২৬ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

যশোর শিক্ষা বোর্ড
যশোর শিক্ষা বোর্ড

এ বছর এইচএসসির ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে ১৭ জুলাই। উত্তরপত্র পুনর্নিরীক্ষার ফলাফলও প্রকাশিত হয়ে গেছে প্রায় এক মাস। কিন্তু এখনো নিজেদের ভাগ্য জানতে পারেননি খুলনার পাইকগাছা উপজেলার দুটি ও সাতক্ষীরার তালা উপজেলার একটি কলেজের ২৬ জন পরীক্ষার্থী। তাঁদের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

কলেজ তিনটি হলো পাইকগাছার চাঁদখালী মহাবিদ্যালয় ও রাড়ুলি আর কে বি কে হরিশচন্দ্র কলেজিয়েট স্কুল এবং তালার শালিখা কলেজ। ওই তিন কলেজের পরীক্ষার কেন্দ্র ছিল রাড়ুলি আর কে বি কে হরিশচন্দ্র কলেজিয়েট স্কুল। ওই কেন্দ্রের তিন কলেজের ২৬ পরীক্ষার্থীর ফলাফল এখনো প্রকাশ করেনি যশোর শিক্ষা বোর্ড। তাঁদের ফলাফল স্থগিত রাখা হয়েছে।

যেহেতু ফলাফল প্রকাশিত হয়নি, তাই ওই শিক্ষার্থীরা কী করবেন, তা বুঝে উঠতে পারছেন না। পরীক্ষার জন্য আবার নতুন করে পড়াশোনা শুরু করবেন কি না, তা নিয়ে রয়েছেন দ্বিধায়। অন্যদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার আবেদনের সময়ও প্রায় শেষ হয়ে গেছে। তাই পরীক্ষার ফলাফল ভালো হলেও এ বছর কোথাও ভর্তি হওয়া যাবে না বলে মনে করছেন তাঁরা। এমন পরিস্থিতিতে ওই শিক্ষার্থীদের প্রতিটি মুহূর্ত কাটছে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে।

তবে বোর্ড কর্তৃপক্ষ বলছে, ওই শিক্ষার্থীদের ইংরেজি প্রথম পত্রের উত্তরপত্রে দুই রকম হাতের লেখা পাওয়া গেছে। যে শিক্ষক উত্তরপত্র মূল্যায়ন করেছেন, তাঁর কাছেই ওই অসংগতি ধরা পড়েছে। ওই শিক্ষকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই পরীক্ষার্থীদের ফলাফল স্থগিত করা হয়েছে। ঘটনাটি তদন্তের জন্য বোর্ডের শৃঙ্খলা কমিটির পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। ওই তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরই ফলাফল প্রকাশের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গত রোববার ওই শিক্ষার্থীরা খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে কয়েকজন অভিভাবকও উপস্থিত ছিলেন। ভুক্তভোগী সব পরীক্ষার্থীর পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পাইকগাছার চাঁদখালী কলেজের সাদিয়া তানজিম। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ১৭ জুলাই সব বোর্ডের ফলাফল প্রকাশিত হয়। তখন তাঁরা জানতে পারেন ওই তিন কলেজের ২৬ জনের ফলাফল ‘রিপোর্টেড’ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কলেজের অধ্যক্ষের কাছে গিয়ে ব্যাপারটি জানতে চাইলে তিনিও কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। জানতে চাইলে কেন্দ্রসচিবও ফলাফল স্থগিত হওয়ার ব্যাপারে কিছুই জানাতে পারেননি। ওই ব্যাপারে পরে বোর্ডের কাছে লিখিত আবেদন করা হয়। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বোর্ড থেকে জানা গেছে, তাঁদের উত্তরপত্রে দুই রকম হাতের লেখা রয়েছে। এ কারণে তাঁদের ফলাফল স্থগিত রাখা হয়েছে। কিন্তু কীভাবে তাঁদের উত্তরপত্রে দুই রকম হাতের লেখা থাকল, তা তাঁরা বুঝতে পারছেন না। আর যদি এমনটিই হয়, তাহলে কোনো শিক্ষক হয়তো জালিয়াতি করে তাঁদের খাতায় কিছু লিখেছেন বলে দাবি করেন তাঁরা।

ওই ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। গত ৩ আগস্ট ওই কমিটি পরীক্ষার কেন্দ্র কলেজে গিয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু তদন্ত করে যাওয়ার প্রায় দেড় মাস পার হয়ে গেলেও তাঁদের ফলাফলের ব্যাপারে কোনো কিছুই জানাচ্ছে না বোর্ড। ওই পরীক্ষা কেন্দ্রের কেন্দ্রসচিব ছিলেনঅধ্যক্ষ গোপাল চন্দ্র ঘোষ। তিনি বলেন, কেন্দ্রটিতে ওই তিনটি কলেজের কয়েক শ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু শুধু ওই কয়েকজন পরীক্ষার্থীর ফলাফল কেন স্থগিত হলো, তা তাঁরা বুঝতে পারছেন না।

যশোর শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাধব চন্দ্র রুদ্র বলেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে এখনো তথ্য সংগ্রহ চলছে। সব তথ্য সংগ্রহ করে তদন্ত কমিটি কয়েক দিনের মধ্যেই বৈঠকে বসবে। ওই বৈঠকের পরপরই স্থগিত থাকা শিক্ষার্থীদের ফলাফল প্রকাশ করা হবে।