সময় ও ব্যয় কমাচ্ছে ই-নামজারি

ভূমি মন্ত্রণালয়
ভূমি মন্ত্রণালয়

অনলাইনে ভূমির নামজারি বা ই–নামজারিতে সেবাপ্রার্থীদের ভূমি অফিসে যাওয়ার হার এবং ভূমি অফিসে ব্যয় করা সময়ের হার কমছে। সেবা গ্রহণের সময় ও পরিদর্শন কমার ফলে ব্যয়ও কমছে। এতে নাগরিক সন্তুষ্টি বাড়ছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষক দলের গবেষণায় এ চিত্র উঠে এসেছে। বিশ্ববিদ্যায়লটির পিএইচডি আবেদনকারী মার্টিন ম্যাটসন আজ সোমবার ভূমি মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তাঁদের গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন। ভূমি মন্ত্রণালয় এবং এটুআই-এর যৌথ আয়োজনে এই ফলাফল তুলে ধরা হয়। গবেষক দল গত বছরের এপ্রিল থেকে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে নামজারি সেবা ও ই-নামজারি সেবার বিষয়ে ১৫৫টি উপজেলায় এই গবেষণা করে।

জমি কিনলে বা অন্য কোনো উপায়ে জমির মালিক হয়ে থাকলে হালনাগাদ রেকর্ড সংশোধন করে নতুন মালিকের নামে জমি রেকর্ড করাকে নামজারি বলা হয়। এখন অনলাইনেও নামজারি করা যায়। এটিকে বলা হচ্ছে ই–নামজারি।

ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে পাইলট আকারে ই-নামজারি কার্যক্রম শুরু হয়। চলতি বছরের জুন থেকে দেশের ৪৮৫টি উপজেলা ভূমি অফিস ও সার্কেল অফিসে এবং ৩ হাজার ৬১৭টি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ই–নামজারি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সনাতন পদ্ধতিতে ৪৫ দিনের মধ্যে নামজারি করা হয়। আর অনলাইনে এ সেবা দেওয়া হয় ২৮ দিনের মধ্যে।

মার্কিন দলটির গবেষণায় দেখা গেছে, সনাতন পদ্ধতির চেয়ে ই-নামজারির ক্ষেত্রে সেবাপ্রার্থীদের উপজেলা ভূমি অফিস ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসে যাওয়ার হার ১৭ শতাংশ কম। এ ছাড়া ভূমি অফিসে সময় ব্যয় করার হারও ৭ শতাংশ কম। ই-নামজারির মাধ্যমে নামজারি সেবা প্রদানে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৪৫ দিনের ক্ষেত্রে ৩৬ শতাংশ সেবা প্রদানের সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ২৮ দিনের ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ সেবা প্রদানের সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, গত ১ জুলাই থেকে সারা দেশে ই-নামজারি কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। জনগণকে হয়রানি থেকে রেহাই দিয়ে সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ই–নামজারি চালু করা হয়েছে। গত এক বছরে নামজারির প্রায় ১০ লাখ আবেদন অনলাইনে দাখিল হয়েছে। এর মধ্যে ৬৫ শতাংশ অনলাইনে নিষ্পত্তি করা হয়েছে।

ভূমিমন্ত্রী বলেন, প্রতিবছর দেশে প্রায় ৪২ লাখ ভূমি রেজিস্ট্রেশন হয়। উত্তরাধিকার সূত্রে আরও ২০-২৫ লাখ নামজারির ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়। কিন্তু মালিকানা হালনাগাদ হয় ৩০-৩৫ লাখ। প্রচলিত পদ্ধতিতে প্রায় ৩০ লাখ ভূমি হস্তান্তর নামজারি/রেকর্ড হালনাগাদের বাইরে থেকে যায়। ই-নামজারির মাধ্যমে জনগণ এখন সহজে, দ্রুততম সময়ে ও নির্ভুলভাবে অনলাইনে নামজারি করতে পারছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে ভূমিমন্ত্রী বলেন, সার্ভার সমস্যার কারণে অনেক সময় অনলাইন সেবা ব্যাহত হয়। এ ছাড়া নতুন এই পদ্ধতির সঙ্গে সবার পরিচিত হতেও একটু সময় লাগবে। প্রান্তিক পর্যায়ে নিরবচ্ছিন্ন ব্রডব্যান্ড চালু না হলে পুরোপুরি ই-নামজারির সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ–সংযোগ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে সৌরবিদ্যুতের সংযোগের কথা চিন্তা করা হবেও বলেন জানান ভূমিমন্ত্রী।

সংবাদ সম্মেলনে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত সব জায়গায় অনলাইনে ভূমিসেবা বিস্তৃত করা যাবে। দেশে ডিজিটাল পরিষেবা বাড়ানোর লক্ষ্যে বিদ্যুৎ–সংযোগ নিশ্চিত করা, ইন্টারনেট সংযোগ বাড়ানো, সফটওয়্যার সিস্টেমের সল্যুশন উন্নয়ন ও ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেন্ট আধুনিকায়নে সরকার কাজ করছে।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান উম্মুল হাছনা ও এটুআইয়ের প্রকল্প পরিচালক মো. আবদুল মান্নান বক্তব্য দেন।