খুলনায় ১ অক্টোবর থেকে চলবে না ব্যাটারিচালিত রিকশা

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

অক্টোবরের প্রথম দিন থেকেই খুলনা নগরে কোনো ব্যাটারিচালিত রিকশা চলবে না। ওই দিন থেকে নগরে চলবে অনুমোদন দেওয়া নির্দিষ্ট রঙের ইজিবাইক। খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

রিকশার ব্যাটারি ও মোটর খুলে ফেলতে এরই মধ্যে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে কেসিসি। নিজ উদ্যোগে ব্যাটারি খুলে ফেলতে ১ সেপ্টেম্বর থেকে কেসিসির পক্ষ থেকে নগরে মাইকিং করা হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যাটারি খোলা না হলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ব্যাটারি খুলে তা জব্দ করা হবে বলে জানানো হচ্ছে।

সড়ক দুর্ঘটনারোধে গত ১ জুলাই থেকে নগরে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করেছিল কেসিসি। কিন্তু রিকশাচালকদের অনুরোধে তিন মাস সময় বাড়ানো হয়। ৩০ সেপ্টেম্বর শেষ হচ্ছে ওই মেয়াদ। এবার আর কোনোভাবেই সময় বাড়ানো হবে না বলে জানিয়েছেন কেসিসি কর্মকর্তারা।

এদিকে ইজিবাইক নিয়ন্ত্রণে আনতে চলাচলের অনুমতি দেওয়ার কার্যক্রম শেষ করতে যাচ্ছে সিটি করপোরেশন। ১ সেপ্টেম্বর থেকে লাইসেন্সের জন্য এককালীন ১০ হাজার টাকার পে-অর্ডার জমা নেওয়া হচ্ছে। কেসিসি জানিয়েছে, পর্যায়ক্রমে নগরের সব ওয়ার্ডের চালকদের পে-অর্ডার জমা নেওয়া হবে। সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে নগরের হাদিস পার্কে অনুমতি দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

ইজিবাইকের লাইসেন্স দেওয়ার জন্য প্রতিটি গাড়ি সবুজ ও লাল রং করা এবং ডান পাশ দিয়ে যাত্রী ওঠা-নামা স্থায়ীভাবে বন্ধ করার শর্ত দিয়েছে কেসিসির লাইসেন্স শাখা। কেসিসি জানিয়েছে, নগরে নিবন্ধিত রিকশার সংখ্যা ১৭ হাজার। ২০১৭ সালের শুরু থেকে নগরের রিকশাগুলোতে ব্যাটারিচালিত মোটর সংযোজন শুরু হয়।

মোটর সংযোজনের পর রিকশায় গতি পেলেও ওই গতি নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা রিকশায় নেই। ফলে অতিরিক্ত গতির ওই রিকশা প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই নগরে ব্যাটারিচালিত রিকশার দুর্ঘটনায় আহত হচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। এ অবস্থায় সড়ক দুর্ঘটনারোধে ও সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রিকশা থেকে ব্যাটারি ও মোটর খুলে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেসিসি। কেসিসির সাধারণ সভায় বিষয়টি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

এদিকে ইজিবাইক নিয়ন্ত্রণের কার্যক্রমও ইতিমধ্যে শেষ করে এনেছে কেসিসি। নগরের ভেতরে ৭ হাজার ৭৯২টি ইজিবাইক চলাচলের অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এসব চালকদের কাছ থেকে এককালীন ১০ হাজার টাকার পে-অর্ডার জমা নেওয়া হচ্ছে।

কেসিসির লাইসেন্স শাখা থেকে জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারি থেকে নির্দিষ্টসংখ্যক ইজিবাইক চলাচলের অনুমতি দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করে কেসিসি। ওই সময় ৮ হাজার ২২২টি আবেদন ফরম বিতরণ করা হয়। এর মধ্যে জমা পড়ে ৭ হাজার ৮৮৮টি আবেদন। যাচাই–বাছাই শেষে ৭ হাজার ৭৯২টি আবেদন সঠিক বলে শনাক্ত হয়। বাতিল করা হয় ৯৬টি আবেদন। গত ২৪ জুলাই আবেদনগুলো নগরের ৩১টি ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ১ সেপ্টেম্বর থেকে নগরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের চালকদের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকার পে-অর্ডার গ্রহণ শুরু হয়েছে।

কেসিসির জ্যেষ্ঠ লাইসেন্স কর্মকর্তা ফারুক হোসেন তালুকদার বলেন, ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পে-অর্ডার জমা নেওয়া হবে। এরপর যাঁরা সময় পাননি, তাঁদের জন্য কয়েক দিন সময় দেওয়া হতে পারে। সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যেই ইজিবাইকসহ চালকদের হাদিস পার্কে ডাকা হবে। সিটি মেয়র নিজে উপস্থিত থেকে চালকদের হাতে চলাচলের অনুমতিপত্র তুলে দেবেন। প্রতিবছর ১ হাজার ৭০০ টাকা দিয়ে এর লাইসেন্স নবায়ন করতে হবে।

সিটি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক প্রথম আলোকে বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক। ব্যাটারি রিকশার ওপর চালকের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এ জন্য প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রিকশা থেকে ব্যাটারি খুলে ফেলতে হবে। নাহলে পুলিশ দিয়ে ব্যাটারি খোলার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, এর আগে ১ জুলাই ব্যাটারি রিকশার চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু কেসিসির সাধারণ সভায় সব কাউন্সিলররা তিন মাস সময় বাড়ানোর অনুরোধ করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সময় বাড়ানো হয়। তবে এবার আর সময় বাড়ানো হবে না। ইজিবাইকের বিষয়ে তিনি বলেন, ইজিবাইক চলাচলের অনুমতি দেওয়ার সব কার্যক্রম প্রায় শেষের পথে। আগামী ১ অক্টোবর থেকে নির্দিষ্ট রং করা দেখেই ইজিবাইক চলাচলের অনুমতিপত্র দেওয়া হবে।