সব উচ্ছেদ হলেও রয়ে গেছে আ.লীগ নেতার সুরম্য ভবন

নওগাঁর মান্দা উপজেলার ফেরিঘাট এলাকায় নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কে সওজের জায়গায় নির্মিত মান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোল্লা এমদাদুল হকের ভবন।  ছবি: প্রথম আলো
নওগাঁর মান্দা উপজেলার ফেরিঘাট এলাকায় নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কে সওজের জায়গায় নির্মিত মান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোল্লা এমদাদুল হকের ভবন। ছবি: প্রথম আলো

নওগাঁ-রাজশাহী আঞ্চলিক মহাসড়কে মান্দার সাবাইহাট বাজার থেকে মহাদেবপুরের নওহাটা মোড় পর্যন্ত ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর উচ্ছেদ অভিযান চালায় সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। অভিযানে তিন শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। কিন্তু সওজের জায়গায় স্থাপিত একটি সুরম্য ভবন অরক্ষিত রয়ে গেছে। ভবনটি উচ্ছেদ না করায় জনমনে নানা ধরনের প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের মান্দার ফেরিঘাট এলাকায় সওজের জায়গায় স্থাপিত ওই দোতলা ভবনটির মালিক মান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোল্লা এমদাদুল হক।
সওজের নওগাঁ কার্যালয় ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়ক প্রশস্ত করার কাজ শুরু হয়। ওই সময় মহাসড়কের দুই পাশে সওজের জায়গায় নির্মিত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চালানো হয়। ওই অভিযানে সড়কের দুই পাশের সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হলেও মান্দার ফেরিঘাট এলাকায় সওজের জায়গায় নির্মিত আওয়ামী লীগের নেতা এমদাদুল হকের ওই ভবনটি ভাঙা হয়নি। এ বছর আবারও মহাসড়কের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের ঘোষণা দেয় সওজ। এ লক্ষ্যে অবৈধ দখলদারদের নোটিশ দেয় সওজ। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে না নেওয়ায় ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর সওজ উচ্ছেদ অভিযান চালায়। দুই দিনের অভিযানে মান্দার সাবাইহাট বাজার থেকে ফেরিঘাট পর্যন্ত তিন শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। ১০ সেপ্টেম্বর অভিযান চলাকালে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্দেশে শ্রমিকেরা ফেরিঘাট এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতা মোল্লা এমদাদুলের দোতলা ভবনটি ভাঙতে যান। ভবনটির সামনের দিকে বারান্দার কিছু অংশ ভাঙতে না ভাঙতেই এমদাদুলের লোকজন তাতে বাধা দেন। এরপর ভবনটি না ভেঙেই চলে যান সওজের লোকজন।
ফেরিঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ওই এলাকায় সড়কের পাশে সওজের জায়গার স্থাপিত সব স্থাপনা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সড়কের পাশেই সুরম্য দোতলা ভবনটি অরক্ষিত রয়ে গেছে। ভবনের সামনের অংশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি টাঙানো রয়েছে।
উপজেলার প্রসাদপুর কুশুম্বা গ্রামের বাসিন্দা ফজলুর রহমান বলেন, ‘ফেরিঘাটে টিন দিয়ে তৈরি আমার একটি ঘর ছিল। ওই ঘরে আমি মিষ্টির দোকান নিয়ে বসতাম। আমার ঘরটিসহ ফেরিঘাটের সব দোকানপাট, মার্কেট উচ্ছেদ করা হয়েছে। শুধু মোল্লার ভবনটি ছাড়া। দুই বছর আগেও সব দোকানপাট, মার্কেট উচ্ছেদ করলেও মোল্লার ভবনে হাত দেওয়া হয়নি। এবারও হলো না। টাকা ও ক্ষমতা থাকলে সব অন্যায় মাফ।’
ফেরিঘাট এলাকার আরেক ব্যবসায়ী খলিলুর রহমান বলেন, ‘হামরা গরিব মানুষ। ছোটখাটো দোকানপাট করে সড়কের ব্যবসা করিতু (করতাম)। সেগুলা সব ভ্যাঙ্গে দিছে। কিন্তু সরকারি জায়গায় গড়ে তোলা আওয়ামী লীগ নেতার আলিশান ভবনে হাত দ্যাওয়া হয়নি। আইন খালি হামাগের মতো গরিব মানুষের জন্যে।’
জানতে চাইলে ভবনটির মালিক উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোল্লা এমদাদুল হক দাবি করে বলেন, ‘ওই জায়গা ৯৯ বছরের জন্য সওজের কাছ থেকে লিজ নিয়েছি।। যেটুকু লিজ নেওয়া হয়েছে ততটুকু জায়গাতেই ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। তারপরও সওজের লোকজন বারবার ভবনটি ভাঙতে আসে। এবারও ভবনের সামনের অংশ ভেঙে ফেলেছে। এখানে আমি কোনো অনিয়ম করিনি।’
সওজের নওগাঁর নির্বাহী প্রকৌশলী হামিদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ফেরিঘাট এলাকায় আলোচিত ওই ভবনটি সওজের জায়গায় স্থাপিত। ওই ভবনটিও উচ্ছেদ অভিযানের তালিকায় রয়েছে। দুই দিনের উচ্ছেদ অভিযানে যে পরিমাণ ভাঙার কথা ছিল, তা হয়নি। রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের সাবাইহাট থেকে শুরু করে দুই দিনে ফেরিঘাট পর্যন্ত অভিযান এসে শেষ হয়। আবারও সওজের ঢাকা অঞ্চলের উপসচিব মাহবুবুর রহমান ফারুকীর নেতৃত্বে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে। ওই সময়ের মধ্যে ভবনটি সরিয়ে না নিলে অন্যান্য অবৈধ স্থাপনার মতো ওই ভবনটিও উচ্ছেদ করা হবে।