ফেসবুকে বিরুদ্ধ মত দিলেই বহিষ্কার করেন উপাচার্য

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য খোন্দকার নাসির উদ্দিন। ছবি: প্রথম আলো
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য খোন্দকার নাসির উদ্দিন। ছবি: প্রথম আলো

গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি) গত ছয় মাসে সাত শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বহিষ্কৃত ওই শিক্ষার্থীদের ‘অপরাধ’, ফেসবুকে বিরুদ্ধ মত জানিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন তাঁরা। পরে অবশ্য উপাচার্যের কাছে ক্ষমা চাওয়ায় তিনজনের বহিষ্কারাদেশ তুলে নেওয়া হয়।

এঁদের মধ্যে শ্রেণিকক্ষ অপরিষ্কার থাকার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস ও মন্তব্য (কমেন্ট) করায় ৪ সেপ্টেম্বর একই বিভাগের ছয় শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়। আর সবশেষ ১১ সেপ্টেম্বর ফেসবুকে শিক্ষকদের নিয়ে স্ট্যাটাস দেওয়া ও উপাচার্যের ফেসবুক আইডি হ্যাক করার অভিযোগ এনে আইন বিভাগের এক ছাত্রীকে বহিষ্কার করা হয়। তিনি একটি জাতীয় দৈনিকের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক হিসেবেও কর্মরত।

বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা হলেন ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হাবিবুল্লা, মো. রাশেদ হাসান, মুনিম ইসলাম, ঝিলাম হালদার, ফাহমিদা বৃষ্টি, দেবব্রত রায় এবং আইন বিভাগের ফাতেমা-তুজ-জিনিয়া। এঁদের মধ্যে জিনিয়াকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। বাকি ছয়জনের মধ্যে হাবিবুল্লা নিয়নকে এক বছর (দুই সেমিস্টার) ও অন্য পাঁচজনকে ছয় মাসের জন্য (এক সেমিস্টার) বহিষ্কার করা হয়।

ফেসবুকে লেখার তিন মাস পর বহিষ্কার করা হয় ইইই বিভাগের ছয় শিক্ষার্থীকে। বহিষ্কারাদেশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে নিজেদের পক্ষে যৌক্তিক লিখিত জবাব দিতেও বলা হয়েছিল। পরে উপাচার্যের কাছে ক্ষমা চাওয়ায় ও অভিভাবকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তিন শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ তুলে নেওয়া হয়।

জানতে চাইলে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের একজন ঝিলাম হালদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘শ্রেণিকক্ষ অপরিষ্কার থাকার বিষয়টি নিয়ে আমাদের সেমিস্টারের হাবিবুল্লা নিয়ন ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিল। আমরা পাঁচজন সেটিতে সমর্থন করে মন্তব্য করেছিলাম। কেবল এ কারণে আমাকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়। পরে ভুল স্বীকার করে উপাচার্য স্যারের কাছে আবেদন করলে আমাদের তিনজনের বিরুদ্ধে বহিষ্কারাদেশ তুলে নেন।’

এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়া ও উপাচার্যের ফেসবুক আইডি হ্যাক করার অভিযোগ এনে ১১ সেপ্টেম্বর আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফাতেমা-তুজ-জিনিয়াকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। তিনি দ্য ডেইলি সান পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করেন। জিনিয়াকে বহিষ্কারের ব্যাখ্যা দিয়ে আজ মঙ্গলবার উপাচার্য খোন্দকার নাসির উদ্দিন বলেছেন, আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ফেসবুক ও ই-মেইল আইডি হ্যাক করেছেন। এ ছাড়া তিনি ভর্তি পরীক্ষার ওয়েবসাইট হ্যাক করে পরীক্ষা বানচালের ষড়যন্ত্র করেছেন। ওই ছাত্রী দুবার তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করেছেন বলেও দাবি করেন উপাচার্য।

ফাতেমা-তুজ-জিনিয়া প্রথম আলোকে বলেন, আমাকে যখন বহিষ্কারের চিঠি দেওয়া হয় সেখানে লেখা হয়েছে আমি উপাচার্যের ফেসবুক হ্যাক করার হুমকি দিয়েছি। কিন্তু আজ বলা হচ্ছে আমি হ্যাক করেছি। তাহলে কোনটা ঠিক। ফেসবুক কিভাবে হ্যাক করতে হয় সেটা তো আমার জানাই নেই। এই শিক্ষার্থী বলেন, আমাকে উপাচার্য স্যার ক্ষমা চাইতে বলেছেন। কিন্তু আমি তো কোনো অপরাধই করেনি। ক্ষমা চাইব কেন?  

এর আগে গত ১৫ মে ধানের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার দাবিতে মানববন্ধন করায় ১৪ শিক্ষার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রফেসর মো. নূরউদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত ওই নোটিশে বলা হয়, প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া সরকার ও প্রশাসনবিরোধী প্ল্যাকার্ড-ফেস্টুন বহন ও উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ায় তাঁদের কারণ দর্শানো নোটিশ পাঠানো হয়। তবে শিক্ষার্থীরা ভুল স্বীকার করে নেওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সভাপতি রবীন্দ্রনাথ অধিকারী প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি নিয়মনীতি রয়েছে। সেই নিয়ম না মেনে বশেমুরবিপ্রবির উপাচার্য যেভাবে শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করছেন, তাতে শিক্ষার্থীদের বাক্‌–স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এই ঘটনার নিন্দা জানাই।’

বহিষ্কারের বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য খোন্দকার নাসির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী শিক্ষকদের নাম ধরে ডাকা ও ফেসবুক আইডি হ্যাক করার কাজে সহায়তার মতো কাজ করে। তাদের সতর্ক করার জন্যই সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। তারা তো আমার সন্তানের মতোই। পরে ক্ষমা চাওয়ায় কয়েকজনের বহিষ্কারাদেশ তুলে নেওয়া হয়।’