রমেক অধ্যক্ষসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

রংপুর মেডিকেল কলেজে (রমেক) যন্ত্রপাতি কেনার নামে সরকারের ৪ কোটি ৪৮ লাখ ৮৯ হাজার ৩০০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে কলেজটির অধ্যক্ষসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে সংস্থাটির রংপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি করেন উপসহকারী পরিচালক মো. ফেরদৌস রহমান।

দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। দুদক সূত্র জানায়, দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে দুর্নীতির বেশ কয়েকটি অভিযোগ অনুসন্ধান করছে উপপরিচালক সামছুল আলমের নেতৃত্বে একটি দল। এর অংশ হিসেবে আগে কয়েকটি মামলাও হয়।

এ মামলায় আসামি করা হয়েছে রমেক অধ্যক্ষ মো. নূর ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক সারোয়াত হোসেন, বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিক্যাল কোম্পানির মালিক জাহের উদ্দিন সরকার, তাঁর বাবা ও মার্কেন্টাইল ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক আবদুস সাত্তার সরকার, ছেলে আহসান হাবীব এবং ভগ্নিপতি ও ইউনিভার্সেল ট্রেড করপোরেশনের মালিক আসাদুর রহমানকে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, রমেকে ভারী যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামের প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়াই সেসব কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। অধ্যক্ষ নূর ইসলাম বিধিবহির্ভূতভাবে বিভিন্ন কমিটি গঠন করেন। যথাযথ চাহিদাপত্র ও নমুনা ছাড়াই দরপত্র আহ্বান করেন এবং পছন্দের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিক্যাল কোম্পানিকে কার্যাদেশ দেন। ২০১৮ সালের ২১ জুন দরপত্র মূল্যায়ন করে একই তারিখে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড দেন এবং চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করেন। ২৩ জুন কার্যাদেশ দেন। যন্ত্রপাতি সরবরাহ না করলেও কার্যাদেশ পাওয়ার পঞ্চম দিনেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিল জমা দেয়, যা অধ্যক্ষ ওই দিনই পাস করেন। প্রশাসনিক মঞ্জুরি পাওয়ার আগেই জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে পাঠিয়ে দেন। এভাবে মেসার্স বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিক্যাল কোম্পানির মালিক জাহের উদ্দিন সরকারকে সরকারের ৪ কোটি ৪৮ লাখ ৮৯ হাজার ৩০০ টাকা আত্মসাতে সহায়তা করেন।

দরপত্রে অংশগ্রহণকারী ও দরপ্রস্তাব দাখিলকারী মেসার্স বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিক্যাল কোম্পানির মালিক জাহের উদ্দিন সরকার, মার্কেন্টাইল ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক আবদুস সাত্তার সরকার (জাহের উদ্দিনের বাবা) ও আহসান হাবীব (জাহের উদ্দিনের ছেলে) এবং ইউনিভার্সেল ট্রেড করপোরেশনের মালিক আসাদুর রহমান (জাহের উদ্দিনের ভগ্নিপতি) পরিচয় গোপন করে পরস্পর যোগসাজশে সাজানো দরপত্র জমা দেন। এরপর কার্যাদেশ পেয়ে শর্ত অনুযায়ী যন্ত্রপাতি সরবরাহ না করে অপ্রয়োজনীয় ও নিম্নমানের ব্যবহারের অনুপযোগী যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে সরকারের ৪ কোটি ৪৮ লাখ ৮৯ হাজার ৩০০ টাকা আত্মসাৎ করেন।

রমেকের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. সারোয়াত হোসেন একাই বাজারদর কমিটি, দরপত্র উন্মুক্তকরণ কমিটি, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি এবং সার্ভে কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। নন–ক্লিনিক্যাল কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে ইকুইপমেন্ট বিষয়ে অভিজ্ঞতা না থাকলেও প্রভাব খাটিয়ে বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিক্যাল কোম্পানির মালিক জাহের উদ্দিন সরকারকে সরকারের ৪ কোটি ৪৮ লাখ ৮৯ হাজার ৩০০ টাকা আত্মসাতে সহায়তা করেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

এই মামলার আসামি মেসার্স বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিক্যাল কোম্পানির মালিক জাহের উদ্দিন সরকার, মার্কেন্টাইল ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক আবদুস সাত্তার সরকার (জাহের উদ্দিনের বাবা) এবং ইউনিভার্সেল ট্রেড করপোরেশনের মালিক আসাদুর রহমান (জাহের উদ্দিনের ভগ্নিপতি) দুদকের দায়ের করা আরেকটি মামলায় কারাগারে আছেন। পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অসৎ উদ্দেশ্যে পূর্বপরিকল্পিতভাবে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের যন্ত্রপাতির কোনো ধরনের চাহিদাপত্র না থাকা সত্ত্বেও যন্ত্রপাতি সরবরাহের নামে ১৬ কোটি ৬১ লাখ ৩১ হাজার ৮২৭ টাকা তুলে নিয়ে আত্মসাৎ করার অভিযোগে ওই মামলা করে দুদক।

চলতি বছরের ৯ জুলাই এই ৯ জনের বিরুদ্ধে দুদকের খুলনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি করেন প্রধান কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক জালাল উদ্দিন। মামলায় আসামি করা হয় সাতক্ষীরার সাবেক সিভিল সার্জন তাওহীদুর রহমান, সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ভান্ডাররক্ষক ফজলুল হক, হিসাবরক্ষক আনোয়ার হোসেন, মেসার্স বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিক্যাল কোম্পানির মালিক জাহের উদ্দিন সরকার, আবদুস ছাত্তার সরকার, আহসান হাবিব ও আসাদুর রহমান, মাদারীপুরের আবু বকর সিদ্দিক এবং নিমিউ অ্যান্ড টিসির অবসরপ্রাপ্ত সহকারী প্রকৌশলী এ এইচ এম আবদুল কুদ্দুসকে। এঁদের মধ্যে সিভিল সার্জন তাওহীদুর রহমান এবং আনোয়ার হোসেনও কারাগারে আছেন।

ওই মামলার এজাহারে বলা হয়, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অসৎ উদ্দেশ্যে পূর্বপরিকল্পিতভাবে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের যন্ত্রপাতির কোনো ধরনের চাহিদাপত্র না থাকা সত্ত্বেও যন্ত্রপাতি কেনার উদ্যোগ নেন। জাল জালিয়াতি ও প্রতারণার আশ্রয়, অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ করে দরপত্র আহ্বান, দরপত্র সংগ্রহ, দরপত্র মূল্যায়ন ও কার্যাদেশ দিয়ে তিনটি মিথ্যা বিলের বিপরীতে মোট ১৬ কোটি ৬১ লাখ ৩১ হাজার ৮২৭ টাকা তুলে নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন।