উদ্বোধনের পরও চালু হলো না

শেরপুরে নবনির্মিত ২৫০ শয্যার জেলা সদর হাসপাতাল ভবন।  ছবি: প্রথম আলো
শেরপুরে নবনির্মিত ২৫০ শয্যার জেলা সদর হাসপাতাল ভবন। ছবি: প্রথম আলো

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধন ঘোষণার দীর্ঘ ১০ মাস পরও চালু হয়নি নবনির্মিত ২৫০ শয্যার শেরপুর জেলা সদর হাসপাতাল ভবন। ফলে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে শয্যাসংকটের কারণে অনেক রোগীকে হাসপাতালের বর্তমান ভবনের মেঝে কিংবা বারান্দায় চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।

নবনির্মিত ভবনটির নির্মাণকারী সংস্থা গণপূর্ত বিভাগ আর স্বাস্থ্য বিভাগের মধ্যে মতানৈক্যের কারণে ভবনটি হস্তান্তর ও হাসপাতালটি চালুকরণে সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘসূত্রতা। স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, নবনির্মিত ভবনে বেশ কিছু ত্রুটি থাকায় ভবনটি গ্রহণ করা যাচ্ছে না। এ কারণে ২৫০ শয্যার হাসপাতালটি চালু করা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘসূত্রতা। আর গণপূর্ত বিভাগ বলছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রণীত নকশা অনুযায়ী ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে গণপূর্ত বিভাগের কোনো হাত নেই।

ময়মনসিংহ বিভাগ উন্নয়ন পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বলেন, উদ্বোধনের দীর্ঘ ১০ মাসেও চালু না হওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক। ভবনটি যত দ্রুত চালু করা যায়, ততই শেরপুরবাসীর জন্য মঙ্গল।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন শেরপুর জেলা শাখার সভাপতি এম এ বারেক বলেন, নবনির্মিত ভবনে ত্রুটি বা সমস্যার কারণে যদি এটির চালুর প্রক্রিয়া থেমে থাকে, তবে তা অনভিপ্রেত। স্বাস্থ্য ও গণপূর্ত দুই বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তদের উদ্যোগ নিয়ে এসব ত্রুটি বা সমস্যার সমাধান করে জনস্বার্থে দ্রুত ভবনটি চালু করা দরকার।

শেরপুর জেলার ১৫ লাখ অধিবাসী ছাড়াও পার্শ্ববর্তী জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ, সানন্দবাড়ী ও ইসলামপুর উপজেলা এবং কুড়িগ্রামের রাজীবপুর ও রৌমারী উপজেলার বিপুলসংখ্যক মানুষ চিকিৎসার জন্য শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালের ওপর নির্ভরশীল। বর্তমানে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট এ হাসপাতালের অন্তর্বিভাগে গড়ে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৩৫০ জন রোগী ভর্তি থাকে। ফলে শয্যা ছাড়াও অন্তর্বিভাগের মেঝে, বারান্দা ও সিঁড়িসংলগ্ন স্থানে রোগীদের শয্যা পেতে চিকিৎসা নিতে হয়।

রোগীদের এ দুর্ভোগ লাঘবে ও জেলাবাসীর উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার ১০০ শয্যার জেলা সদর হাসপাতালটি ২৫০ শয্যায় উন্নীত করে। এরপর শহরের নারায়ণপুর এলাকায় জেলা সদর হাসপাতালের পাশে ১ একর ১০ শতাংশ জমির ওপর ৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮ তলা ভবনের প্রকল্প হাতে নেয় গণপূর্ত অধিদপ্তর। ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর জাতীয় সংসদের হুইপ ও স্থানীয় সাংসদ জেলা সদর হাসপাতালের নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তিন বছরে প্রকল্পটির বাস্তবায়নের কাজ শেষ হয়। ২০১৮ সালের ২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহরে সফরে এলে ২৫০ শয্যার শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালসহ শেরপুরের বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

কিন্তু উদ্বোধন ঘোষণার দীর্ঘ ১০ মাস পরও চালু হয়নি নবনির্মিত ভবনে জেলা সদর হাসপাতালের কার্যক্রম। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও গণপূর্ত বিভাগের মতবিরোধে ঝুলে আছে চালু করার প্রক্রিয়া।

এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ও হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. রেজাউল করিম গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, নবনির্মিত এ ভবনে বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। বিশেষ করে হৃদ্‌রোগীদের ওয়ার্ডে কোনো ওয়াশরুম নেই। এ ভবনে কমন বাথরুম ছাড়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের বসার কক্ষে কোনো সংযুক্ত বাথরুম নেই। এমনকি একজন রোগীকে দেখার পর সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের হাত ধোয়ার জন্য কোনো বেসিনও নেই। এ ছাড়া অস্ত্রোপচার কক্ষেও রয়েছে সমস্যা। এসব ব্যাপারে হাসপাতালের চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত সার্ভে বোর্ড প্রতিবেদন দিয়েছে। এসব সমস্যা সমাধান করার জন্য গণপূর্ত বিভাগকে জানানো হয়েছে। সমস্যাগুলো সমাধান করা হলেই ভবনটি গ্রহণ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, জেলা সদর হাসপাতালের নবনির্মিত দৃষ্টিনন্দন ভবনে আইসিইউ, সিসিইউসহ আধুনিক সব ধরনের চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা রাখা রয়েছে। ভবনটি হস্তান্তর করলেই জনগণ প্রকৃত সেবা ভোগ করতে পারবে। ভবনটি হস্তান্তর ও গ্রহণের জন্য একাধিকবার জেলা স্বাস্থ্য বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ভবনের কিছু ত্রুটি ও সমস্যার কথা বলে তারা ভবনটি এখনো গ্রহণ করছে না।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রণীত নকশা অনুযায়ী ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে গণপূর্ত বিভাগের কোনো হাত নেই। তবে অভ্যন্তরীণ ত্রুটি বা সমস্যাগুলো সমাধানের ব্যাপারে সিভিল সার্জনের সঙ্গে আলোচনা করে শিগগিরই ভবনটি হস্তান্তরে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।