তৃণমূলের সম্মেলন নিয়ে কাটছে না অনিশ্চয়তা

চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের কোনো কোনো ওয়ার্ড কমিটির মেয়াদ ২০ থেকে ২৫ বছর পেরিয়ে গেছে। তবু সম্মেলন নিয়ে কাটছে না অনিশ্চয়তা। সম্মেলনের দিনক্ষণ ঠিক করতে এ মাসের মাঝামাঝি নগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা ডাকার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে এ সভায় সম্মেলনের দিনক্ষণ ঠিক না–ও হতে পারে, এমন মনে করছেন নেতা–কর্মীরা।

দলীয় সূত্র জানায়, ২ সেপ্টেম্বর থেকে ধারাবাহিকভাবে ৪৩টি সাংগঠনিক ওয়ার্ড ও প্রতিটি ইউনিট আওয়ামী লীগের সম্মেলন করার দিনক্ষণ ঘোষণা করা হয়েছিল। এরপর হওয়ার কথা ছিল থানার সম্মেলন। কিন্তু কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে গত মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ওয়ার্ড ও ইউনিট আওয়ামী লীগের সম্মেলন স্থগিত রাখা হয়।

দলীয় সূত্র জানায়, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলন করা নিয়ে কেন্দ্রে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ যায়। কারণ, চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগ দুটি ধারায় বিভক্ত। একটি ধারার নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন প্রয়াত এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী। অন্যটির নেতৃত্বে আছেন সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন। পাল্টাপাল্টি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই কেন্দ্র সম্মেলন স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয় বলে দলের ভেতরে আলোচনা আছে।

দলের একটি অংশের নেতাদের অভিযোগ, একটি পক্ষের লোকজনকে দিয়ে ওয়ার্ড কমিটি গঠন করে প্রতিপক্ষের অনুসারীদের কোণঠাসা করার আয়োজন করা হয়। এতে সম্মেলন সফল করা কঠিন ছিল। কারণ, প্রতিদিনই একটি করে সম্মেলনের তারিখ দেওয়া হয়। ফলে ক্ষোভ–বিক্ষোভ বাড়ার আশঙ্কা ছিল।

>■ নগর আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ চায় এখনই সম্মেলন করতে।
■ আরেক পক্ষ চায় সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর সম্মেলন।


নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক আদনান এই আশঙ্কার কথা স্বীকার করেছেন। মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত এই নেতা প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিদিন একটি করে ওয়ার্ড সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল, যা ঠিক ছিল না। এতে পকেট কমিটি হওয়ার আশঙ্কা ছিল।

মেয়রের ভিন্ন কথা

পকেট কমিটি করার আশঙ্কার কথা যাঁরা বলছেন, তা দুরভিসন্ধিমূলক বলে মন্তব্য করেছেন আ জ ম নাছির উদ্দীন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাতীয় সম্মেলনের আগে আমাদের সম্মেলন শেষ করার কথা ছিল।’ মেয়রের প্রশ্ন, ৪৩ সাংগঠনিক ওয়ার্ড ও ১৫ থানার সম্মেলন নির্দিষ্ট সময়ে করতে হলে কত দিন সময় প্রয়োজন?

মেয়র বলেন, আসলে দলের সভা ডেকে সবার মতামতের ভিত্তিতে তারিখ ঘোষণা করা হয়েছিল। তাঁরা না জেনে এসব মন্তব্য করছেন। সভাপতি ও সম্পাদক পদে একাধিক প্রার্থী থাকলে কাউন্সিলরদের ভোটে নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে। এতে কোনো আশঙ্কা থাকার কথা নয়।

মেয়র বলেন, ‘বাহ্যিক কর্মসূচিগুলোতে নগর আওয়ামী লীগকে অনেক শক্তিশালী মনে হচ্ছে। প্রতিটি কর্মসূচিতে হাজার হাজার নেতা–কর্মীর উপস্থিতি ঘটছে। কিন্তু অনেক ওয়ার্ডে আমাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই। অনেকে মারা গেছেন। তাই কাঠামোগত দিক থেকে আমাদের আরও ভালো করার সুযোগ রয়েছে।’

‘আমরা চাই, সম্মেলন হয়ে যাক’

নগর আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষের বিরোধ এখন প্রকাশ্য না হলেও মনস্তাত্বিক দ্বন্দ্ব কাটছে না। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, মেয়র নাছির উদ্দীন যে উদ্যোগ নেন, তা মানতে চান না প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারীরা। বিশেষ করে সম্মেলন ও কমিটি গঠনের সময় বিরোধ ও দ্বন্দ্ব স্পষ্ট হয়। সম্মেলন স্থগিত রাখার পেছনে মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারীদের ভূমিকা ছিল বলে অনেকে মনে করছেন। আবার নাছির উদ্দীনও কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন, যাতে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হয়। এ কারণে নগর আওয়ামী লীগকে বর্ধিত সভা ডাকার আহ্বান জানিয়েছে কেন্দ্র।

চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রাম নগরে ওয়ার্ড সম্মেলন স্থগিত আছে। তবে জাতীয় সম্মেলনের আগে চট্টগ্রামের ওয়ার্ডগুলোতে সম্মেলন করা যায় কি না, সে বিষয়ে চলতি মাসের মাঝামাঝি সময় নগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা ডাকা হবে।

এনামুল হক বলেন, ‘চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত হবে। তিনি বলেন, সম্মেলন করা হবে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে। আমরা চাই, সম্মেলন হয়ে যাক।’

দলীয় সূত্র জানায়, বর্ধিত সভা ডেকে সম্মেলন শুরু করার সিদ্ধান্ত আসতে পারে। আবার সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়া নিয়েও সংশয় রয়েছে। কারণ, সিটি নির্বাচনের আগে মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারীরা সম্মেলন করার পক্ষপাতী নন বলে একাধিক দায়িত্বশীল নেতা জানিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরের কিছু ওয়ার্ডের কমিটি ১৯৯৪ সালে গঠিত হয়। তখনকার অনেক নেতা প্রয়াত। ফলে অনেকগুলো ওয়ার্ডে পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই। প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরী ও কাজী ইনামুল হক দানুর নেতৃত্বাধীন কমিটির মেয়াদে ১৮টি ওয়ার্ডের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি। নাছির উদ্দীন ওই ওয়ার্ডগুলোর সম্মেলন দ্রুত শেষ করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন।

মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বাতিল করে সম্মেলন করার পক্ষে মত দিয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম। তিনি বলেন, কোনো কোনো ওয়ার্ডে কমিটির মেয়াদ ২৫ বছর পার হয়ে গেছে। তবে এই মুহূর্তে সম্মেলন করা জরুরি কি না তা ভাবতে হবে। 

খোরশেদ বলেন, জানুয়ারি বা পরের যেকোনো মাসে সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলন ঘিরে আওয়ামী লীগে বিরোধ বাড়লে সিটি নির্বাচনে প্রভাব পড়া স্বাভাবিক। তাই নির্বাচনের পরেই সম্মেলন হলে সংগঠনে বিরূপ প্রভাব পড়বে না।