ডেঙ্গুতে মৃতদের ১৫ শতাংশের বয়স পাঁচ বছরের কম

প্রথম আলো ফাইল ছবি
প্রথম আলো ফাইল ছবি

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের প্রায় ১০ শতাংশ শিশু, যাদের বয়স পাঁচ বছরের নিচে। তবে এ বয়সী শিশুদের মৃত্যুহার ভর্তি রোগীর হারের চেয়ে বেশি।

সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস ও কন্ট্রোল রুম এবং রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা, বয়স বিশ্লেষণ করে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পাঁচ বছরের নিচে ৭ হাজার ২৭২ শিশু ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে, যা মোট রোগীর প্রায় ১০ শতাংশ। এ সময়ে ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া ৬৮ জনের মধ্যে ১০ শিশুর বয়স পাঁচ বছরের কম, এ হার ১৫ শতাংশ। তবে মোট শিশুমৃত্যুর হার ৩৭ শতাংশ।

আইইডিসিআর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু সন্দেহে ২০৩টি মৃত্যুর তথ্য পেয়েছে। এর মধ্যে ১১৬টি মৃত্যু পর্যালোচনা করে ৬৮টি মৃত্যু ডেঙ্গুজনিত বলে নিশ্চিত করেছে।

সামগ্রিকভাবে বয়স যত কম, মৃত্যুঝুঁকি তত বেশি উল্লেখ করে বারডেম জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিভাগের অধ্যাপক আবিদ হোসেন মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। সেই দিক থেকে কম বয়সী শিশুদের ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় বেশি। তবে এর সঙ্গে মৃত্যুহার কমা বা বৃদ্ধির কারণ যুক্ত আছে কি না, তা এখনো জানা যায়নি।

এই শিশু বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে রক্তনালি থেকে জলীয় অংশ বের হয়ে রক্তচাপ কমে যায়। এতে শিশুর মস্তিষ্ক, হার্ট, কিডনি, ফুসফুসে রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক থাকে না। আবার প্রোটিনের ঘাটতি ও প্লাটিলেট কমে যাওয়ার কারণে রক্তপাত হওয়ারও আশঙ্কা থাকে।

শক সিনড্রোমে মারা যাচ্ছে বেশি

পাঁচ বছরের নিচে ১০ শিশুর মৃত্যুর কারণ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এর মধ্যে সাতটি শিশুরই মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে। এ বয়সী শিশুরা হাসপাতালে আট দিনের বেশি চিকিৎসাধীন ছিল।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বরে বেশির ভাগ রোগীর মৃত্যু হয়েছিল। আর এবার মারা যাচ্ছে ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে। ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি ধরন বা সেরোটাইপ আছে—ডেনভি-১, ডেনভি-২, ডেনভি-৩, ডেনভি-৪। এবার ডেনভি-৩ তে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। এর উপসর্গ চিহ্নিত করা কঠিন ও জটিলতা বেশি বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।

>

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত শিশুদের মৃত্যুঝুঁকি বেশি
শিশুরা মূলত ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে মারা যাচ্ছে

শক সিনড্রোমে মৃত্যুর হার বেশি হওয়ার কারণ সুনির্দিষ্টভাবে বলা কঠিন উল্লেখ সম্পর্কে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা প্রথম আলোকে বলেন, প্রথমত মানুষের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে বলে ডেঙ্গু হেমোরেজিক মৃত্যু কমেছে। দ্বিতীয়ত, ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তারা একাধিক হাসপাতাল পরিবর্তন করেছে। অনেকে এ সময়ে মারা গেছে। এটা শক সিনড্রোমে মৃত্যু বৃদ্ধির একটি কারণ হতে পারে।

চার বছর বয়সী রুনা আক্তারকে গত ২৮ আগস্ট ঢাকা শিশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ভর্তির এক দিন পরে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটি মারা যায়। এই শিশুর মৃত্যুসনদে কারণ লেখা ডেঙ্গু শক সিনড্রোম। শিশুটির বাড়ি ঢাকার দোহারে। এই হাসপাতালে আনার আগে শিশুটিকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল।

সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকেরা জানান, ডেঙ্গু শক সিনড্রোমের লক্ষণ হচ্ছে রক্তের তরল অংশ অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণের মাধ্যমে শিরা-উপশিরা থেকে বাইরে চলে যায়। এতে শরীরে পানিশূন্যতার কারণে রোগী অচেতন হয়ে পড়ে।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের এপিডেমিওলজিস্ট কিংকর ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, ডেঙ্গু শক সিনড্রোমের লক্ষণ বাইরে থেকে বোঝা কঠিন। এ কারণে এতে বেশি মারা যাচ্ছে। রক্তের চাপ ও প্লাটিলেট দেখে শক সিনড্রোমের লক্ষণ বুঝতে হয়। তারপরেও ফ্লুইড (তরল) ব্যবস্থাপনা সঠিক না হলে মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যায়।