সাগর মোহনায় প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে

চাঁদপুর শহরের বড় স্টেশন মাছঘাটে ট্রাকে ও ট্রলারে করে প্রচুর ইলিশ আসছে। গতকাল দুপুরে।  ছবি: প্রথম আলো
চাঁদপুর শহরের বড় স্টেশন মাছঘাটে ট্রাকে ও ট্রলারে করে প্রচুর ইলিশ আসছে। গতকাল দুপুরে। ছবি: প্রথম আলো

সাগর মোহনায় প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। ট্রাকে ও ট্রলারে করে এসব ইলিশ আনা হচ্ছে চাঁদপুরে। তবে এতে নাখোশ সাধারণ ক্রেতা ও ভোক্তারা। কারণ, প্রচুর ইলিশ সরবরাহ হলেও স্থানীয় বাজারে দাম খুব একটা কমেনি।

গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে চাঁদপুর মাছঘাট ঘুরে জেলে, ব্যবসায়ী ও সাধারণ লোকজনের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

ভোলার চরফ্যাশন থেকে প্রথমবারের মতো এক ব্যবসায়ী একটি ট্রাকে করে ৮০ মণ ইলিশ নিয়ে এসেছেন চাঁদপুর মাছঘাটে। তিনি বলেন, চরফ্যাশনে যে ইলিশ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি বিক্রি হয়, একই ইলিশ চাঁদপুরের এই ঘাটে এসে দ্বিগুণ দাম পেয়েছেন। তাঁর মতো নোয়াখালীর হাতিয়া থেকে চাঁদপুর মাছঘাটে একটি ট্রাকে করে প্রায় ৫০ মণ ইলিশ এনেছেন আরেক ব্যবসায়ী। তিনিও এখানে দ্বিগুণ লাভ পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

চাঁদপুর মাছঘাটের ইলিশ ব্যবসায়ী ও জেলা মৎস্য বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, কয়েক দিন ধরে চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছঘাটে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ এসেছে। হিসাব করে দেখা গেছে, প্রতিদিন এই মাছঘাটে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ কেনাবেচা হচ্ছে। তবে এসব ইলিশ ভোলা, হাতিয়া ও চরফ্যাশনের সাগরমোহনা থেকে আনা হয়েছে। তাঁর দাবি, চাঁদপুর মাছঘাট থেকে দেশের সব বাজারেই অধিকাংশ ইলিশ সরবরাহ করা হচ্ছে। দাম ও পরিবহন–সুবিধায় চাঁদপুর মাছঘাটে বিভিন্ন এলাকার জেলেরা ইলিশ এনে বিক্রি করে থাকেন। তিনি বলেন, ‘সরকার এ সময় ভারতে ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকলে আমরা এর সাধুবাদ জানাব। কারণ, ইলিশ রপ্তানি হলে আমরা ও সাধারণ জেলেরা বেশি উপকৃত হব। তবে ভারতে ইলিশ রপ্তানি হলে স্থানীয় বাজারে কিছুটা হলেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সাধারণ ক্রেতাদের একটু চড়া দামে ইলিশ কিনতে হবে।’

মাছঘাটের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়ী আবদুল মালেক খন্দকার বলেন, ‘সরকার ভারতে কিছু ইলিশ রপ্তানি করতে চাইছে কি না, আমরা তা জানি না। যদি করে থাকে, তাহলে এটা সরকারের জন্য লাভবান হবে, তেমনি আমরা ব্যবসায়ীরা লাভবান হব।’ তিনি বলেন, ইলিশ বৈধভাবে রপ্তানি করা প্রয়োজন। কারণ, অবৈধভাবে প্রচুর ইলিশ দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে চলে যাচ্ছে ভারতে। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সরকারও রাজস্ববঞ্চিত হচ্ছে। এ জন্য দ্রুত ভারতসহ সারা বিশ্বে বৈধভাবে ইলিশ রপ্তানির ব্যবস্থা করা দরকার।

চাঁদপুর জেলা মৎস্যজীবী সভাপতি আবদুল মালেক দেওয়ান বলেন, ইলিশ রপ্তানিযোগ্য মাছ। তবে পদ্মা ও মেঘনায় খুব বেশি ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। অধিকাংশ ইলিশ আসছে সাগরমোহনা থেকে। তাই দাম একটু বেশি। সরকার বিদেশে ইলিশ রপ্তানির ব্যবস্থা করলেও সাধারণ ক্রেতারা যেন তা খেতে পারেন, সে পরিকল্পনা করা ভালো হবে।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুল বাকী বলেন, ‘চাঁদপুরে এ বছর প্রচুর ইলিশ দেখা যাচ্ছে। যার অধিকাংশ ইলিশই এবার বড় আকারের। কিন্তু মৌসুম অনুপাতে দাম কিছুটা বেশি। তবে ভারতে ইলিশ রপ্তানির বিষয়ে আমরা এখন পর্যন্ত কিছুই জানি না।’

ইলিশ গবেষক চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার প্রচুর ইলিশ সরবরাহের খবর পাওয়া যাচ্ছে। এর হিসাব এখনো করা হয়নি। এতে দেশের চাহিদা মিটিয়ে এই ইলিশ বিদেশে রপ্তানি করলেও দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির পাশাপাশি জেলে ও ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন। তবে তার আগে মৎস্য ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত সিদ্ধান্ত প্রয়োজন।