জুয়া নিয়ে হুইপের বক্তব্য ঘিরে চট্টগ্রাম আ.লীগে অস্থিরতা

চট্টগ্রাম আবাহনী ক্লাবে জুয়ায় হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে আওয়ামী লীগের একাংশের অভিযোগ এবং হুইপের ছেলের অডিও ফাঁস হওয়ার ঘটনা ঘিরে সংগঠনে দ্বন্দ্ব ও অস্থিরতা বেড়েছে।

এ অস্থিরতার জন্য হুইপের ছেলে নাজমুল হক চৌধুরী (শারুন) চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনসহ তিনজনকে দায়ী করেছেন। বাকি দুজন হলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান এবং নগর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক দিদারুল আলম চৌধুরী।

হুইপ সামশুল হক গত রোববার ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান নিয়ে প্রথম আলোর কাছে বক্তব্য দেন। আওয়ামী লীগের একটি অংশের অভিযোগ, চট্টগ্রাম আবাহনী ক্লাবকে জুয়ার আসরে পরিণত করেন হুইপ, যিনি ক্লাবটির মহাসচিব।

হুইপ ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে বক্তব্য দিলেও ক্লাবে তাস খেলার পক্ষে মত দেন। কিন্তু আবাহনী ক্লাবে জুয়ার আসর বসিয়ে দিনে ছয় লাখ টাকা আয় হয় বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগ দিদারুল আলম। এ বিষয়ে তিনি পাঁচলাইশ থানায় অভিযোগও দেন।

অস্থিরতা ও দ্বন্দ্ব
হুইপ সামশুলের ভিডিও রোববার প্রচার করা হলে মেয়র নাছির পরদিন পাহাড়তলী ওয়ার্ডে সন্ত্রাসবিরোধী এক অনুষ্ঠানে পাল্টা বক্তব্যে বলেন, জুয়া ও ক্যাসিনোর আসর বসিয়ে ক্লাব পরিচালনার কথা কোথাও বলা নেই। এরপর বুধবার চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সম্পাদক নাছির উদ্দীন এক বিবৃতিতে বলেন, চলমান অভিযানের বিরোধিতাকারীরা গণদুশমন। হুইপকে ইঙ্গিত করে এ বিবৃতি দেওয়া হয় বলে অনেকে মনে করছেন। মেয়র নাছির কারও নাম উল্লেখ না করে প্রথম আলোকে বলেন, ক্লাবে খেলাধুলার পরিবর্তে জুয়ার আসর বসানো হলে আপত্তি উঠবেই। প্রধানমন্ত্রী এসবের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন। যাঁরা ক্লাবকে জুয়ার আখড়ায় পরিণত করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।

চট্টগ্রাম-১২ আসনে আওয়ামী লীগের সাংসদ শামশুল হক চৌধুরী
চট্টগ্রাম-১২ আসনে আওয়ামী লীগের সাংসদ শামশুল হক চৌধুরী



আওয়ামী লীগ নেতা দিদারুলের অভিযোগ ও মেয়রের বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হন হুইপ সামশুল ও তাঁর ছেলে নাজমুল। আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যে ষড়যন্ত্র খুঁজে পান নাজমুল। যদিও বিগত সিটি নির্বাচনের আগে মেয়র নাছিরের সঙ্গে হুইপ সামশুলের ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল। সম্প্রতি তাঁদের পথ আলাদা হয়ে যায়।

এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলেও হুইপের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। হুইপ–পুত্র মনে করেন, তাঁর বাবার বক্তব্য নিয়ে রাজনীতি ও ষড়যন্ত্র চলছে। ষড়যন্ত্রকারী কারা, জানতে চাইলে নাজমুল মেয়র নাছির, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সম্পাদক মফিজুর রহমান এবং দিদারুলের নাম বলেন।

হুইপ–পুত্র বলেন, ‘আমার বাবা ক্যাসিনো–জুয়ার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। অথচ তাঁকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। আমার বাবা হুইপ হয়েছেন, যা অনেকে মেনে নিতে পারছেন না।’

হুইপ ও তাঁর ছেলের বক্তব্য নিয়ে এখন সরগরম চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের রাজনীতি। প্রতিপক্ষের নেতা–কর্মীরা হুইপের রাজনৈতিক ইতিহাস টেনে আনছেন। যুবদল ও জাতীয় পার্টি হয়ে আওয়ামী লীগে এসেছেন বলে হুইপকে ঘায়েল করা হচ্ছে।

দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান হুইপকে দলে অনুপ্রবেশকারী ও ‘হাইব্রিড ক্রীড়া সংগঠক’ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, সামশুল হক আবাহনী ক্লাবকে জুয়ার আসরে পরিণত করেছেন।

চড় মারার হুমকি

দেশে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর আগে দিদারুল মুঠোফোনে কথা বলেন নাজমুলের সঙ্গে। তাঁদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। একপর্যায়ে দিদারুলকে চড় মেরে দাঁত ফেলে দেওয়ার হুমকি দেন নাজমুল, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

দিদারুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সামশুল হক যুবদল থেকে জাতীয় পার্টিতে যান। এ কথা বললে তাঁর ছেলে আমার দাঁত ফেলে দেওয়ার হুমকি দেন।’

চড় মারার হুমকি দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন নাজমুল। তিনি বলেন, ‘আমার বক্তব্য “সুপার এডিট” করে দিদারুল প্রচার করছেন।’