এখন বিএনপির মূল দৃষ্টি ছাত্রদলের সম্মেলনের দিকে

বিএনপি
বিএনপি

দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার কারামুক্তির দাবিতে সংগঠিত হচ্ছে বিএনপি। এ জন্য শিগগিরই মাঠের কর্মসূচিতে যাবে দলটি। এর পাশাপাশি ছাত্রদলসহ অন্যান্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন পুনর্গঠনে মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে এই মুহূর্তে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের মূল দৃষ্টি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের দিকে।

ছাত্রদলের কমিটি গঠনের পাশাপাশি মাঠের রাজনীতিতেও কর্মসূচি জোরালো করছে বিএনপি। দলটির নীতিনির্ধারকেরা বলছেন, প্রায় ২০ মাস হয়ে গেছে খালেদা জিয়া কারাবন্দী। এত দিনেও দলীয় প্রধানকে আইনিভাবে কারামুক্ত করতে না পারা বা তাঁ​র মুক্তির দাবিতে রাজপথে কোনো আন্দোলন গড়তে না পারাটা দলের জন্য বিব্রতকর। এ নিয়ে সরকারি দল থেকেও প্রায়ই খোঁচা শুনতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে চলতি সেপ্টেম্বর মাস থেকে আবারও মাঠের কর্মসূচি শুরু করছে বিএনপি।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহতভাবে কর্মসূচি চলবে। আর বিরতি দেওয়া হবে না।

বুধবার (আজ) ঢাকা মহানগরে ও বৃহস্পতিবার সারা দেশে মানববন্ধন করবে বিএনপি। এরপর ২১ সেপ্টেম্বর সিলেট, ২৬ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহ ও ২৯ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে সমাবেশের কর্মসূচি রয়েছে। পর্যায়ক্রমে রংপুরসহ অন্যান্য জেলায়ও সমাবেশের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন দলটির নেতারা।

এদিকে ১৪ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ছাত্রদলের সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা মনে করছেন, স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ভোটাভুটিতে ছাত্রদলের মূল নেতৃত্ব দাঁড় করানো গেলে সংগঠনে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। পাশাপাশি আগামী দিনে আন্দোলন-সংগ্রামে এর ফল পাওয়া যেতে পারে। কারণ, অছাত্র ও বয়স্করা নেতৃত্বে চলে আসায় ছাত্রদলকে নিয়ে একটা বন্ধ্যত্ব তৈরি হয়েছে বলে প্রচার আছে।

সম্মেলন সামনে রেখে প্রার্থীরা ব্যস্ত প্রচার-প্রচারণায়। সম্ভাব্য প্রার্থীদের বেশির ভাগই এখন রয়েছেন ঢাকার বাইরে। ডাকসু নির্বাচনের পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবাধ প্রবেশাধিকার পাওয়া ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা প্রতিদিন সন্ধ্যায় আড্ডা দিতে জড়ো হন ক্যাম্পাসের টিএসসি ও হাকিম চত্বর এলাকায়। তাঁদের আলোচনার একমাত্র বিষয় সংগঠনের সম্মেলন। কিন্তু এরই মধ্যে সংগঠনটির নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সমন্বয়ে গঠিত নির্বাচন পরিচালনা কমিটিসহ বিভিন্ন কমিটির কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছে। তাঁরা পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে নানাভাবে ভোট চাইছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে গত শনিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও আলোচনা হয়।

>

২০ মাস ধরে খালেদা জিয়া কারাবন্দী
আন্দোলন গড়তে না পারায় দলটি বিব্রত
খালেদার মুক্তির দাবিতে মাঠের কর্মসূচিতে যাচ্ছে দলটি
বুধবার ঢাকায়, বৃহস্পতিবার সারা দেশে মানববন্ধন

এই প্রেক্ষাপটে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে ছাত্রদলের নির্বাচন পরিচালনাসংশ্লিষ্ট নেতারা যৌথ বিবৃতি দেন। তাতে বলা হয়, তাঁরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছেন যে কিছু প্রার্থী বা তাঁদের সমর্থকেরা নির্বাচনী প্রচারণায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাবেক কোনো কোনো ছাত্রনেতার নাম ও বিভিন্ন কর্মসূচির পুরোনো ছবি ব্যবহার করে নিজেদের অনুকূলে প্রচারণা চালাচ্ছেন, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

বিবৃতিতে ছাত্রদলের সম্মেলনসংশ্লিষ্ট কমিটির সাবেক কোনো ছাত্রনেতার নাম কোনোভাবেই ব্যবহার না করার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, অন্যথায় দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হবে।

সক্রিয় দুই বলয়
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদপ্রত্যাশীরা বলছেন, সংগঠনের সাবেক দুই নেতার বলয়ের বাইরে এবারও শীর্ষ নেতৃত্বে আসার সুযোগ নেই। একটি বলয় গুম হওয়া বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী-কেন্দ্রিক, আরেকটির নেতৃত্বে যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন। এই দুই বলয় থেকে ছাত্রদলের শীর্ষ পদে ছয়জন প্রার্থীর নাম আলোচিত হচ্ছে বেশি। সভাপতি পদে আলোচনায় আছেন ছাত্রদলের সাবেক বৃত্তি ও ছাত্রকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক কাজী রওনকুল ইসলাম, সাবেক গণশিক্ষাবিষয়ক সহসম্পাদক ফজলুর রহমান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান। সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় আছেন সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহসভাপতি আমিনুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন, শাহনেওয়াজ ও জুয়েল হাওলাদার।

ছাত্রদলের সম্মেলনের আপিল কমিটির সদস্য ও বিএনপির নেতা আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশের গণতন্ত্র অবরুদ্ধ, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অবিচারে কারাবন্দী। ছাত্রদলের আগামী নেতৃত্বের মূল চিন্তা হবে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার এবং খালেদা জিয়ার মুক্তি। এর বাইরে তাঁরা অন্য কিছুতে প্রভাবিত হবে বলে মনে করি না।’

১৪ সেপ্টেম্বর ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ভোট হবে। এবারের সম্মেলনে কাউন্সিলর (ভোটার) ৫৮০ জন। তাঁরা সারা দেশে সংগঠনের ১১৭টি ইউনিটের শীর্ষ পদে রয়েছেন। নির্বাচনে সভাপতি পদে ৮ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ১৯ জন চূড়ান্ত প্রার্থিতা পেয়েছেন। ২ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত প্রার্থীতালিকা প্রকাশের পর ৩ সেপ্টেম্বর শুরু হয়েছে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা, সুযোগ থাকবে ১২ সেপ্টেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত।

ছাত্রদল সূত্র জানায়, ১১ থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর ছাত্রদলের নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কাউন্সিলর কার্ড বিতরণ করা হবে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীরা ১২ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে চারটায় গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয় থেকে তাঁদের কার্ড সংগ্রহ করতে পারবেন।

ভোটের মাধ্যমে ছাত্রদলের নেতৃত্ব বাছাইয়ের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ভবিষ্যতে বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোতেও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচন হবে। ইতিমধ্যে ছাত্রদলের সম্মেলন ও নির্বাচন ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।