সরকারি গাছ কেটে বাইচের নৌকা

সরকারি গাছ কেটে নৌকা বানিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের লোকজন। গত শুক্রবার বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার ডোপলাপাড়া গ্রামে।  ছবি: প্রথম আলো
সরকারি গাছ কেটে নৌকা বানিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের লোকজন। গত শুক্রবার বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার ডোপলাপাড়া গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো

বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাদের বিরুদ্ধে সরকারি গাছ কাটার অভিযোগ উঠেছে। এসব গাছ দিয়ে তাঁরা বাইচের নৌকা তৈরি করেছেন। যদিও উপজেলার মধ্যে নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা আয়োজন করার মতো বড় কোনো জলাশয় নেই। প্রায় ৩ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে ৭২ (১০৮ ফুট) হাত দৈর্ঘ্যের একটি নৌকা।

শাজাহানপুর উপজেলার খোট্টাপাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন সড়ক থেকে অন্তত ১২টি গাছ কেটে নেওয়া হয়েছে এক মাসের ব্যবধানে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, খোট্টাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও শাজাহানপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আবদুল্লাহ আল ফারুক এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি গাজীউল হক গাছ কাটায় জড়িত।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, খোট্টাপাড়া ইউনিয়নের নারিল্যা মাঠে নৌকাবাইচে অংশ নেওয়ার জন্য নৌকা তৈরি করা হচ্ছে। নৌকা তৈরির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা জানান, এটি তৈরি করতে অন্তত ৩ লাখ টাকার কাঠসহ অন্যান্য সামগ্রী লাগছে। তবে নৌকা তৈরি করতে মাত্র ৫ হাজার টাকার অতিরিক্ত কাঠ কিনতে হয়েছে। অন্যান্য কাঠ সরকারি গাছ কেটে জোগান দিয়েছেন আওয়ামী লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতারা। এর মধ্যে ইউনিয়নের বোহাইল এলাকা নেংটারবাড়ির পাশ থেকে থেকে একটি মেহগনি, দুটি ইউক্যালিপটাস, জালশুকা এলাকা থেকে তিনটি ইউক্যালিপটাস, খোট্টাপাড়া গ্রাম, ভ্রমরকুটি ও খলিসাকান্দি গ্রাম
থেকে একটি করে শিশুগাছ কাটা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এসব গাছ অন্তত ২০ বছরের পুরোনো। সর্বশেষ গত শুক্রবার ইউনিয়নের ডোপলাপাড়া গ্রামের সড়কের পাশ থেকে তিনটি ইউক্যালিপটাসগাছ কেটেছেন চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল ফারুকের লোকজন। 

ইউনিয়নের ভান্ডারপাইকা গ্রামে গত শনিবার গিয়ে দেখা গেছে, কেটে নেওয়া গাছের গুঁড়ি খড়ির জন্য কুড়াল দিয়ে কাটছেন ওই গ্রামের বাসিন্দা মো. আলো (৪৫)। ওই স্থান থেকে তিনটি গাছ কাটা হয়েছে। তাঁর স্ত্রী নাজমা বেগম খড়িগুলো নিয়ে ওই সড়কেই শুকাচ্ছেন। ১০ থেকে ১৫টি গাছ এখনো সেখানে রয়েছে।

আলো জানান, ১৫ বছর আগে তাঁর বাবা নুর উদ্দিন মারা গেছেন। বেঁচে থাকতে তাঁর বাবাই এই গাছগুলো পাহারা দিতেন। গাছগুলো অনেক বড় আর মোটা ছিল। প্রতিটি গাছের দাম অন্তত ৩০ হাজার টাকা হবে। আলোর কথা শেষ হওয়ার আগেই গাছ কাটা নিয়ে কথা বলতে শুরু করলেন তাঁর স্ত্রী নাজমা। তিনি বলছিলেন, ‘গরিব লোক এই গাছগুলো কাটলে তাঁর জেল হতো। পুলিশ ধরে নিয়ে যেত। চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের লোকজন গাছ কেটে নিয়েছেন। এ কারণে কারও মাথাব্যথা নেই। শুনেছি গাছ কেটে নৌকা বানানো হচ্ছে।’

ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের তত্ত্বাবধানে নৌকা বানানো হচ্ছে ইউনিয়নের হরিতলা বাজারের নারিল্যা গ্রামের মাঠে। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, নৌকার কাজ শেষ। এখন রং করা বাকি। গ্রামের অন্তত ১০ জন বাসিন্দা সেখানে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন। নৌকা তৈরির কারিগরদের বাড়ি ধুনট উপজেলায়। তাঁরা চলে গেছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নৌকাটির দৈর্ঘ্য ৭২ হাত। রং করলেই কাজ শেষ হবে। 

সেখানেই কথা হয় জিয়াউল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি সঙ্গে। তিনি বলেন, আগে এলাকায় নদী বা বিল ছিল। এখন তো নেই। এই নৌকা আসলে বাইচ খেলার নাম করে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের নেতারা বানাচ্ছেন। 

জানতে চাইলে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি গাজীউল হক বলেন, ‘সড়কের গাছ কাটার সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমি কিছুই জানি না। আর সড়কের কাটা গাছ দিয়ে নৌকার কাজ হয় না। নৌকা তৈরিতে অন্য কাঠ দরকার হয়।’

ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল ফারুক বলেন, ‘সড়কে ভাঙাচোরা দু-একটা গাছ কাটা হয়েছে। গ্রামের লোকজন নৌকা বানাচ্ছেন। আমরা সেখানে কিছু টাকাপয়সা দিয়েছি। নৌকাবাইচের জন্য গ্রামের লোকজন এ নৌকা বানাচ্ছেন।’ 

শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. ফুয়ারা খাতুন বলেন, ওই ইউনিয়নে বিভিন্ন সময় গাছ কাটার অভিযোগ পেয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যানকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এখন অভিযোগ পাওয়া গেছে, চেয়ারম্যান নিজেই গাছ কাটছেন। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।