জাবি উপাচার্যের 'মিথ্যাচারের' প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) চলমান উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের বিষয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে উপাচার্য ‘মিথ্যাচার’ করেছেন—এমন অভিযোগে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীদের একাংশ।

আজ রোববার দুপুর একটায় ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে থেকে মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি কয়েকটি সড়ক, অনুষদ ভবন ও প্রশাসনিক ভবন ঘুরে মুরাদ চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ৪৪৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ শুরু হয়েছে। দুটি কারণে এসব কাজ ঘিরে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। প্রথমত, ‘পূর্ণাঙ্গ মহাপরিকল্পনা’ ছাড়াই এসব উন্নয়নকাজ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশের ক্ষতি করা হচ্ছে বলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি অংশ অভিযোগ করেছে। দ্বিতীয়ত, উপাচার্য ফারজানা ইসলামের মধ্যস্থতায় ছাত্রলীগের নেতাদের বড় অঙ্কের আর্থিক সুবিধা দেওয়া সংক্রান্ত আরেকটি অভিযোগ।

এসব বিষয়ের প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একাংশ আন্দোলন করতে শুরু করেন। গত বৃহস্পতিবার উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠকের পর আন্দোলন সাময়িকভাবে স্থগিত করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বৈঠকে উপাচার্যের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগকে টাকা দেওয়ার অভিযোগের তদন্তের বিষয়ে আগামী বুধবার পর্যন্ত সময় নিয়েছিলেন উপাচার্য। এর আগে আন্দোলনকারীদের কোনো কর্মসূচি পালনের কথা ছিল না। তবে ‘উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগকে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা ভাগ বাঁটোয়ারা করে দিয়েছেন’—ছাত্রলীগের আগের কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা গোলাম রাব্বানীর এমন বক্তব্য এবং গতকাল শনিবার দুপুরে সাংবাদিকদের কাছে দুর্নীতি তদন্তের জন্য উপাচার্যের সময় নেওয়ার প্রেক্ষাপটে আবার আন্দোলন শুরু করেছেন তাঁরা।

সমাবেশে ছাত্র ইউনিয়নের কার্যকরী সদস্য রাকিবুল হক বলেন, ‘উপাচার্য আমাদের বলেছিলেন টাকা লেনদেনের অভিযোগের বিষয়ে কীভাবে তদন্ত প্রক্রিয়া আগানো যায়, সে বিষয়ে তিনি আইনজ্ঞদের কাছে পরামর্শ নেবেন।। এ জন্য তাঁর তিন দিন সময় লাগবে। আমরা সময় দিয়েছি। কিন্তু গতকাল শনিবার তিনি সাংবাদিকদের কাছে বলেছেন, আন্দোলনকারীদের কাছ থেকে তিনি সময় নিয়েছেন, নিজেই নিজের বিরুদ্ধে মামলা করা যায় কিনা সে বিষয়ে জানতে। তিনি বলেছেন, আমরা নাকি উন্নয়নবিরোধী এবং তাঁকে দুর্নীতিবাজ বানানোর চেষ্টা করছি। এই নির্লজ্জ মিথ্যাচার আমরা মানি না।’

জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মারুফ বিন মোজাম্মেল বলেন, ‘গণমাধ্যমের খবর বলছে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা শোভন-রাব্বানীর পদচ্যুত হওয়ার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। যে দুর্নীতির অভিযোগে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের পদত্যাগ করতে হয়, সেই দুর্নীতির সুষ্ঠু তদন্ত অবশ্যই করতে হবে।’

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাংগঠনিক সম্পাদক শোভন রহমান বলেন, ‘উপাচার্যের কাছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ টাকা দাবি করেছে সেটা তিনি এত দিন কেন প্রকাশ করেননি কেন? দুজন ব্যক্তি বাসায় এসে চাঁদা দাবি করল আর তিনি সেটি চেপে গেলেন। তাদের বিরুদ্ধে কেন তিনি কেন আইনি ব্যবস্থা নিলেন না? এত দিন পর কি নিজের দুর্নীতি ঢাকতে অন্যের ওপর দোষ চাপিয়ে দিলেন তিনি? আমরা এসব প্রশ্নের উত্তর চাই।’

সমাবেশে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্কসবাদী) বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাহাথির মোহাম্মদ বলেন, উপাচার্য টাকা লেনদেনের অভিযোগের তদন্তের দাবি বাস্তবায়ন না করলে তাঁকে দাবি মেনে নিতে বাধ্য করা হবে। সমাবেশে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্কসবাদী) বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সুদীপ্ত দের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার মুখপাত্র আরমানুল ইসলাম খান বক্তব্য দেন।