মধুর ক্যানটিনে ছাত্রদলের নতুন কমিটির প্রথম দিন 'ভালো কাটেনি'

মধুর ক্যানটিনে একটি বাদে সব চেয়ার-টেবিল ছাত্রলীগের দখলে ছিল। একটি ফাঁকা টেবিলে ছাত্রদলের দুই শীর্ষ নেতা বসেন। এ সময় অন্য নেতা-কর্মীরা তাঁদের ঘিরে দাঁড়ান। মধুর ক্যানটিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ২২ সেপ্টেম্বর। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ।
মধুর ক্যানটিনে একটি বাদে সব চেয়ার-টেবিল ছাত্রলীগের দখলে ছিল। একটি ফাঁকা টেবিলে ছাত্রদলের দুই শীর্ষ নেতা বসেন। এ সময় অন্য নেতা-কর্মীরা তাঁদের ঘিরে দাঁড়ান। মধুর ক্যানটিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ২২ সেপ্টেম্বর। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ।

ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নতুন দুই শীর্ষ নেতা আজ রোববার প্রথমবারের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে গিয়েছিলেন। তবে আগে থেকেই সেখানে থাকা ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের ‘অসৌজন্যমূলক আচরণ’ ও ‘পাল্টাপাল্টি স্লোগানে’ নতুন কমিটির প্রথম দিনটি ভালো কাটেনি বলে জানিয়েছেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা।

ছাত্রদলের নবনির্বাচিত সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আল মেহেদী তালুকদারের নেতৃত্বে দুই শতাধিক নেতা-কর্মী আজ বেলা ১১টার দিকে মধুর ক্যানটিনে যান। তাঁরা যাওয়ার আগেই মধুর ক্যানটিনের প্রায় সব টেবিল একত্র করে নেতা-কর্মীদের নিয়ে অবস্থানে ছিলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস। ছিলেন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনও। শুধু একটি ফাঁকা টেবিলে ছাত্রদলের দুই শীর্ষ নেতা বসেন আর নেতা-কর্মীরা তাঁদের ঘিরে দাঁড়ান।

মধুর ক্যানটিনে প্রবেশ করেই সেখানে থাকা ছাত্রদল নেতারা ছাত্রলীগ নেতা লেখক ভট্টাচার্য ও সনজিত চন্দ্র দাসের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করতে উদ্যোগী হন। লেখকের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করলেও সনজিতের অনাগ্রহের কারণে তাঁর সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করতে পারেননি ছাত্রদলের নেতারা।

ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ করে ‘ছাত্রদলের গুন্ডারা, হুঁশিয়ার সাবধান’ বলে স্লোগান দেন। ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরাও ‘খালেদা জিয়া, জিয়া খালেদা’ বলে পাল্টা স্লোগান দেন।

ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মধুর ক্যানটিনের বাইরে স্লোগানে সরব ছিলেন ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাও। ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তাঁরা ‘ঢাকা কলেজ ধন্য শেখ হাসিনার জন্য’, ‘ছাত্রদলের গুন্ডারা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ইত্যাদি বলে স্লোগান দেন।

ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে মিছিল নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে উপাচার্য কার্যালয়ে যান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ২২ সেপ্টেম্বর। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ।
ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে মিছিল নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে উপাচার্য কার্যালয়ে যান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ২২ সেপ্টেম্বর। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ।

এক ঘণ্টার মতো মধুর ক্যানটিনে কাটান ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে মিছিল নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে তাঁরা উপাচার্য কার্যালয়ে যান। উপাচার্যের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পর তাঁরা ফিরে যান।

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন সাংবাদিকদের বলেন, ক্যাম্পাসে আংশিক সহাবস্থান নিশ্চিত হয়েছে, পুরোপুরি নিশ্চিত হয়নি। হলগুলোতে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা এখনো থাকতে পারছেন না।

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্রলীগের কাছ থেকে আমরা সৌজন্যমূলক আচরণ প্রত্যাশা করেছিলাম, কিন্তু সেটি আমরা পাইনি। আমাদের কোনো অভিযোগ নেই। আশা করব, আগামী দিনগুলোতে আমরা সৌজন্যমূলক আচরণ পাব।’

অন্যদিকে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেছেন, তাঁদের পক্ষ থেকে ছাত্রদলের নতুন নেতৃত্বকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি ছিল। তবে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা ছাত্ররাজনীতির ঐতিহ্য না মানায় স্বাগত জানানো হয়নি।

সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিত খালেদা জিয়া ও ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার মূল পরিকল্পনাকারী তারেক রহমানের পক্ষে স্লোগান দিয়েছেন। এর মধ্যমে তাঁরা ছাত্ররাজনীতির ঐতিহ্যকে অবমাননা করেছেন, তবু আমরা ধৈর্যের সর্বোচ্চ সীমা বজায় রেখেছিলাম।’