গাজীপুরে পাসপোর্ট পেতে বিড়ম্বনা

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

গাজীপুরের কাশিমপুর এলাকার বাসিন্দা সাজেদা বেগম। গৃহকর্মীর কাজ করেন ওমানে। গত এপ্রিলে ৬ মাসের ছুটিতে দেশে এসেছেন। পাসপোর্টের মেয়াদ প্রায় শেষের দিকে, তাই পাসপোর্টটি নবায়নের জন্য আবেদন করেছেন গত ৭ আগস্ট। পাসপোর্ট হাতে পাওয়ার কথা ২৮ আগস্ট। তিনি সেই দিন থেকেই যোগাযোগ করছেন, কিন্তু এখনো পাসপোর্ট পাচ্ছেন না। 

একইভাবে ২৫ জুলাই নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন হায়দ্রাবাদ এলাকার আইরিন সুলতানা। পাসপোর্ট পাওয়ার কথা ১৫ আগস্ট। কিন্তু প্রায় দুই মাস পার হতে চলল, অথচ এখনো পাসপোর্ট পাননি। এ নিয়ে কয়েক দফায় যোগাযোগ করেছেন পাসপোর্ট কার্যালয়ে। তাতেও মেলেনি কোনো সমাধান।

নির্ধারিত সময়ে পাসপোর্ট প্রাপ্তির অপেক্ষায় থাকা এমন অসংখ্য মানুষের ভিড় গাজীপুরের আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ে। জয়দেবপুর ফায়ার সার্ভিস–সংলগ্ন কার্যালয়টিতে ১৯ সেপ্টেম্বর দুপুরে গিয়ে এমন ভিড় দেখা যায়। পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে কার্যালয়ের বিতরণকক্ষের সামনে অপেক্ষা করছেন তাঁরা। কেউ কেউ এসেছেন কয়েক দফায়। সমস্যার কথা জানতে কেউ কেউ ছোটেন কার্যালয়ের এ–কক্ষ থেকে ও–কক্ষে।

সাজেদা বেগম বলেন, ‘বিদেশ থেকে মালিক বারবার ফোন দিয়ে জানতে চাচ্ছেন, আমি কবে কাজে (ওমান) ফিরব। কিন্তু আমি পাসপোর্ট হাতে না পাওয়ায় তাঁকে কিছুই বলতে পারিনি। কয়েক দিনের মধ্যে কোনো ব্যবস্থা না হলে নতুন কাজের লোক দেখবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।’ আইরিন সুলতানার অভিযোগ, ‘টাকা নেওয়ার সময় নির্ধারিত সময়ে পাসপোর্ট দেওয়ার কথা বলে তারা ঘুরায়। এ নিয়ে কমপক্ষে চার–পাঁচ দিন আইছি, বারবার নানা সমস্যা দ্যাখায়া ফিরায়া দেয়। এ কারণে বিদেশ যাওয়ার ব্যাপারে কোনো কাজ আগাতে পারছি না।’

সাধারণত দুই ধরনের পাসপোর্টের জন্য মানুষ বেশি আবেদন করেন। এগুলো হলো নরমাল বা সাধারণ ও ইমারজেন্সি বা জরুরি। এর মধ্যে সাধারণ পাসপোর্টের জন্য আবেদন ফি ৩ হাজার ৪৫০ টাকা, সরবরাহ করার কথা ২১ দিনে। আর জরুরি পাসপোর্টের ফি ৬ হাজার ৯০০ টাকা, সরবরাহ করার কথা ৭ দিনে। কিন্তু বাস্তবে কোনো পাসপোর্টই সময়মতো দেওয়া হয় না গ্রাহকদের।

কার্যালয়ের সামনে অপেক্ষমাণ একাধিক গ্রাহক প্রথম আলোকে জানান, দালালদের দৌরাত্ম্য কিংবা পুলিশ ভেরিফিকেশনসহ নানা কারণে পাসপোর্ট পেতে দেরি হয় তাঁদের। এরই মধ্যে ১০ থেকে ১৫ দিন পাসপোর্ট বিতরণ বন্ধ রয়েছে। জরুরি পাসপোর্ট দেওয়া হচ্ছে সীমিতসংখ্যক। এতে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়ছেন তাঁরা। 

সরেজমিনে দেখা যায়, কার্যালয়ের নিচতলায় পাসপোর্ট বিতরণকক্ষের সামনে অপেক্ষা করছেন ১৫ থেকে ২০ জন। বিতরণকক্ষের সামনের দেয়ালে একটি নোটিশ ঝোলানো। তাতে লেখা, ‘ঢাকার পারসোনালাইজেশন সেন্টারে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে পাসপোর্ট প্রাপ্তিতে বিলম্ব হওয়ায় আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।’ বিতরণকক্ষের সবাই দুপুরের খাবার খেতে গেছেন। তাই অনেকে বিরক্ত হয়ে নিজ থেকেই ফিরে গেছেন।

লাইনে থাকা জয়নাল আবেদিন নামের একজন ভুক্তভোগী বলেন, ‘শুধু সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য সামনে একটা নোটিশ লাগাইছে। আসলে তাদের পাসপোর্ট বই নাই। এ কারণে কোনো পাসপোর্টই দিতে পারছে না। আবার কবে দিতে পারবে, তা–ও বলছে না।’ আবদুল কাইয়ুম নামের আরেকজন ভুক্তভোগী বলেন, ‘পাসপোর্টের জন্য কয়েক দফা এসেও কোনো সমাধান হচ্ছে না। এদিকে সময়মতো চাকরিতে ফিরে যেতে না পারলে পরিবার নিয়া বেকায়দায় পড়তে হইব।’

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, মূলত বই শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে পাসপোর্ট দেওয়া যাচ্ছে না। জরুরি ভিত্তিতে কিছু পাসপোর্ট দেওয়া হচ্ছে, তবে সেটা সীমিত। কর্মকর্তাদের একজন বলেন, ‘মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে জেনেও কিছু করতে পারছি না। বই না আসা পর্যন্ত এভাবেই চলতে হবে।’

পাসপোর্টের বই না থাকার বিষয়টি স্বীকার করে কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. সালেহ উদ্দিন বলেন, ‘বই-সংকট থাকার কারণে কিছুদিন ধরে পাসপোর্ট বিতরণে সমস্যা হচ্ছে। বিষয়টি ঢাকার মূল কার্যালয়ে জানানো হয়েছে। আশা করছি, খুব শিগগির সমস্যাটির সমাধান হয়ে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘কারও খুব বেশি জরুরি হলে আমরা মূল কার্যালয়ে সুপারিশ করে পাসপোর্ট দেওয়ার চেষ্টা করি।’