পদে একজন, নিরাপত্তা প্রহরী পদে তিনজন ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে তিনজন নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। প্রতিটি পদেই জাতীয় বেতন স্কেলের ২০তম গ্রেড অনুযায়ী ৮,২৫০-২০,০১০ টাকা বেতন ধরা হয়েছে। ৩১ জুলাই ছিল আবেদনের শেষ দিন। ১ সেপ্টেম্বর এসব পদে আবেদনকারীদের মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।

হল সংসদের এজিএস ফাল্গুনী দাসের সঙ্গে হলের এক কর্মচারীর কথোপকথনের একটি রেকর্ড ও ছাত্রীদের অভিযোগ অনুযায়ী, অফিস সহায়ক পদে হলের এক কর্মচারীর ছেলে ও মালি পদে বাগানের এক মালির ছেলেকে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে তাঁদের কাছ থেকে যথাক্রমে ৮ ও ৫ লাখ করে টাকা নিয়েছেন হল সংসদের ভিপি ইসরাত জাহান ও জিএস সায়মা প্রমি। আর নিরাপত্তা প্রহরী পদে নিয়োগ দিতে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ৮ লাখ টাকা নিয়েছেন হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি লিপি আক্তার, সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণী ইসলাম ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপসম্পাদক ইশাত কাশফিয়া।

গত ৩১ আগস্ট রাতে এসব তথ্য একটি ফেসবুক গ্রুপে প্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজ বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্রী শ্রবণা শফিক। এর জন্য গত সোমবার তাঁকে চিঠি দিয়ে তলব করেন প্রাধ্যক্ষ জিনাত হুদা। চিঠিতে মঙ্গলবার দুপুরে তাঁকে ওই অভিযোগ তদন্তে হল প্রশাসনের করা কমিটির কাছে বক্তব্য জানানোর অনুরোধ করা হয়। মঙ্গলবার হল কার্যালয়ে গেলে প্রাধ্যক্ষের সামনে ছাত্রলীগ নেত্রীদের লাঞ্ছিত হওয়ার অভিযোগ করেন শ্রবণা। তবে প্রাধ্যক্ষ বলেছেন, এই অভিযোগ সত্য নয়।