ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে ট্রাক চালাচ্ছিলেন চালক

ঘণ্টাখানেক চেষ্টার পর আহত অবস্থায় ট্রাকচালকের সহকারী মিজানুরকে উদ্ধার করেন পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। ছবি: ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সৌজন্যে
ঘণ্টাখানেক চেষ্টার পর আহত অবস্থায় ট্রাকচালকের সহকারী মিজানুরকে উদ্ধার করেন পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। ছবি: ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সৌজন্যে

ঢাকা থেকে সিমেন্টবোঝাই ট্রাক নিয়ে উত্তরাঞ্চলের জেলা কুড়িগ্রামে গিয়েছিলেন চালক মো. মোজাম্মেল (৩৫)। সিমেন্টের চালান সেখানে নামিয়ে সহকারী মিজানুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে আবার ঢাকার পথ ধরেন। দীর্ঘ যাত্রায় ঝিমুনি ভাব চলে আসে মোজাম্মেলের। একপর্যায়ে পথ হারিয়ে ট্রাক নামিয়ে দেন খাদে। এতে ট্রাকটি দুমড়েমুচড়ে গেলেও ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মী ও পুলিশের সহায়তায় প্রাণে বেঁচে যান মোজাম্মেল ও মিজানুর।

আজ শুক্রবার ভোর চারটার দিকে মিরপুর বেড়িবাঁধের পঞ্চবটী এলাকায় দুর্ঘটনাটি ঘটে। দুর্ঘটনায় চালক মোজাম্মেল ও সহকারী মিজানুরের পা ভেঙে গেছে। তবে দুমড়েমুচড়ে যাওয়া ট্রাকটি খাদ থেকে তোলা সম্ভব হয়নি। উদ্ধার হওয়ার পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের কাছে চালক মোজাম্মেল বলেন, একটানা ট্রাক চালিয়ে ক্লান্ত হয়ে তিনি একপর্যায়ে ঘুমিয়ে পড়েন, এতে ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়।

ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আনোয়ার সিমেন্টের ট্রাকটি মালামাল পৌঁছে দিতে এক দিন আগে কুড়িগ্রাম যায়। সিমেন্ট খালাস করেই চালক মোজাম্মেল খালি ট্রাক নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন। আজ ভোর চারটার দিকে আশুলিয়ার বেড়িবাঁধ এলাকায় এলে ঘুটঘুটে অন্ধকারে ঝিমুনি ভাব চলে আসে মোজাম্মেলের। ঘুম ঘুম চোখে বেড়িবাঁধের আঁকাবাঁকা সড়কে ট্রাক চালানোর সময় পথ হারিয়ে ফেলেন তিনি। একপর্যায়ে ট্রাকটি নামিয়ে দেন বেড়িবাঁধের পাশের খাদে। খাদের প্রায় ২০ ফুট নিচে নামার পর একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ট্রাকটি আটকে যায়। এতে ট্রাকের ইঞ্জিনসহ সামনের অংশ দুমড়েমুচড়ে যায়। ফলে মোজাম্মেল ও মিজানুর আটকা পড়েন। স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে খবর পেয়ে রূপনগর থানার পুলিশের একটি দল চালক মোজাম্মেলকে উদ্ধার করে। তবে ট্রাকের স্টিয়ারিং বেঁকে যাওয়ায় সহকারী মিজানুরের দুই পা চাপা পড়ে যায়।

উদ্ধারকাজে অংশ নেওয়া রূপনগর থানার উপপরিদর্শক সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ঘণ্টাখানেক চেষ্টার পরও মিজানুরকে ট্রাক থেকে বের করা যাচ্ছিল না। খবর পেয়ে ভোর সোয়া পাঁচটার দিকে ফায়ার সার্ভিসের উত্তরা স্টেশন থেকে উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে মিজানুরকে উদ্ধার করে। চালকের ঘুম চলে আসার কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দুর্ঘটনায় চালকের ডান পা এবং সহকারীর দুটি পা ভেঙে গেছে।

উত্তরা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. সফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগায় ট্রাকটি বিপজ্জনক অবস্থায় ছিল। যেকোনো সময় ট্রাক থেকে জ্বালানি তেল পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা ছিল। কিন্তু ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে অত্যাধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করে সহকারী মিজানুরকে ভোর পৌনে ছয়টার দিকে জীবিত উদ্ধার করেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁকে ঢাকা জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে পাঠানো হয়।

মো. সফিকুল ইসলাম আরও বলেন, উদ্ধারের পর চালক জানিয়েছেন, টানা অনেকক্ষণ ট্রাক চালানোর কারণে তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। এ কারণে ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়।

আহত দুজনকে ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ট্রাকচালক মোজাম্মেলের ভাই মো. মোফাচ্ছের প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ভাইয়ের কোমরের হাড়ে চিড় ধরেছে। ডান পা ও হাতে প্রচণ্ড আঘাত লেগেছে। সহকারী মিজানুরও দুই পায়ে আঘাত পেয়েছেন।