গ্রামবাসীর পারাপারে ভরসা সাঁকো

ধামরাইয়ের কাকরান গ্রামে বাঁশের সাঁকো। সম্প্রতি তোলা।  ছবি: প্রথম আলো
ধামরাইয়ের কাকরান গ্রামে বাঁশের সাঁকো। সম্প্রতি তোলা। ছবি: প্রথম আলো

ঢাকার ধামরাই উপজেলা সদর থেকে দুই কিলোমিটার দূরে কাকরান গ্রামের কয়েক হাজার বাসিন্দার যাতায়াতের ভরসা একটিমাত্র বাঁশের সাঁকো। কয়েক বছর ধরে গ্রামের বাসিন্দারা নিজেদের টাকায় ও স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে সাঁকোটি রক্ষণাবেক্ষণ করছেন।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, কাকরান বাজারের কয়েক শ ফুট দূরেই সাঁকোটি। এরপরই এক কিলোমিটার দীর্ঘ সরু কাঁচা রাস্তা। রাস্তার দুই পাশের চারটি পাড়া—হালুয়াবাড়ি, কামারবাড়ির টেক, টেঙ্গুরিয়া পাড়া ও রূপনগর। চারটি পাড়ার তিনটি সড়কসংলগ্ন। কামারবাড়ির টেক সড়ক থেকে একটু ভেতরে।

ওই গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, বংশী নদীর পাশে নিচু জায়গায় বছরের পাঁচ-ছয় মাস পানি জমে থাকে। প্রায় এক যুগ আগে তাঁদের গ্রামের চারটি পাড়ার লোকজনের চলাচলের জন্য সেখানে সরকারি অর্থায়নে একটি সরু কাঁচা রাস্তা নির্মাণ করে দেওয়া হয়। কয়েক বছর পর পানির তোড়ে সড়কের কিছু অংশ ভেঙে যায়। এরপর চলাচলের জন্য সড়কের ওই অংশে সাঁকো নির্মাণ করা হয়। গ্রামবাসী বলেন, সাঁকো দিয়ে শিশু-বয়স্কদের পারাপারে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। কোনো যানবাহন গ্রামে যেতে পারে না।

বর্ষাকালে চার মাস তাঁদের সাঁকো ব্যবহার করতে হয়। বছরের অন্য সময়ে পানি থাকে না। তখন হেঁটে চলাচল করা যায়। কয়েক বছর ধরে বর্ষার শুরুতেই তাঁরা নিজেরা চাঁদা তুলে ২০০ ফুট দীর্ঘ সরু বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে আসছিলেন। এ বছর উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাদ্দেস হোসেন সাঁকো নির্মাণের জন্য টাকা দিয়েছেন।

হালুয়াবাড়ির কৃষক বজলুর রহমান বলেন, ‘ভোটের সময় সব নেতাই সেতু নির্মাণের আশ্বাস দেন। কিন্তু ভোটের পর তাঁদের আর পাওয়া যায় না, সেতুও নির্মাণ করে দেন না।’ কামারবাড়ির টেকের জসিম উদ্দিন বলেন, তাঁদের পাড়ার লোকজন বছরে চার মাস প্রায় পানিবন্দী থাকেন। স্থানীয় ভাড়ারিয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য কামাল খান বলেন, সেতু আর প্রশস্ত সড়ক না থাকায় গ্রামটিতে কোনো রিকশা বা রিকশা–ভ্যান চলাচল করতে পারে না। এ কারণে উৎপাদিত পণ্যের পরিবহন আর রোগী নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার সময় চরম ভোগান্তির শিকার হয়ে থাকেন এখানকার বাসিন্দারা।

একই ওয়ার্ডের আরেক সাবেক সদস্য সোলায়মান বলেন, উপজেলা সদরের খুব কাছের এই জনপদ সবচেয়ে অবহেলিত। সারা বছর ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে কাবিখা, কাবিটা, টিআর ও অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান প্রকল্পে বরাদ্দ থেকে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। কিন্তু সরকারের এসব প্রকল্প থেকে সেতু নির্মাণে কোনো বরাদ্দ রাখা হয় না। তিনি যখন ইউপি সদস্য ছিলেন, তখন গ্রামের উন্নয়নে কী করেছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে সোলায়মান বলেন, সব উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হয় স্থানীয় সংসদ, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউপি চেয়ারম্যানদের ইচ্ছায়। তাতে ইউপি সদস্যদের কোনো হাত থাকে না।

জানতে চাইলে উপজেলা পরিষদের চেয়াম্যান মোহাদ্দেস হোসেন বলেন, একটি সেতুর অভাবে কাকরান গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ কয়েক বছর ধরে কষ্ট করছেন। তাঁদের দুর্ভোগ লাঘবে ওই গ্রামে একটি সেতু নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প পাঠানো হয়েছে।