দিনে রেকি রাতে চুরি

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

চোর চক্রের সদস্যদের পিকআপ ভ্যান, তেল ও রাস্তার খরচ বাবদ টাকা দিতেন মহাজন। সেই পিকআপ ভ্যান নিয়ে তাঁরা দিনের বেলা বেরিয়ে পড়েন। ঘোরেন এ-জেলা ও-জেলা। রেকি করে নির্ধারণ করেন কোন দোকানে চুরি করবেন। রাতে সেখানে তালা কেটে চুরি করেন। এভাবে ১০ থেকে ১৫ বছর ধরে গাইবান্ধার সাঘাটা, ফুলছড়িসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় চুরি করত দলটি।

এই চোর চক্রের বাড়ি দেশের বিভিন্ন জেলায়। দীর্ঘদিন তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল। চক্রের নয়জনকে গত ছয় দিনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে গাইবান্ধার পুলিশ সুপার মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম এসব তথ্য তুলে ধরেন।

পুলিশ সুপার বলেন, গত ৭ জুলাই ফুলছড়ি উপজেলায় একটি দোকানে চুরি হলে থানায় মামলা হয়। মামলার সূত্র ধরে গাইবান্ধার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মইনুল হকের নেতৃত্বে দুই মাসব্যাপী বিভিন্ন জেলায় অভিযান চালানো হয়। অভিযানে চক্রের নয়জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কাছ থেকে তালা ভাঙার একটি বড় কাটার, কয়েকটি মোবাইল সেট ও দুটি পিকআপ ভ্যান জব্দ করা হয়।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার বারজানা মালতি গ্রামের আবদুল কুদ্দুসের ছেলে আবদুল হাই (৪০), ঘাটাইল উপজেলার ষাইটশৈলা গ্রামের সোহরাব আলীর ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান (৩২); সিরাজগঞ্জের গয়লা গ্রামের তমছেল আলীর ছেলে সাইফুল ইসলাম (৫০), চক কোবদাসপাড়া গ্রামের আবদুস সামাদের ছেলে আবদুল কাদের (৪০), বেলকুচি উপজেলার চালা সাতরাস্তা গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে আমিনুল ইসলাম (৪৫), শাহজাদপুর উপজেলার বেনুটিয়া গ্রামের সোহরাব হোসেনের ছেলে রবিউল ইসলাম (৩৬); নাটোরের সিংড়া উপজেলার ছোট চৌগ্রামের নুর হোসেনের ছেলে মো. জোবায়ের (৩৫), টাঙ্গাইলের পাইক মুড়িল গ্রামের সোবহানের ছেলে মো. আব্বাস (৩০), টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার গোপালপুর গ্রামের রফিজ উদ্দিনের ছেলে ওয়াসকুরুনী (৩৩)।

ফুলছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাওছার আহম্মেদ জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা থানা হাজতে রয়েছে। বুধবার তাদের আদালতে তোলা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, প্রথমে আবদুল হাই ও মোস্তাফিজুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী অন্যদের বিভিন্ন জেলা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার হওয়ারা পুলিশকে জানিয়েছে, ১০ লাখ টাকার মালামাল চুরি করলে তা তারা মহাজনের কাছে মাত্র ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করতেন। চুরির সময় চারজন থাকলে ওই ৮০ হাজার টাকা ছয় ভাগ হতো। চারজনে চার ভাগ ও পিকআপের মালিক ও মহাজন পান দুই ভাগ। এ ছাড়া চক্রের সদস্য হওয়ার জন্য মহাজনের হাতে প্রত্যেককে ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার করে টাকা ফি দিতে হয়েছে।

পুলিশ সুপার তৌহিদুল ইসলাম জানান, চোর চক্রের মূল হোতার (মহাজন) পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁকে গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান চলছে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে গাইবান্ধার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মইনুল হক ও আনোয়ার হোসেন, গাইবান্ধা সদর থানার ওসি খান মো. শাহরিয়ার এবং ফুলছড়ি থানার ওসি কাওছার আহম্মেদ উপস্থিত ছিলেন।