মোংলা বন্দর: সংস্কারের অভাবে নষ্ট হচ্ছে কয়েক কোটি টাকার ভবন

কোনোটির দরজা-জানালা নেই, কোনোটির দরজা ভাঙা। ছাদ ও দেয়াল থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে। দীর্ঘদিন সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ না করায় এমন জরাজীর্ণ অবস্থা বাগেরহাটের মোংলা বন্দরের বেশ কিছু ভবনের। নব্বইয়ের দশকে নির্মিত এসব ভবনের দাম বর্তমানে কয়েক কোটি টাকা।

মোংলা বন্দরের শ্রমিক নিয়োগকারী কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এবং শ্রমিক-কর্মচারী সংঘের কয়েকজন নেতা অভিযোগ করেছেন, বন্দর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় ভবনগুলো এখন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তারা নিয়মিত সংস্কার করলে এগুলো নষ্ট হতো না।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সম্পত্তি শাখা সূত্রে জানা যায়, বন্দরে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের আবাসন সমস্যা দূর করার জন্য ১৯৮৫ সাল থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে ৭৫টি পাকা ও আধা পাকা ভবন নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে দুটি ছয়তলা, সাতটি পাঁচতলা, দুটি তিনতলা, ১৪টি দোতলা, ৩০টি একতলা ভবন ও ২০টি টিনশেড নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে একটি মিলনায়তন, একটি হাসপাতাল ও একটি বিদ্যালয়ের
ভবন রয়েছে। এসব ভবনে কুমিল্লা, নোয়াখালী, বরিশাল, মোরেলগঞ্জ, শরণখোলাসহ বিভিন্ন এলাকার ১ হাজার ৭৫৮ জন নিবন্ধিত ও ৮৯৬ জন অনিবন্ধিত শ্রমিক ২০০৮ সাল পর্যন্ত বাস করছিলেন। ডক শ্রমিক পরিচালনা বোর্ডের অর্থায়নে এগুলো নির্মাণ করা হয়। ভবনগুলো ২০০৮ সাল পর্যন্ত ডক শ্রমিক পরিচালনা বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল। ২০০৮ সালে বোর্ড বিলুপ্ত করা হলে ভবনগুলো বন্দর কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। কিন্তুÍবন্দর কর্তৃপক্ষ ১১ বছরে ভবনগুলোর কোনো সংস্কার করেনি। ওই অধ্যাদেশের বলে এসব শ্রমিকের নিবন্ধনও বাতিল হয়ে যায়। শ্রমিকেরা তাঁদের পরিবার-পরিজন নিয়ে বিপদে পড়ে যান। বন্দর কর্তৃপক্ষ তাঁদের এসব ভবন ছেড়ে দেওয়ার জন্য শ্রমিকদের নির্দেশ দিলে তাঁরা চলে যান।

সরেজমিনে দেখা যায়, মোংলা উপজেলা ও শ্রমিক সংঘের কার্যালয়ের সামনের চারটি তিনতলা ভবনের দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে। জানালার কাচ, গ্রিল ও কাঠ নেই। দরজা ভাঙা। কার্নিশগুলো ভেঙে পড়ছে। ভবনের চারপাশের দেয়ালে গাছ বড় হয়ে গেছে। একই অবস্থা পুরোনো রকেট ঘাটের সামনের ১৩টি দোতলা ভবনের। শ্রমিক সংঘের কার্যালয়ের সামনের আটটি টিনশেডের ওপরে টিনের চাল নেই। শুধু প্রাচীর আছে। অধিকাংশ ভবনই ঝুঁকিপূর্ণ ভবন হিসেবে বন্দর কর্তৃপক্ষের সাইনবোর্ড লাগানো আছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা শ্রমকল্যাণের তিনটি একতলা ভবনের।

মোংলা বন্দর শ্রমিক কর্মচারী সংঘের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, বেশির ভাগ ভবন জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। ২০১৮ সালের জুন মাসে বন্দর কর্তৃপক্ষ ভবনগুলোর অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য একটি কমিটি গঠন করে। কিন্তু সেই কমিটি এক বছর পার হয়ে গেলেও এ নিয়ে কোনো প্রতিবেদন জমা দেয়নি। বন্দর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় কোটি কোটি টাকার সম্পদ আজ ধ্বংস হওয়ার পথে।

মোংলা বন্দরের পণ্য খালাসকারী ও শ্রমিক নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান নুরু অ্যান্ড সন্সের স্বত্বাধিকারী হোসাইন মোহাম্মদ দুলাল বলেন, এত দিনেও বন্দর কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেনি। বিষয়টি খুবই হতাশাজনক।

বন্দর কর্তৃপক্ষের একজন প্রকৌশলী বলেন, অধিকাংশ ভবনে বন্দরের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকেরা এখন আর থাকেন না। ফলে সংস্কার করে কারা এসব ভবনে থাকবেন, বন্দর কর্তৃপক্ষ ভবনগুলো থেকে কোনো আয় করতে পারবে কি না, এসব বিষয়ে বারবার সভা করেও কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি। সিদ্ধান্তহীনতায় কোটি কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষই এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবে।

জানতে চাইলে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের উপব্যবস্থাপক (সম্পত্তি) রওশন আলী বলেন, ‘বিষয়টি আমরাও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছি। সম্প্রতি বন্দর কর্তৃপক্ষ ভবনগুলোর মধ্যে কোনগুলো ব্যবহারের উপযোগী, কোনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ, কোনগুলো বিধ্বস্ত—তার একটি তালিকা তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে অনুযায়ী তালিকা তৈরির পর কোন কোন ভবন সংস্কার করা যাবে, আর কোনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হবে, তা তখন বলা যাবে।’