কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের চেয়ারম্যান শফিকুলের বিরুদ্ধে মামলা

ক্লাব থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হয় শফিকুল আলমকে। প্রথম আলো ফাইল ছবি
ক্লাব থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হয় শফিকুল আলমকে। প্রথম আলো ফাইল ছবি

রাজধানীর ধানমন্ডি কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের চেয়ারম্যান শফিকুল আলমের বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় মামলা করেছে র‍্যাব। অস্ত্র ও মাদক আইনে তাঁর বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়েছে। তাঁকে ধানমন্ডি থানার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব-২) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাল প্রথম আলোকে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

টানা এক ঘণ্টার অভিযানে গতকাল শুক্রবার রাতে কলাবাগান ক্রীড়া চক্র ক্লাব ভবন থেকে অস্ত্র, ইয়াবা, জুয়া খেলার সরঞ্জাম (কয়েন এবং ৫৭২টি প্লেয়িং কার্ড সেট) জব্দ করেছে র‍্যাব। এসব সরঞ্জাম ক্লাবটির সভাপতি শফিকুল আলমের অফিস কক্ষে পাওয়া যায়। জব্দ হওয়া বিদেশি পিস্তলটি অবৈধ ও এর কোনো লাইসেন্স নেই।

গতকাল তাঁর সঙ্গে ক্লাব থেকে হারুন, আনোয়ার, হাফিজুল ও লিটন নামে আরও চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা ক্লাবের স্টাফ। তবে শফিকুলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় তাদের পরিবারের জিম্মায় দিয়ে দেওয়া হয়েছে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের রাজনৈতিক পরিচয় জানতে চাইলে গতকাল র‍্যাব-২-এর অধিনায়ক বলেন, তাঁদের রাজনৈতিক পরিচয় ওপেন সিক্রেট। এটি মনে হয় সবাই জানেন।

র‌্যাব সূত্র জানায়, কলাবাগান ক্লাবই প্রথম আন্তর্জাতিক মানের ক্যাসিনো চালুর উদ্যোগ নেয়। তবে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ক্যাসিনো বন্ধ হয়ে যায়। কলাবাগান ক্লাবের আদলে প্রথমে ভিক্টোরিয়া ও পরে একে একে ওয়ান্ডারার্স, ফকিরাপুল ইয়ংমেনস ক্লাব, মুক্তিযোদ্ধা, মোহামেডান, আরামবাগে স্লট মেশিন বসে। তবে সেখানে যাতায়াত ছিল এমন একটি সূত্র প্রথম আলোকে জানায়, কলাবাগানে স্লট মেশিন জুয়ার জন্য আন্তর্জাতিক মানের বোর্ড, নেপাল থেকে প্রশিক্ষিত নারী-পুরুষদের নিয়ে আসা হয়। প্রথমে ক্লাবগুলোয় বাকারা (তাসের খেলা) নামের একটা খেলা হতো, পরে যুক্ত হয় রুলেট (চাকার মতো বোর্ড) এবং আরও কয়েকটি খেলা। এই ক্লাবের সভাপতি ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক পরিচালক নাজমুল করিম ওরফে টিঙ্কু। তাঁর সঙ্গে ছিলেন জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও মোহাম্মদপুরের ওয়ার্ড কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম। এখানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত শীর্ষ ইয়াবা কারবারি, পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তা, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মালিক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যাতায়াত ছিল। নাজমুল করিম মারা যাওয়ার পর টাকাপয়সা হস্তগত করায় মহল্লার রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদ শুরু হয়। এর সমাধান না হওয়ায় ক্লাবটি একপর্যায়ে বন্ধ হয়ে যায়। প্রতিদিন কলাবাগান ক্লাবের আয় ছিল প্রায় কোটি টাকা।

কলাবাগান ক্লাবের নিয়ন্ত্রণ ছিল শফিকুল আলমের হাতে। তিনি এলাকায় ফিরোজ নামে পরিচিত। একসময় তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ছিল। চাঁদপুরের একটি আসন থেকে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়নও চেয়েছিলেন।