এনামুলের বন্ধু ও ক্লাব কর্মচারীর বাসায় চার কোটি টাকা

রাজধানীর গেন্ডারিয়া ও সূত্রাপুরে চলা র‌্যাবের অভিযান। ঢাকা, ২৪ সেপ্টেম্বর। ছবি: প্রথম আলো
রাজধানীর গেন্ডারিয়া ও সূত্রাপুরে চলা র‌্যাবের অভিযান। ঢাকা, ২৪ সেপ্টেম্বর। ছবি: প্রথম আলো

গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এনামুল হক ও তাঁর ভাই থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রূপণ ভূঁইয়ার বাড়িতে টাকা ও গয়না জব্দের পর র‌্যাব তাঁদের এক বন্ধু ও ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের এক কর্মচারীর বাসায় অভিযান চালিয়েছে। এই দুজনের বাড়ি থেকে জব্দ করা হয়েছে চার কোটি টাকা ও একটি অস্ত্র।

সব মিলিয়ে এনামুল ও তাঁদের পরিচিতজনদের বাড়িতে চালানো এই অভিযানে র‌্যাব পাঁচ কোটি পাঁচ লাখ টাকা, চার কোটি টাকা মূল্যের স্বর্ণালংকার ও ছয়টি আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করে। গতকাল সোমবার রাত থেকে আজ মঙ্গলবার দুপুরের পর পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে এসব বাড়িতে অভিযান চালায় র‌্যাব-৩।

র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, এনামুলদের পরিচিত এই দুই ব্যক্তি হলেন ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের কর্মচারী আবুল কালাম ও এনামুলের বন্ধু হিসেবে পরিচিত হারুন অর রশিদ। র‌্যাব জানিয়েছে, হারুন স্থানীয় ট্রাকস্ট্যান্ডের কর্মচারী। আজ মঙ্গলবার দুপুরের পর এই দুটি বাড়িতে অভিযান চলে। এর মধ্যে হারুনের স্ত্রী র‌্যাবের কাছে দাবি করেছেন, জব্দ হওয়া টাকা সম্পর্কে তাঁরা কিছু জানেন না। কয়েক দিন আগে আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক এসব টাকা তাঁদের (হারুন) বাড়িতে রেখে গেছেন।

র‍্যাব-৩-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সফিউল্লাহ বুলবুল বলেন, এনামুলদের বানিয়ানগরের বাড়িতে অভিযানের পর বেলা আড়াইটার দিকে পার্শ্ববর্তী ৮১/১ লালমোহন সাহা স্ট্রিটে ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের কর্মচারী আবুল কালামের চারতলা বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। এনামুল-রূপণের মতো আবুল কালামও র‍্যাবের অভিযানের আগে ওই বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছেন। তবে বাড়ির দোতলায় তাঁর কক্ষে থাকা একটি ভল্টের ভেতর পাওয়া যায় দুই কোটি টাকা ও একটি অস্ত্র।

সফিউল্লাহ বুলবুল বলেন, আবুল কালামের বাড়ির পর র‍্যাবের অভিযান চলে হারুন অর রশিদ নামের এনামুলের বন্ধুর ২২/১ শরৎ গুপ্ত রোডের তিনতলা বাড়ির দোতলায়। দোতলার এই ফ্ল্যাটে দুটি কক্ষ রয়েছে। এর মধ্যে হারুনের শয়নকক্ষে থাকা একটি ভল্ট খুলে পাওয়া যায় আরও দুই কোটি টাকা। অভিযানের আগে হারুনও পালিয়ে যান।

তৃতীয় অভিযান শেষে র‌্যাব-৩–এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শফিউল্লাহ বুলবুল আরও বলেন, শরৎ গুপ্ত রোডের ওই বাড়ির দ্বিতীয় তলায় থাকেন এনামুল হকের বন্ধু হারুন অর রশিদ। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‍্যাব জানতে পারে, সেখানেও একটি ভল্ট আছে। ভল্টে অবৈধ টাকা রাখা আছে। এ সময় হারুন বাসায় ছিলেন না। তিনি স্থানীয় ট্রাকস্ট্যান্ডের কর্মচারী। হারুনের স্ত্রী জানান, তাঁরা এ অর্থের বিষয়ে কিছুই জানেন না। কয়েক দিন আগে এনামুল এসে টাকাগুলো বাসায় রেখে যান।

এর আগে গতকাল রাত থেকে আজ দুপুর পর্যন্ত চলা র‌্যাবের অভিযানে এনামুল হক ও তাঁর ভাইয়ের একাধিক ফ্ল্যাটে মেলে ১ কোটি ৫ লাখ টাকা, ৭২০ ভরি স্বর্ণালংকার ও ৫টি অস্ত্র। জব্দ হওয়া এসব স্বর্ণালংকারের বাজারমূল্য চার কোটি টাকা বলে জানা গেছে। সূত্রাপুরের ৩১ নম্বর বানিয়ানগরের বাড়িতে ওই অভিযান চলে।

র‍্যাব জানিয়েছে, এনামুল হক ও রূপণ ভূঁইয়া ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের শেয়ারহোল্ডার। এনামুলদের ১৫টি বাসা রয়েছে রাজধানীতে। ওয়ান্ডারার্স ক্লাব থেকে ক্যাসিনোর টাকা এনে এনামুল বাসায় রাখতেন। কিন্তু বিপুল পরিমাণ টাকা রাখার জায়গাও হতো না। তাই টাকা দিয়ে তিনি স্বর্ণালংকার কিনতেন। এনামুল হক এক সপ্তাহ আগে থাইল্যান্ড চলে গেছেন এবং তাঁর ভাই রূপণ ভূঁইয়া পলাতক। র‍্যাব তাঁকে খুঁজছে।

গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত জাহান প্রথম আলোকে এনামুল হক ও তাঁর ভাইয়ের রাজনৈতিক পরিচয় নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, এই দুজনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।