দেশে নতুন জাতের চেরি টমেটো

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ হচ্ছে ‘বিউ চেরি টমেটো-১’।  ছবি: সংগৃহীত
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ হচ্ছে ‘বিউ চেরি টমেটো-১’। ছবি: সংগৃহীত

ছেলে দুটি চেরি টমেটো খুব পছন্দ করে। এ জন্য প্রায়ই কেনেন। শীতে দাম কম থাকে। কিন্তু বছরের অন্য সময় টকটকে লাল গোল এই সবজির দাম থাকে আকাশছোঁয়া। ছেলেদের আবদার মেটাতে বিকল্প চিন্তা আসে তাঁর মাথায়। গবেষণা শুরু করেন বন্য জাতের এই টমেটো নিয়ে। প্রায় তিন বছরের চেষ্টায় সাফল্যের দেখা পান অধ্যাপক মেহফুজ হাসান। গাজীপুরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জন্ম নেয় চেরি টমেটোর নতুন এক জাত।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় বীজ বোর্ড সম্প্রতি নতুন এই জাতের প্রত্যয়নপত্র দিয়েছে। সে অনুযায়ী জাতটির নাম ‘বিউ চেরি টমেটো-১’। বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিকস অ্যান্ড প্ল্যান্ট ব্রিডিং বিভাগের অধ্যাপক মেহফুজ হাসানের নেতৃত্বে গবেষণায় কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক আহসানুল হক, কারিগরি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি ও স্নাতকোত্তরের কয়েকজন শিক্ষার্থী যুক্ত ছিলেন।

টমেটোটি সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিন মিয়া বলেন, ‘ক্যাম্পাসে চাষের পর এই জাতের বেশ কিছু টমেটো আমাকে দিয়েছিল। এটি দেখতে সুন্দর, খেতেও ভালো।’

গুণ

গবেষকদের মতে, দেশে উদ্ভাবিত চেরি টমেটোর মধ্যে এটিই সবচেয়ে বেশি ফলনশীল। আকারে ও গুণমানে
অনন্য। এই জাতের টমেটোর রং, আকৃতি ও রোগ প্রতিরোধক্ষমতা অন্য টমেটোর চেয়ে বেশি। অন্য যেকোনো জাতের টমেটোর চেয়ে এই টমেটোতে বেশি পরিমাণে লাইকোপিন ও ফ্ল্যাভোনয়েড এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। লাইকোপিন ক্যানসার ও হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমায়। আর ফ্ল্যাভোনয়েড ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকরী।

জানা গেছে, ইতিপূর্বে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) ও বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট চেরি টমেটোর কয়েকটি জাত উদ্ভাবন করেছে। তবে দেশে চেরি টমেটো সহজলভ্য নয়। ঢাকার সুপারশপগুলোতে মূলত বিদেশ থেকে আনা চেরি টমেটো পাওয়া যায়; যা ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা কেজি দরেও বিক্রি হয়।

অধ্যাপক মেহফুজ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, বিউ চেরি টমেটো-১ জাতটি চাষ করলে হেক্টরপ্রতি (২ দশমিক ৪৭১ একর) ১৪০ টন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যাবে। অন্য টমেটোতে হেক্টরপ্রতি ফলন ১০০ টন। দেশের যেকোনো অঞ্চলে সারা বছর এটি চাষ করা যাবে। নতুন জাতের এই টমেটো খুবই রসাল। সহজে পোকামাকড়ের আক্রমণ হয় না।

>

হেক্টরে ফলন হবে ১৪০ টন
রসাল এই টমেটোতে ক্যানসার ও হৃদ্রোগ প্রতিরোধী উপাদানের মাত্রা বেশি থাকার দাবি

উদ্ভাবনটিকে সাধুবাদ জানিয়ে বারির মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (সবজি বিভাগ) ফেরদৌসী ইসলাম বলেন, এই টমেটোর ফলন ১৪০ টন—একটু বেশি মনে হচ্ছে।

জানতে চাইলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বীজ অনুবিভাগের মহাপরিচালক আশ্রাফ উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, এটি অনিয়ন্ত্রিত জাতের একটি ফসল। এমন ফসলের বীজ নিবন্ধন দেওয়ার সময় গবেষণাকারী বা উদ্ভাবনকারী প্রতিষ্ঠানের দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে নিবন্ধন দেওয়া হয়।

চাষপদ্ধতি

অন্য টমেটো চাষের মতোই এই টমেটো চাষ করতে হয়। তবে বন্য প্রজাতির হওয়ায় এই জাতের টমেটো চাষ ও পরিচর্যা তুলনামূলক সহজ। এক হেক্টর জমিতে ২০০ গ্রাম বীজ লাগে। সব ধরনের মাটিতেই এটি চাষ করা যায়। তবে বেলে দোআঁশ বা এঁটেল দোআঁশ মাটিতে ফলন বেশি হবে। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে বীজতলায় বীজ বপন করার উপযুক্ত সময়। হেক্টরপ্রতি ৪৫০ কেজি ইউরিয়া, ২৫০ কেজি টিএসপি ও ১৫০ কেজি পটাশ সার প্রয়োগ করতে হবে। এ ছাড়া হেক্টরপ্রতি পাঁচ টন গোবর সার দিতে হবে।

মেহফুজ হাসানের স্বপ্ন, অল্প জমিতে অধিক ফলনের কারণে সারা দেশে এই জাতের টমেটো সহজলভ্য হবে। দাম হবে সহনীয়, বদলাবে কৃষকের দিন। তবেই তাঁদের কষ্ট সার্থক হবে।