বিএনপি নেতা শোকরানাকে দুদকের চিঠি

মো. শোকরানা
মো. শোকরানা

বগুড়া জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা মো. শোকরানার সম্পদের হিসাব চেয়ে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। চিঠিতে দুদক বলেছে, প্রাথমিক অনুসন্ধানে তাঁর বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ থাকার তথ্য মেলায় এই নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, আজ মঙ্গলবার সংস্থার পরিচালক কাজী শফিকুল আলমের সই করা নোটিশ শোকরানার বগুড়া সদরের ছিলিমপুর ঠিকানায় পাঠানো হয়েছে। নোটিশে তাঁকে আগামী ২১ কার্যদিবসের মধ্যে সম্পদবিবরণী দাখিল করতে বলা হয়েছে।

নোটিশে বলা হয়, প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রাথমিক অনুসন্ধান করে কমিশনের স্থির বিশ্বাস জন্মেছে যে তিনি জ্ঞাত আয়বহির্ভূত স্বনামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন। তাই নোটিশ পাওয়ার ২১ কার্যদিবসের মধ্যে তাঁর নিজের, নির্ভরশীল ব্যক্তিবর্গের যাবতীয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি, দায়-দেনা, আয়ের উৎস ও তা অর্জনের বিস্তারিত বিবরণ নির্ধারিত ফরমে দাখিল করতে বলা হয়েছে।

বিএনপির এই নেতার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করছেন দুদকের বগুড়া সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. মনিরুজ্জামান।

মোহাম্মদ শোকরানার বিরুদ্ধে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বহুল আলোচিত ডাল কেলেঙ্কারি এবং ত্রাণের কম্বল মজুত করার অভিযোগে মামলা হয়। ২০০৭ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি যৌথ বাহিনী শোকরানার ১৫টি গুদাম থেকে সাড়ে ৫ কোটি টাকা মূল্যের সাড়ে ১৮ হাজার বস্তা মসুর ডাল এবং বিপুল পরিমাণ ত্রাণের কম্বল জব্দ করে। তখন শোকরানা গ্রেপ্তারও হন। ডাল মজুত করে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির অভিযোগে বিশেষ ক্ষমতা আইনে শোকরানা ও তাঁর সহযোগী পরিমল কুমার সিংয়ের বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় মামলা হয়। বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলাটির বিচারকাজ শুরুও হয়। পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০১১ সালের ২১ নভেম্বর ‘রাজনৈতিক হয়রানিমূলক’ বিবেচনায় মামলাটি প্রত্যাহার করা হয়।

১৯৭২ থেকে ’৭৫ পর্যন্ত শোকরানা যুবলীগের ছত্রচ্ছায়ায় বগুড়া শহরে বিভিন্ন অপরাধের নেতৃত্বে ছিলেন বলে অভিযোগ আছে। বগুড়ার কিবরিয়া হত্যার ঘটনায় তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। ওই মামলায় তিনি সোয়া ছয় বছর জেল খেটেছেন।

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট তিনি গ্রেপ্তার হন। ১৯৮১ সালে বিচারপতি আবদুস সাত্তার ক্ষমতায় এলে তিনি সাধারণ ক্ষমায় ‘মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে মুক্তি পান। এরপর কিছুদিন নিষ্ক্রিয় থাকার পর আশির দশকে এরশাদের হাত ধরে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। তখন জাতীয় পার্টির বগুড়া শহর কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯৯ সালে তারেক রহমানের হাত ধরে বিএনপিতে যোগ দেন শোকরানা।