রাস্তা এখন খাল

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সড়কের উন্নয়নকাজ শেষ না করে খুঁড়ে ফেলে রেখেছে। সড়কটি এখন পরিণত হয়েছে খালে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন কয়েকটি গ্রামের মানুষ। গতকাল বগুড়ার শেরপুর উপজেলার বিশালপুর ইউনিয়নের নয়াপানিসারা-তেঁতুলিয়া সড়কে।  প্রথম আলো
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সড়কের উন্নয়নকাজ শেষ না করে খুঁড়ে ফেলে রেখেছে। সড়কটি এখন পরিণত হয়েছে খালে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন কয়েকটি গ্রামের মানুষ। গতকাল বগুড়ার শেরপুর উপজেলার বিশালপুর ইউনিয়নের নয়াপানিসারা-তেঁতুলিয়া সড়কে। প্রথম আলো

বগুড়ার শেরপুর উপজেলার বিশালপুর ও শাহবন্দেগী ইউনিয়নে দুটি সড়কের উন্নয়নকাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে। কিন্তু দুটি সড়কেরই কাজ হয়েছে মাত্র ২০ শতাংশ করে। বিশালপুর ইউনিয়নের সড়কটি খুঁড়ে রাখা হয়েছে। চার মাস ধরে এ অবস্থায় পড়ে আছে সড়কটি। সড়কটির কোথাও কোথাও বর্তমানে খালে পরিণত হয়েছে। এতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে ছয় গ্রামের মানুষ।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিশালপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের নয়াপনিসারা থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত দুই কিলোমিটার সড়কের উন্নয়নকাজ শুরু করা হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বগুড়ার মঞ্জুরুল আলম মোহন অ্যান্ড অর্ক এন্টারপ্রাইজ কাজটি পায়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয় ২০১৮ সালের ২৭ ডিসেম্বরে। প্রতিষ্ঠানটি কাজ শুরু করে চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি। এই কাজ শেষ করার মেয়াদ ছিল ১৩ সেপ্টেম্বর।

উপজেলা প্রকৌশলী দপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী আবদুর রশিদ বলেন, বগুড়া-পাবনা সড়কের উন্নয়নের আওতায় ছিল ওই সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প। এ প্রকল্পের আওতায় রয়েছে নয়াপানিসারা থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত দুই কিলোমিটার ও শাহবন্দেগী ইউনিয়নের জাতীয় মহাসড়ক থেকে কৃষ্টপুর পর্যন্ত ৭৬৩ মিটার সড়ক উন্নয়ন। দুটি সড়কেরই কাজটি পায় একই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি নির্দিষ্ট সময়ে ওই দুটি সড়কে ১৩টি ‘ইউড্রেন’, দুটি কালভার্টসহ দুটি সড়কের ২ হাজার ৭৬৩ মিটার বক্স কাটিংয়ের কাজ শেষ করতে পেরেছে। এরপর সড়কের কোনো উন্নয়নকাজ হয়নি। কাজ শেষ না করে ফেলে রাখা হয়েছে অন্তত চার মাস ধরে। ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি ২৪ লাখ ৮৯ হাজার ৫১৭ টাকার কাজের বিপরীতে বিল তুলেছে প্রায় ১৮ লাখ টাকা।

উপজেলার বিশালপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য শহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নয়াপানিসারা থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত সড়কের উন্নয়নকাজ শেষ না করে ফেলে রাখায় সড়কের পাশের ছয়টি গ্রামের অন্তত দুই হাজার কৃষক পরিবার যাতায়াতে দুর্ভোগে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজনকে তাঁরা কাজ করতে দেখছেন না।

শাহবন্দেগী ইউনিয়নের পাঁচজন বাসিন্দা বলেন, এই সড়কের দুই পাশে রয়েছে একাধিক ধানের চাতাল। সড়কের মাটি খুঁড়ে ফেলে রাখায় এই এলাকার ব্যবসায়ীসহ স্থানীয় বাসিন্দারা চরম দুর্ভোগে পড়েছে।

গতকাল রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, নয়াপানিসারা থেকে তেঁতুলিয়া সড়কটির কিছু অংশে বৃষ্টির পানি জমে খালে পরিণত হয়েছে। সড়কের দুই কিলোমিটারজুড়ে মাটি খুঁড়ে রাখায় পুরো সড়কটি কর্দমাক্ত হয়ে গেছে। শাহবন্দেগী ইউনিয়নের জাতীয় মহাসড়ক থেকে কৃষ্টপুর পর্যন্ত সড়কেরও একই অবস্থা।

রাস্তার কোথাও কোথাও জমেছে হাঁটুসমান কাদা। শেরপুরের বিশালপুর ইউনিয়নের নয়াপানিসারা-তেঁতুলিয়া সড়কে।  প্রথম আলো
রাস্তার কোথাও কোথাও জমেছে হাঁটুসমান কাদা। শেরপুরের বিশালপুর ইউনিয়নের নয়াপানিসারা-তেঁতুলিয়া সড়কে। প্রথম আলো

বিশালপুরের পাবনাপাড়া গ্রামের কৃষক মোকছেদ আলী বলেন, সড়ক দিয়ে হেঁটে পর্যন্ত যাওয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে। চলে না কোনো ছোট গাড়ি। তাঁরা কৃষিপণ্য স্থানীয় বাজারে তুলতে পারেন না। শ্রমিক দিয়ে পিঠে করে এক বস্তা ধান বাজারে তুলতে তাঁদের প্রতি মণে ২৫ টাকা করে বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে।

পানিসারা দক্ষিণপাড়া গ্রামের আবদুস সালাম বলেন, সড়কটি পাকা করার কাজ যখন শুরু হয়, তখন মনে হয়েছিল পাকা সড়কে এবার গ্রামের মানুষদের কষ্ট দূর হবে। এখন তাঁরা দেখছেন, কষ্ট আরও বেড়ে গেছে।

গতকাল বিকেলে এই দুটি সড়কের উন্নয়নকাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি মো. বাবলা প্রথম আলোকে বলেন, তিন মাস ধরে বৃষ্টির কারণে নির্দিষ্ট সময়ে তাঁরা সড়কের কাজ শেষ করতে পারেননি। তাঁরা দ্রুতই সড়কের কাজ শেষ করবেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী মো. নূর মোহাম্মদ বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ইচ্ছা থাকলে বর্ষার আগেই কাজ শেষ করতে পারত। সড়কের উন্নয়নকাজ ফেলে রাখায় মানুষের কষ্ট বেড়েছে। এ ছাড়া বেঁধে দেওয়া সময় শেষ হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সময় বাড়ানোর কোনো আবেদনও করেনি।