খেলাধুলা ছাড়া সবকিছু হয় যে মাঠে

গাজীপুর শহরের রাজবাড়ি মাঠে চটপটি ও ফুচকার দোকান। সভা-সমাবেশ না থাকলেও মাঠে বিশাল প্যান্ডেল। বৃহস্পতিবার বিকেলে।  প্রথম আলো
গাজীপুর শহরের রাজবাড়ি মাঠে চটপটি ও ফুচকার দোকান। সভা-সমাবেশ না থাকলেও মাঠে বিশাল প্যান্ডেল। বৃহস্পতিবার বিকেলে। প্রথম আলো

বছরজুড়ে কখনো মেলা, কখনো প্রদর্শনী। আর বিশাল প্যান্ডেল করে সভা-সমাবেশ তো আছেই। গাড়ি পার্কিং, সিএনজি-অটোরিকশার স্ট্যান্ডও রয়েছে। এই চিত্র গাজীপুরের ঐতিহ্যবাহী রাজবাড়ি মাঠের। ফলে সুবিশাল এই মাঠে খেলাধুলার তেমন সুযোগ নেই।

গাজীপুর ক্রিকেট একাডেমির (বিসিবি, লেভেল-এ) প্রশিক্ষক বিশ্বজিৎ মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, অর্ধেক মাঠজুড়ে প্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছে। অনুষ্ঠান শেষ হলেও সেটি খোলা হচ্ছে না। মাঠের বাকি অংশ চটপটি আর ফুচকা বিক্রেতাদের দখলে। পূর্ব পাশে অল্প একটু জায়গা খালি আছে, সেখানেই কোনো রকমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গাজীপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে কালের সাক্ষী হয়ে প্রায় অক্ষত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে ঐতিহাসিক ভাওয়াল রাজবাড়ি। রাজবাড়ির পশ্চিম পাশে রয়েছে বিশাল একটি দিঘি এবং সামনে রয়েছে বিশাল একটি মাঠ। গাজীপুর শহরের আশপাশে বড় কোনো খেলার মাঠ নেই। রাজবাড়ি মাঠটিই শহর ও আশপাশের বাসিন্দাদের খেলাধুলার একমাত্র জায়গা। মাঠটির চারদিকে গ্রিল দেওয়া। শহরের বাসিন্দাদের বিনোদনের একটি বড় জায়গা। কিন্তু বছরের বেশির ভাগ সময় এই মাঠে চলে সভা-সমাবেশ। বৃক্ষমেলা, বস্ত্রমেলা থেকে শুরু করে এমন কোনো অনুষ্ঠান নেই, যা এই মাঠে হয় না। এ কারণে বছরের বেশির ভাগ সময় মাঠের অর্ধেক অংশজুড়ে প্যান্ডেল থাকে। বাকি অংশজুড়ে থাকে চটপটি ও ফুচকার দোকান। এখন নতুন করে যুক্ত হয়েছে গাড়ি পার্কিং। এত কিছুর ভিড়ে মাঠে খেলাধুলা করার কোনো জায়গাই নেই। শহরবাসী দীর্ঘদিন ধরে খেলাধুলার জন্য মাঠটি উন্মুক্ত করে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন।

বৃহস্পতিবার মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, বিশাল মাঠের পশ্চিম দিকে অর্ধেক অংশে প্যান্ডেল। এর পরের অংশে কমপক্ষে ২০টি চটপটি আর ফুচকার দোকান। পাশেই পার্ক করা হয়েছে যানবাহন। মাঠের পূর্ব দিকে অল্প একটু ফাঁকা জায়গায় ১০-১৫ জন ছেলে ক্রিকেট প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। তাদের ছোড়া বল চলে যাচ্ছে চটপটি আর ফুচকার দোকানের দিকে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে চটপটি আর ফুচকা বিক্রেতারা তাদের দিকে তেড়ে এসে খেলা বন্ধ করতে বলেন। প্রশিক্ষক বিশ্বজিৎ মণ্ডল বলেন, এখানে খেলাধুলার কোনো পরিবেশ নেই। খেলতে এলে ব্যবসায়ীরা তাদের দিকে ক্ষিপ্ত হয়ে আসেন। 

গাজীপুরের দক্ষিণ ছায়াবীথি এলাকার বাসিন্দা মজিবুর রহমান বলেন, ‘অনেক এলাকায় খেলাধুলার মাঠ নেই, তারা আফসোস করে। আর আমাদের মাঠ থাকার পরও ছেলেমেয়েরা খেলাধুলা করতে পারছে না, এটা খুবই দুঃখজনক।’

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, গাজীপুর শহরের আশপাশের কয়েকটি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের কোনো খেলার মাঠ নেই। রাজবাড়ি মাঠটি দখলমুক্ত করা গেলে সবাই খেলাধুলার সুযোগ পেত। মাঠটি দখলমুক্ত থাকলে বাসিন্দারা সকাল–বিকেল এখানে হাঁটাচলা বা ব্যায়ামও করতে পারবেন। অনেক দিন ধরে তাঁরা মাঠের পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানালেও এটি এখন পর্যন্ত হচ্ছে না। একদিন অনুষ্ঠান হলে কমপক্ষে তিন–চার মাস মাঠে প্যান্ডেল থাকে।

গাজীপুরের হাড়িনাল হাইস্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র মো. জোবায়ের জানায়, মাঠে খেলাধুলা করার কোনো পরিবেশ নেই। পরিবেশ ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন। গাজীপুর ক্রিকেট একাডেমির ছাত্র মো. বায়েজিদ জানায়, কিছুক্ষণ খেলার পর চটপটির দোকানদারেরা খেলতে দেন না। তাঁরা বলেন, আর খেলার দরকার নেই, বাড়ি চলে যাও।

জানতে চাইলে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম আতিকুল ইসলাম গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাঠটিতে খেলাধুলার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করছি। প্রয়োজনে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে দোকানপাট উচ্ছেদ করা হবে। এ ছাড়া মাঠের প্যান্ডেল খুলে ফেলার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে মাঠে খেলাধুলার পরিবেশ ফিরে আসবে।’