সরাইলে নদে স্তূপ করে বালু বিক্রি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল-অরুয়াইল সড়কের তিতাস সেতুর ১০০ মিটারের মধ্যে পাকশিমুল এলাকায় তিতাস নদে বালুর স্তূপ। গত শুক্রবার বিকেলে।  প্রথম আলো
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল-অরুয়াইল সড়কের তিতাস সেতুর ১০০ মিটারের মধ্যে পাকশিমুল এলাকায় তিতাস নদে বালুর স্তূপ। গত শুক্রবার বিকেলে। প্রথম আলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার উত্তর প্রান্ত দিয়ে বয়ে গেছে তিতাস নদ। এর প্রধান স্রোতোধারাটি পাকশিমুল ও অরুয়াইল ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মেঘনায় গিয়ে মিশেছে। সরাইল-অরুয়াইল সড়কের তিতাস নদের পাকশিমুল আর অরুয়াইল ইউনিয়নের মাঝখানে ৯ বছর আগে নির্মাণ করা হয় তিতাস সেতু। সেই সেতুর ১০০ মিটারের মধ্যে পাকশিমুল এলাকায় তিতাস নদ অবৈধভাবে ভরাট করে চলছে বালুর ব্যবসা। 

গত শুক্রবার দেখা গেছে, স্থানটি পাকশিমুল ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের সামনে ৫০ মিটারে মধ্যে অবস্থিত। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, পাকশিমুল এলাকায় পাঁচ বছর ধরে তিতাস নদের বিরাট অংশ ভরাট করে বালুর ব্যবসা করে আসছেন আকবর আলী নামের এক ব্যক্তি। তিনি পাকশিমুল গ্রামের বাসিন্দা। আকবর আলী এখানে বালুর ব্যবসা করার জন্য নদের প্রায় ৪০ শতাংশ ভরাট করে দখলে রেখেছেন। এ জন্য তিনি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো অনুমোদনও নেননি। প্রশাসন তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয় না। তা ছাড়া তিনি প্রভাবশালী ব্যক্তি হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে সাহস পান না। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ৯ বছর আগে এখানে সেতু নির্মাণের আগে জায়গাটি পাকশিমুল এলাকার নৌকাঘাট হিসেবে ব্যবহৃত হতো। পাকশিমুল ইউনিয়নের লোকজন এখান থেকেই নৌকায় চড়ে পাশের অরুয়াইল বাজার কিংবা আশুগঞ্জ ও ভৈরববাজার বন্দরে যাতায়াত করত। সেই সঙ্গে কৃষিপণ্য ওঠানো-নামানো হতো। সেতু নির্মাণের পর জায়গাটি কিছুটা অব্যবহৃত ছিল। মাঝেমধ্যে কার্গো বা ইঞ্জিনচালিত বড় নৌকায় পণ্য ওঠানো-নামানো করতেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কিন্তু পাঁচ বছর আগে আকবর আলী জায়গাটি দখলে নেন। সেই সঙ্গে তিতাস নদের একাংশ ভরাট করেন তিনি। সেখানে তিনি বিশাল বালুর ব্যবসা গড়ে তোলেন। বিভিন্ন স্থান থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে এখানে স্তূপ করা হয়। এতে এক দিকে নদের পানির প্রবাহ যেমন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে নদের নানা প্রজাতির মাছের অবাধ বিচরণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। স্থানীয় লোকজনও নানা পণ্য ওঠানো-নামানো করতে জায়গাটি ব্যবহার করতে পারছেন না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আকবর আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেখানে বালুর ব্যবসা করছি এর সামনের অংশটি পরিত্যক্ত। আর পেছনের অংশ ব্যক্তিমালিকানাধীন জায়গা। এখন তো আর নৌঘাট নেই। এ ছাড়া এতে নদ দিয়ে নৌকা চলাচলে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। লোকজনেরও কোনো সমস্যা নেই।’ 

পাকশিমুল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘নদের অংশ ভরাট করে বালুর ব্যবসার বিষয়টি আমি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’ 

পাকশিমুল ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (নায়েব) সোহরাব হোসেন বলেন, আকবর আলী যেখানে বালুর ব্যবসা করছেন, সে জায়গাটি নদের এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন জায়গায় পড়েছে। নদ দখলের অভিযোগে তাঁকে বারবার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। গত বছর তাঁকে উচ্ছেদও করা হয়। কিন্তু তিনি আবার সেখানে বালুর স্তূপ দেন। ব্যবসা চালিয়েই আসছেন। প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দরকার। 

 উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ এস এম মোসা বলেন, ‘খোঁজখবর নিয়ে এ ব্যাপারে শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’