ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা

ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা বজলুল হকের বিরুদ্ধে গত ১২ জুন ঘুষ, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে মানববন্ধন করেছেন সাধারণ মানুষ। প্রথম আলো ফাইল ছবি
ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা বজলুল হকের বিরুদ্ধে গত ১২ জুন ঘুষ, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে মানববন্ধন করেছেন সাধারণ মানুষ। প্রথম আলো ফাইল ছবি

ঘুষ, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে প্রত্যাহার করা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা সদর ইউনিয়নের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা বজলুল হকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করেছে জেলা প্রশাসন। আগামী সোমবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এই মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

১৮ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী হাকিম তনিমা আফ্রাদের স্বাক্ষরিত এক চিঠি সূত্রে জানা গেছে, নাসিরনগর উপজেলা সদরের জহরলাল দেবের ছেলে মিহির দেব গংয়ের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রত্যাহার হওয়া নাসিরনগর সদর ইউনিয়নের সাবেক সহকারী ভূমি কর্মকর্তা বজলুল হকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করে জেলা প্রশাসন। আগামী সোমবার বিকেল চারটায় তনিমা আফ্রাদের কক্ষে হাজির হওয়ার জন্য বজলুল হককে নির্দেশ দেওয়া হয়। এ সমর মিহির গংকেও উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।

তনিমা আফ্রাদ প্রথম আলোকে বলেন, নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) ওই ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে স্থানীয় লোকজনের অভিযোগের ভিত্তিতে একটি বিবরণী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে পাঠান। সেটির আলোকে সম্প্রতি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) তাজিনা সারোয়ার ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করেন। আগামী সোমবার ওই মামলার পুনরায় শুনানি হবে। তিনি বলেন, আগের অভিযোগ তদন্ত হয়েছ। বিভাগীয় মামলায় অভিযোগ প্রমাণিত, তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১২ জুন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ইউএনও কার্যালয়ের সামনে বজলুল হকের বিরুদ্ধে ঘুষ, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন ভুক্তভোগী লোকজন।

মানববন্ধনে ১৯৭০ সালের ২১ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়ের একটি দলিল দেখিয়ে সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা মনোরঞ্জন গোপ বলেন, ৪০ শতক জায়গার নামজারি ও জমা খারিজের জন্য ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে আবেদন করলে নায়েব বজলুল হক (ভূমি কর্মকর্তা) দুই লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা না দেওয়ায় বজলুল হক তাঁকে অশ্রাব্য ভাষায় গালি দিয়ে অফিস থেকে বের করে দেন। মিহির দেব বলেন, ‘জমি খারিজের জন্য ভূমি কর্মকর্তা ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে খারিজ হবে না বলে জানান। ভূমি কর্মকর্তা আমার খারিজের সব কাগজপত্র অফিসের আলমারিতে তালাবদ্ধ করে রেখে দেন।’ তিনি বলেন, ‘ভূমি কর্মকর্তা স্থানীয় আওয়ামী লীগের কর্মী শিবলী চৌধুরীকে দিয়ে আমাকে গুম করারও হুমকি দেন।’

পরে ওই দিনই ইউএনও কার্যালয়ে একটি স্মারকলিপিও দেন ভুক্তভোগীরা। স্মারকলিপিতে বলা হয়, ন্যূনতম ২০ হাজার টাকা ছাড়া কোনো জমির খারিজ করেন না সদর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা বজলুল হক। আর কাগজপত্রে ত্রুটি থাকলে তিনি পাঁচগুণ টাকা আদায় করেন। অথচ বাংলাদেশ সরকার ভূমির খারিজের ফি নির্ধারণ করেছে ১ হাজার ১৫০ টাকা। চূড়ান্ত বিএস খতিয়ান আসার পরও দাগে সামান্য ভুল থাকলেও জমির মালিকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করেন তিনি। টাকা না দিলে এই ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা কোনো কাজ করেন না এবং কাগজপত্র আলমারিতে তালাবদ্ধ করে রেখে দেন। ২০০ টাকার খাজনার চেকের জন্য তিনি ৫ হাজার টাকা নিয়ে থাকেন। ভিপি জমির নামজারির জন্য তাঁকে দেড় লাখ টাকা দিতে হয়। বজলুল হক এর আগে নবীনগর উপজেলার বড়িকান্দি ইউনিয়নের ভূমি কর্মকর্তা ছিলেন। সেখানেও তাঁর দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। নবীনগরের মুক্তারামপুরের নুরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি বজলুল হকের অনিয়মের বিরুদ্ধে ঢাকায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে অভিযোগ করেন।

স্মারকলিপির একটি অনুলিপি চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়। এ দিকে মানববন্ধন ও অভিযোগের ঘটনায় ওই দিনই বজলুল হককে প্রত্যাহার করেন জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খাঁন। পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধে ঘুষ, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করতে কমিটি গঠন করে জেলা প্রশাসন। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ তদন্ত করার জন্য তনিমা আফ্রাদকে দায়িত্ব দেন জেলা প্রশাসক। একই সঙ্গে অভিযোগের বিষয়ে বজলুল হককে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। মানুষের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর ব্যাখ্যা ও জবাব চাওয়া হয়।

প্রসঙ্গত, গত ১ জুন ‘ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ’, ১৩ জুন ‘ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা বজলুলের বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগে মানববন্ধন’ শিরোনামে প্রথম আলোতে প্রতিবেদন ছাপা হয়। আর ১৩ জুন প্রথম আলোর অনলাইনে ‘ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা বজলুলকে কারণ দর্শানোর নোটিশ’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।